বিধবাবন্ধু ~ আর্যসমাজ দ্বারা প্রকাশিত বিধবাবিবাহের একমাত্র সমর্থক পত্রিকা

 


বিধবাবন্ধু ~ আর্যসমাজ দ্বারা প্রকাশিত বিধবাবিবাহের একমাত্র সমর্থক পত্রিকা
 
বিধবাবন্ধু ১৯২৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। লাহোরের বিধবাবিবাহ সহায়ক সভা এবং স্যার গঙ্গারাম ট্রাস্ট সোসাইটির দ্বারা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর সিদ্ধান্ত অনুসারে এই পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। এটি ছিলো একটি মাসিক পত্র। ১৯২৬ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন পণ্ডিত দীনানাথ সিদ্ধান্তালঙ্কার। ১৯৩০ সালে মেহতা শান্তিস্বরূপ বিদ্যালঙ্কারের হাতে সম্পাদনার ভার অর্পিত হয়। পত্রিকার মুখ্য পৃষ্ঠায় মনুস্মৃতির [৩।৫৬] শ্লোক লেখা ছিলো -
যত্র নার্য়্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ॥
অর্থাৎ, যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়, সেই সমাজ দিব্য গুণ তথা দিব্য ভোগ (উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি) লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।
 
পত্রিকাটিতে নারীদের নানা সমস্যা, বিশেষভাবে বিধবাবিবাহের সমর্থনে লেখা হতো। প্রকাশিত হতো নারীদের নিয়ে নানা প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কাহিনী ও কবিতা। ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসের সংখ্যায় মোহন লাল মুহিয়ালের কাব্য প্রকাশিত হয়, নাম ছিলো 'ফরিয়াদে বেবা' অর্থাৎ 'বোবার অভিযোগ'। উর্দুতে প্রকাশিত মুসদ্দস ছন্দে লেখা কবিতার কিছু পংক্তি -
 
অজব দুখ দর্দ সহতী হূঁ গমোং মেং নীমজাং হোকর ।
টপকনে খূন কে আংসূ ইন আঙ্খোং সে রবাং হোকর ॥
সিধারে প্রাণপত ডেরা জমায়া পাস হসরত নে ।
বিসারী সুধ গুলিস্তাং কো উন্হোংনে বাগবাং হোকর ॥
 
অর্থাৎ, দুঃখে নিমজ্জিত হয়ে কী অদ্ভুত দুঃখই না সহ্য করছি। চোখ থেকে জীবন্ত হয়ে যেন টপ টপ করে রক্তের অশ্রু ঝড়ে পড়ছে। কতো আশাই না জমা হয়েছে এই বুকে । দেখো, কীভাবে বাগানের মালী ফুল পরিচর্যা করছে নিজেকে ভুলে গিয়ে। 
 
বিধবাবিবাহ প্রচলিত না হওয়ার ক্ষতি, মাদ্রাজ অঞ্চলে বিধবাবিবাহ হওয়ার পক্ষে উদ্ভূত সমস্যা প্রভৃতি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো৷ প্রাগুক্ত সর্বশেষ নিবন্ধটি পত্রিকার সম্পাদক পণ্ডিত দীনানাথ সিদ্ধান্তালঙ্কারের। পত্রিকাতে বিবাহযোগ্য বিধবার বিবরণ তথা দেশেরর নানা স্থানে অবস্থিত বিধবাশ্রমের বিবরণও নিয়মিতরূপে প্রকাশিত হতো। বলা বাহুল্য, উক্ত পদ্ধতিতে বহু অসহায় বাল্যবিধবাদের নতুন করে বিবাহ সংস্কার ও নবজীবনের প্রারম্ভ শুরু করতে পত্রিকাটি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলো। 

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.