পেঁয়াজ - রসুন~ শাস্ত্রালোকে সিদ্ধান্ত

 

পেঁয়াজ ও রসুন শাস্ত্রমতে ভক্ষ্য নাকি অভক্ষ্য এ নিয়ে দ্বিধা বিদ্যমান । সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী ভেদে অনেকেই নিজ নিজ গুরু বা আচার্যবাক্য দ্বারা অনুমোদিত প্রমাণের প্রয়াস করে থাকেন । এমতাবস্থায়  ৩ প্রকারের সিদ্ধান্ত দৃষ্টিগোচর হয় -



১। মদীয় আচার্য কিংবা গুরুদেব বলেছেন বাধা নেই তাই আহার করি ।
২। বেদে কোথাও নিষেধ নেই ।
৩। আয়ুর্বেদে উপযোগিতা বিদ্যমান ।

আমরা উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তসমূহের পর্যালোচনাপূর্বক যে সিদ্ধান্ত পাই -

১) ব্যক্তি বাক্য কোন প্রমাণ বা সিদ্ধান্ত নয় । প্রতিটি সম্প্রদায় বিশেষ নিজ গোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তির বাক্য প্রামাণ্য মানে । এমতাবস্থায় সাধারণ ব্যক্তিবাক্য প্রমাণ নয় ।

২) বেদে কোথাও বিরোধ নেই । তাই বলে তা অনুমোদিত এমন ভাবারও কারণ নেই । মনুস্মৃতি ২।১২ অনুযায়ী বেদানুকূল স্মৃতি ধর্মের প্রত্যক্ষ লক্ষণ । 

 




যদি বলা হয় বেদে বিরোধ নেই তাই পেঁয়াজ রসুন ভক্ষ্য তাহলে যুক্তি হলো বন্ধ্যার পুত্রের বিবাহবিধির ন্যায় যা আর্ষ ও বেদানুকূল বিধান বলে ঋষিগণ দিয়েছেন তা কেন অমান্য হবে ?  আর্ষ প্রয়োগ যদি অস্বীকার করা হয় তবে মন্বাদি স্মৃতি বা গৃহ্যসূত্র কিভাবে ব্যবহার হতে পারে ?  

৩) এই বিষয়ে নিবন্ধের শেষে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে ।

পেঁয়াজ ও রসুন নিয়ে মনুস্মৃতির শ্লোকটি ৫ম অধ্যায়ের ৫ম শ্লোক । মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ' সত্যার্থ প্রকাশ ' এর ১০ম সমুল্লাসে এই শ্লোকটির অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করে বিধান প্রদান করেছেন । অতএব তিনি যে শ্লোকটি মৌলিক হিসেবে মেনেছেন তা প্রমাণিত ও আর্যসমাজী মাত্রেই তা অবশ্য স্বীকার্য ।



এবার আমরা আর্যসমাজের মূর্ধন্যভাষ্যকারগণও যে এই শ্লোকটি মৌলিক বলে গ্রহণ করেছেন তা দেখবো -

  • ড. সুরেন্দ্রকুমারকৃত ' বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি '  -



  • পণ্ডিত তুলসীরাম স্বামী অনূদিত ' মনুস্মৃতিঃ' - 
 
 

  • মহামহোপাধ্যায় আর্যমুনিকৃত 'মানবার্যভাষ্য ' -


 

উল্লেখ্য তুলসীরাম স্বামী সামবেদ ভাষ্যকার ও মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্যমুনি মহর্ষির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঋগ্বেদের ৭-৯ম মণ্ডল ভাষ্য করেছেন যা কিনা আর্যসমাজী মাত্রেই অবশ্য স্বীকার্য । অতএব তাঁদের সিদ্ধান্ত হঠকারিতাবশতঃ অস্বীকার করা স্বাধ্যায়হীনতারই পরিচায়ক ।

মহর্ষির গ্রন্থসমূহের অনন্য প্রচারক , 'দয়ানন্দ সংস্থান " এর অধ্যক্ষ ও বিদ্বৎসভার অধ্যক্ষ আচার্য অঙ্কিত প্রভাকরও একে অভক্ষ্যরূপে স্বীয় প্রবচনে উল্লেখ করেছেন -

 
 

সর্বশেষে অবশিষ্ট আয়ুর্বেদীয় বিধান । সত্যার্থ প্রকাশের ১০ম সমুল্লাসে আয়ুর্বেদোক্ত ভক্ষ্যাভক্ষ্যতে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও বিকার উৎপাদনকারী খাদ্য অভক্ষ্য রূপে উল্লেখিত  । 




মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক এই প্রকরণ রোগীর জন্যই বলেছেন । 

 

 

অধিকন্তু বঙ্গীয় আর্য কুলতিলক আচার্য প্রিয়দর্শন সিদ্ধান্তভূষণ  ' ধর্মশাস্ত্রের অবিরুদ্ধ বৈদ্যকশাস্ত্রোক্ত পদার্থ ভক্ষ্য ' বলেছেন । 

অর্থাৎ যদি আয়ুর্বেদে থাকেও তবেও তা শাস্ত্র বিরোধী হলে গৃহীত হবে না । মাংসাহারীর বেলাতেও একই কথা কেননা চিকিৎসা শাস্ত্র সবার জন্য । এখানে অধিকারী ভেদে ব্যবস্থা । অর্থাৎ আর্য যে খাদ্যাদি গ্রহণ করবে ম্লেচ্ছ অনুসরণ করে তা হবে না । 


 

উপরে পণ্ডিতগণের সিদ্ধান্ত আমরা প্রদর্শন করেছি । আয়ুর্বেদে শুধু পেঁয়াজ-রসুন নয় বরং মাংসের বিধানও উল্লেখ পাওয়া যায় । তাই হলে কি মাংস বৈধ হবে ? অতএব পেঁয়াজ ও রসুন যে শাস্ত্রবিরুদ্ধ তা প্রমাণিত । 

অলমিতি ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.