অদ্ভুত শাস্ত্রার্থী, প্রবল তার্কিক, ওজস্বী বক্তা তথা উপদেশক পণ্ডিত বিহারীলাল জীর জন্ম ১৮৯০ সালে মুরাদাবাদ জেলার পাগওড়া গ্রামে ।
তাঁর পিতার নাম শ্রী পণ্ডিত অযোধ্যাপ্রসাদ। শাস্ত্রী জী ভারদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন । পণ্ডিত বিহারীলালজীর সংস্কৃত অধ্যয়ন প্রসিদ্ধ পণ্ডিত লোকনারায়ণ জী তথা তাঁর পুত্র পণ্ডিত কেদারলাল জীর সান্নিধ্যে সম্পন্ন হয় । এনাদের সামীপ্যে তিনি সমগ্র আর্ষ অনার্ষ সাহিত্যের বিধিবৎ অধ্যয়ন করেন । 'প্রথমা' পরীক্ষা সম্পন্নের পশ্চাৎ পণ্ডিত জী সম্ভল এর সংস্কৃত পাঠশালায় অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন । ১৭ বর্ষ আয়ুতে তিনি তাঁর অধ্যাপন কার্যের প্রারম্ভ করেন । প্রাথমিক পাঠশালা থেকে শুরু করে ইন্টার কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন পদে প্রায়ঃ ৪৫ বর্ষ পর্যন্ত অধ্যাপন কার্য করেন । পণ্ডিত বংশীধর পাঠক তথা পণ্ডিত শিবশর্মা জীর সান্নিধ্যে পণ্ডিত বিহারীলাল জী আর্যসমাজে প্রবিষ্ট হন এবং প্রচারক আদি গুরুত্বপূর্ণ কার্যে প্রভাব রাখেন । কিছুকাল তিনি মুরাদাবাদের ইস্লামিয়া স্কুলে পাঠদান কার্যে ছিলেন । তৎপশ্চাৎ রতনপুরে জৈন পাঠশালারও শিক্ষক হন । যখন শাস্ত্রার্থ মহারথী পণ্ডিত ভোজদত্ত শর্মা জী আগরায় আর্য জগতের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় বিদ্যালয় 'আর্য মুসাফির বিদ্যালয়' স্থাপনা করেন, তখন পণ্ডিত বিহারীলালজী উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধানাচার্য পদে নিযুক্ত হন । উক্ত বিদ্যালয়ে ৪ বর্ষ কার্যরত থাকেন । ১৯২০ সন থেকে ১৯২৪ সন অবধি বিজনৌর জেলার আর্য উপ-প্রতিনিধির সভায় প্রচার কার্যে থাকেন ।
কালান্তরে বরেলী এর সরস্বতী বিদ্যালয়ে অধ্যাপন কার্য করেন । পশ্চাৎ বদায়ু জেলার উঝানী কস্বে-তে ম্যূনীসিপল ইন্টার কলেজে সংস্কৃত বিভাগে প্রবক্তা পদে কার্যরত থাকেন । ১৯৫৬ সনে তিনি অবসর গ্রহণ করেন । পণ্ডিত বিহারীলাল শাস্ত্রী জী তাঁর জীবনকালে অবৈদিক বিভিন্ন মতাবলম্বীদের সাথে বিবিধ বিষয়ে প্রভাবপূর্ণ শাস্ত্রার্থ করেছেন এবং সকল শাস্ত্রার্থেই সদা বিজয়শ্রী প্রাপ্ত হয়েছেন । শাস্ত্রী জীর মুখ্য-মুখ্য শাস্ত্রার্থ হয় খ্রিষ্ট-মতাবলম্বীদের সাথে । পাদরি জ্বালাসিংহের সাথে শাস্ত্রার্থের প্রভাবে বিজনৌর জেলার দলিত বর্গের প্রচুর সংখ্যক মনুষ্য খ্রিষ্টানদের ফাঁদ থেকে বেঁচে যায় । অনেক শাস্ত্রার্থ যবন ( ইসলাম ) মতবাদীদের সাথেও করেছেন । ফলস্বরূপ শত-সহস্র মুসলিম ইসলাম মত ত্যাগ করে বৈদিক ধর্ম গ্রহণ করে ।
শাস্ত্রীজীর সাথে ধূর্ত পৌরাণিক মাধবাচার্যেরও বিবিধ বিষয়ে শাস্ত্রার্থ হয় । 'মূর্তিপূজা পার প্রামাণিক শাস্ত্রার্থ' শীর্ষক পুস্তকাকারেও এক শাস্ত্রার্থ বিবরণ প্রকাশিত হয় ।
মাধবাচার্য 'দয়ানন্দিয়ো কী লবড় ধৌ ধৌ' নামক পুস্তকে উক্ত শাস্ত্রার্থের মিথ্যা বিবরণ যুক্ত করে এবং শাস্ত্রীজীর উপর অনেক মিথ্যা এবং অনুচিত আক্ষেপ লিখে। শাস্ত্রীজী বদায়ুর ম্যাজিস্ট্রেটকে এই পুস্তকের লেখক, প্রকাশক তথা মুদ্রকের উপর মানহানির মামলা করে । তখন মাধবাচার্য ইতস্তত হয়ে শাস্ত্রীজীর কাছে লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা করে ।
তিনি তাঁর জীবনকালের অন্তিম বর্ষগুলো বরেলীতে অবস্থান করেন ।
১৯৮৬ সনের ৩রা জানুয়ারি পণ্ডিত জী দেহত্যাগ করেন ।
গ্রন্থরাজিঃ
1.ঋগ্বেদ কে দশম মণ্ডল কা রহস্য
2. যজুর্বেদ কা রহস্য
3. সাকার নিরাকার নির্ণয়
4. বেদবাণী (বেদ বিষয়ক নিবন্ধ সংগ্রহ)
5. পশুবলি ঔর বেদ
6. যোগিরাজ শ্রীকৃষ্ণ
7. ইসলাম কা স্বরূপ
8.চুনে হুএ ফূল
9. ধর্ম তুলা (১৯৭৬ সন)
10. চার শাস্ত্রার্থ
11.বৈদিক পতাকা
12. দম্ভ দমন ( ২০২১ বিক্রমাব্দ)
13. অঙ্গদ চরণ
14. মূর্তিপূজা পার প্রামাণিক শাস্ত্রার্থ
15. ক্যা মূর্তিপূজা বেদোক্ত হৈ ?
16. সত্যার্থপ্রকাশ কা মহত্ত্ব
17. শিব কা যথার্থ স্বরূপ তথা গোস্বামী তুলসীদাস
18. স্বামী দর্শনানন্দ জী কৃত বেদান্ত দর্শনের উর্দু ভাষ্যের হিন্দি অনুবাদ
19. চাণক্য নীতির ভাষানুবাদ
20. দৃষ্টান্তসাগর