
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর দৃষ্টিতে
❝ [মহাভারত যুদ্ধের পর...] ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিদ্যা হ্রাস পেল এবং অহংকার বৃদ্ধি পেল। 'ব্রহ্ম বাক্যং জনার্দ্দন। ব্রাহ্মণাস্তু ভূদেবাঃ।' এই ভাবের পাগলা বুদ্ধি জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মন পশুবৎ জড় হয়ে গেল।
এভাবে সুবিধাবাদীদের জাল রূপ বিচার-বিবেচনায় বেচারা সরল মানুষের দল জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ল। এরপর ব্রাহ্মণদের মধ্যে বশীভূত বুদ্ধি আসতে থাকল। তারা জনসাধারণের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে স্বীয় জীবিকা চালাতে লাগল। ব্রত, উপবাস, উদ্যাপন, প্রায়শ্চিত্ত, [মৃতকের] শ্রাদ্ধ ও মূর্তিপূজা প্রভৃতি মূর্খতাপূর্ণ চালের (প্রথা সমূহ) প্রচলন করল। মুহূর্ত বলার [ফলিত জ্যোতিষ] ধাঁধায় ফেলে মূর্খ মানুষকে নিজের অধীন করল এবং রাজকার-স্থান থেকে পতিত হলো।
অবিদ্বাংশ্চৈব বিদ্বাংশ্চ ব্রাহ্মণো দৈবতং মহৎ ।
প্রণীতশ্চাপ্রণীতশ্চ যথাঽগ্নির্দৈবতং মহৎ ॥
শ্মশানে হ্যপি তেজস্বী পাবকো নৈব দুষ্যতি ।
হবির্যজ্ঞেষু চ বিধিবদ্গৃহ এবাভিশোভতে ॥
[প্রথম শ্লোক প্রক্ষেপযুক্ত মনুস্মৃতি ৯।৩১৭; উভয় শ্লোক মহাভারত ১৩।১৫১।২১-২২]
প্রাচীন আর্ষগ্রন্থসমূহে প্রক্ষিপ্ত বাক্য সংযুক্ত করে এবং [উপর্যুক্ত] লিখিত শ্লোকের মতো নতুন শ্লোক রচনা করে ব্রাহ্মণরা নিজের অস্তিত্ব বৃদ্ধি করল।
এবং নিজপক্ষের পক্ষপাতী বিষয় সৃষ্টি করে [মন্বাদি স্মৃতি সমূহেও] যুক্ত করল। এর উদাহরণ মনুর [অর্থাৎ প্রক্ষেপযুক্ত মনুস্মৃতির] এই বাক্যে দেখুন-
এবং যদ্যপ্যনিষ্টেষু বৰ্ত্ততে সৰ্ব্বকর্মসু।
সর্ব্বথা ব্রাহ্মণাঃ পূজ্যাঃ পরমং দৈবতং হি তৎ ॥ [প্রক্ষেপযুক্ত মনুস্মৃতি ৯।৩১৯]
[ব্রাহ্মণগণ যদিও সকল কুৎসিত কর্মে প্রবৃত্ত হন, তথাপি তাঁরা পূজনীয় ; কারণ, তাঁরা পর দেবতা।]
এমন ব্রাহ্মণদের প্রতি যদি কেউ দ্বেষ রাখত, তাকে “ব্রাহ্মণ-দ্রোহী” বলে তার অস্থি-মজ্জা পর্যন্ত বের করে দিয়ে চরম দুর্দশায় ফেলা হত। ব্রাহ্মণরা কখনও শাস্তি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে নানা ধরনের দোষ ঢুকে পড়ল। আর পুণ্য (সদাচার) কমে যাওয়ায় অহংকার ও অত্যাচার বেড়ে গেল। সেই সঙ্গে সমতুল্য অজ্ঞানতাও ক্রমশ বাড়তে লাগল।❞
- ভগবৎপাদ শ্রীমৎ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
[দ্বাদশ প্রবচন, উপদেশমঞ্জরী]