ড. ব্রহ্মানন্দ শর্মা
সরলতা, সহজতা, সাহিত্য, অলংকার শাস্ত্রের বিশ্রুত বিদ্বান্ এবং বিদ্যাযুক্ত সৌম্য ব্যক্তিত্বের নাম ড. ব্রহ্মানন্দ শর্মা । তাঁর জন্ম ১৯২৩ সনের ১১ই ফেব্রুয়ারি শ্রীগঙ্গানগর থেকে সামান্য দূরে অবোহরের নিকট দুতারাম্বালী গ্রামে ।
তাঁর পিতার নাম পণ্ডিত লাধূরাম পারীক তথা মাতার নাম অমরীদেবী । আচার্য জীর শিক্ষার প্রারম্ভ হয় তাঁর জন্মগ্রাম দুতারাম্বালীতে । ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষা সম্পন্ন করেন জাট মিডিল স্কুল, সঙ্গরিয়া থেকে । এই বিদ্যালয়ের স্থাপনা স্বামী কেশবানন্দজী মহারাজ করেছিলেন । বেদবিহিত সদাচারময় জীবনের শিক্ষার জন্য এই বিদ্যালয় অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল । আচার্য জীর জীবনে সদাচার এবং সত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মানোর জন্য এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা বিশেষ স্থানে অবস্থান করছে । শ্রীগঙ্গানগরের রাজকীয় হাই-স্কুল থেকে তিনি মেট্রিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন । কলেজ শিক্ষা সম্পন্ন করেন ডূঙ্গর কলেজ, বীকানের থেকে । এই সময়কালে তাঁর বিদ্যাগুরু ছিলেন তৎকালীন সমগ্র ভারতের মূর্ধন্য বিদ্বান্ পণ্ডিত বিদ্যাধরজী । পণ্ডিত বিদ্যাধরজীর অনুপ্রেরণায় আচার্য জী ১৯৪৬ সনে এই কলেজ থেকে সংস্কৃত বিষয়ে এম. এ. পরীক্ষা সম্পন্ন করেন তথা এই কলেজেই তাঁর কর্ম জীবনের শুভারম্ভ হয় । ১৯৪৬ সনেই তিনি এই ডূঙ্গর কলেজে সংস্কৃত প্রাধ্যাপক পদ অধিষ্ঠিত হন ।
কর্মজীবনে আচার্য জী ভরতপুর, আলবর, আজমেরে তাঁর জ্ঞান এবং মার্গদর্শনের মাধ্যমে বিদ্যার্থীদের জীবনকে সমুন্নত করেছেন । এসব রাজ্যে তিনি অধ্যাপক এবং বিভাগাধ্যক্ষ পদে ছিলেন । তিনি অনেক বৈদুষ্য শিষ্য নির্মাণ করেছেন । সমগ্র রাজস্থানে এবং রাজস্থানের বাইরের প্রদেশ গুলোতেও আচার্য জীর গৌরবকে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রকাশিতকারী যোগ্য শিষ্যগণের পরম্পরা বিদ্যমান । আচার্য জীর নির্দেশে ড. ভবানীলাল জী ১৯৬৮ সনে আর্য সমাজের সংস্কৃত ভাষা এবং সাহিত্যে যোগদান বিষয়ে পিএইচডি করেন।
তিনি তাঁর অধ্যাপনকালে সাহিত্য শিক্ষার সাথে আর্যসমাজের মহত্ত্বপূর্ণ প্রচার-প্রসার কার্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
কিছুকাল তিনি জয়পুরের পারীক কলেজের প্রাচার্য ছিলেন । তৎপশ্চাৎ রাজস্থান প্রাচ্য বিদ্যা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশক পদে থাকেন । ১৯৭৮ সনে তিনি রাজকীয় সেবা থেকে অবসর প্রাপ্ত হন। তৎপশ্চাৎ বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশন দ্বারা শোধ প্রফেসর পদে জয়পুরের রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বর্ষ কার্য করেন ।
অধ্যাপন কার্যের সাথে তাঁর চিন্তন, শোধ কার্য, বিবিধ উচ্চকোটির সাহিত্যের কার্যও চলতে থাকে ।
গ্রন্থরাজিঃ
1. বেদার্থবিমর্শঃ
প্রসিদ্ধ অদ্বৈতী হরিহরানন্দ ( করপাত্রী ) লিখিত বেদার্থ-পারিজাত গ্রন্থের সটীক এবং সপ্রমাণ খণ্ডন । এই গ্রন্থ আচার্য জীর মহান পাণ্ডিত্য, তর্কশক্তি, শালীনতার প্রকাশকারী । মিথ্যাচার এবং অপশব্দে পূর্ণ বেদার্থ পারিজাত গ্রন্থের খণ্ডনে উক্ত গ্রন্থের প্রতি পঙ্ক্তিতে ড. ব্রহ্মানন্দজী 'আসাধু সাধুনা জয়েৎ' আর্যোচিত চরিত্রের প্রস্ফুট হয়েছে ।
2. সংস্কৃত সাহিত্য মে সাদৃশ্যমূলক অলংকারো কা বিকার
3. বস্ত্বলঙ্কারদর্শনম্ (১৯৬৯ সন )
4. অভিনব রসমীমাংসা (১৯৭৮ সন)
5. এ্যা ক্রিটিক্যাল স্টাডি অফ ইণ্ডিয়ান পোয়েটিক্স (১৯৭৮ সন )
6. কাব্য সত্যালোক ( ১৯৮০ সন )
7. তত্ত্বশতকম্ ( ১৯৮০ সন )
8. রসালোচনম্ (ইংরেজি অনুবাদ সহিত ) (১৯৮৫ সন)
9. জম্ভেশ্বর দর্শন (সংস্কৃত-হিন্দি ) (১৯৮৬ সন)
10. গঙ্গোদয় ( ১৯৮৭ সন )