যোগিরাজঃ শ্রীকৃষ্ণঃ
যো যোগিরাজঃ কিল কর্মযোগ-
মার্গস্য নেতৃত্বমলঞ্চকার ।
সদ্ধর্মসংরক্ষণদত্তচিত্তঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥১॥
জ্ঞানী সুবীরঃ শুভগায়কো যো
গুণাকরঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা ।
তথাপ্যহঙ্কারলবেন হীনঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥২॥
ভাবরূপ: যিনি জ্ঞানী, উত্তম বীর, গায়ক, গুণাকর ও নিত্য সনাতন ধর্মের রক্ষক হয়েও অহংকার শূন্য ছিলেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
পরোপকারার্পিতজীবিতো যঃ
কংসাদিদুষ্টারিগণস্য হন্তা ।
গীতামৃতং পায়য়িতা প্রশস্তং
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৩॥
ভাবরূপ: যিনি পরোপকারের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন, কংসাদি দুষ্ট শত্রুর হনন করলেন, প্রসিদ্ধ গীতামৃত মানুষকে পান করালেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
সন্ধ্যাগ্নিহোত্রাদিককৃত্যজাতং
সন্নিষ্ঠয়া যো বিদধেঽপ্রমত্তঃ ।
দেবেশভক্ত্যাধিগতপ্রসাদঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৪॥
ভাবরূপ: যিনি সন্ধ্যা, অগ্নিহোত্রাদি নিত্যকর্ম প্রমাদহীনভাবে করতেন, প্রভুভক্তিতে যার অদ্ভুত শক্তি প্রসাসরূপে লাভ হয়েছিলো - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
টীকা: যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের ভোর এবং সন্ধ্যায় সন্ধ্যা করা, যজ্ঞ করা, সূর্য নমস্কার করার কথা স্বয়ং মহাভারতেই লেখা আছে। মহাভারত ৫.৮২.৬-৯, ৫.৮৪.২০-২২, ১৩.৫২.৭ দ্রষ্টব্য।
আত্মাঽবিনাশী হ্যজরোঽমরোঽয়ং।
মৃত্যুস্তু বাসঃ পরিবর্ত এব৷
ইত্যাদিতত্ত্বং প্রদিশন্ যথার্থং
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৫॥
ভাবরূপ: এই আত্মা অমর, মৃত্যু বস্ত্র পরিবর্তনের মতো ; এই যথাযথ তত্ত্ব বক্তা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
টীকা: গীতা ২.২২ দ্রষ্টব্য ।
ভূত্বেহলোকে গুণসাগরোঽপি
যঃ পাদপূজাং বিদধে দ্বিজানাম্ ।
আসীৎ সুহৃদ্ যো ধনবর্জিতানাং
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৬॥
ভাবরূপ: গুণাকর হয়েও রাজসূয় যজ্ঞে যিনি ব্রাহ্মণ পদপ্রক্ষালণের কর্ম গ্রহণ করেছিলেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
টীকা: সভাপর্ব ৩৫.১০ দ্রষ্টব্য।
বিপ্রে সুশীলে বিনয়োপপন্নে
তথা শ্বপাকে শুনি গোগজেষু ।
সমানদৃষ্টিং য ইহাদিদেশ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৭॥
ভাবরূপ: যিনি বিনীত, সুশীল, বিপ্র, চণ্ডাল, কুকুর ও হাতিতেও সমদর্শনের উপদেশ দিয়েছেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
টীকা: গীতা ৫.১৮ দ্রষ্টব্য।
আসীৎ ক্ষমাবান্ ধৃতিমান্ নয়জ্ঞো
যো রাজনীতৌ কুশলোঽদ্বিতীয়ঃ ।
ত্রাতা সতাং পাপিদলস্য ছেত্তা
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৮॥
ভাবরূপ: যিনি ক্ষমাশীল, ধৈর্যবান, নীতিজ্ঞ, রাজনীতিতে অদ্বিতীয় কুশল ছিলেন , যিনি সাধুদের রক্ষক ও পাপীদের নাশক ছিলেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
ক্লৈব্যং প্রপন্নং যুধি পার্থ শূরং
বিসৃজ্য চাপং বিকলং স্থিতং তম্ ।
বিবোধ্য ধর্মং বিদধে সুবীরং
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৮॥
ভাবরূপ: যুদ্ধের প্রারম্ভে ক্লীবত্বভাব প্রাপ্ত হওয়া, ধনুকত্যাগী, ব্যাকুলচিত্ত অর্জুনকে ধর্মতত্ত্ব অনুধাবন করিয়ে পুনর্বার বীর তৈরি করেছেন যিনি - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
যোগস্য যজ্ঞস্য সুখস্য শান্তে-
স্ত্যাগস্য তত্ত্বং সুরসম্পদশ্চ ।
জ্ঞানস্য ভক্তেস্তপসো দিশন্ নঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥৯॥
ভাবরূপ: যোগ, যজ্ঞ, সুখ, শান্তি, ত্যাগ, দৈবী সম্পত্তি, জ্ঞান, ভক্তি, তপস্যার বাস্তবিক স্বরূপ বক্তা মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
জাতোঽমরো দিব্যগুণৈঃ স্বকীয়ৈ-
র্মতো জনৈর্যো ভগবানিবেহ ।
যজ্ঞান্বিতং জীবিতমাদধানঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥১০॥
ভাবরূপ: যিনি স্বীয় দিব্যগুণে অমর হয়েছেন, যাকে মানুষ ভগবান জ্ঞান করে এমন যজ্ঞময় জীবনধারক মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
যদীয়শিক্ষা প্রদদাতি মোদং
স্ফূর্তিং নবোৎসাহবলং সুধৈর্যম্ ।
শ্রদ্ধান্বিতানাং মনসাং স সম্রাট্
কৃষ্ণো মহাত্মা ন হি কেন বন্দ্যঃ ? ॥১১॥
ভাবরূপ: যাকে শিক্ষা প্রসন্নতা, নব উদ্যম, উৎসাহ ও ধৈর্য দান করে, শ্রদ্ধালুদের যিনি হৃদয় সম্রাট - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
যো ঘাতকায়াশিষ এব দত্বা
চকার শান্ত্যা পরলোকযাত্রাম্ ।
বভূব মুক্তঃ প্রভুতত্ত্ববেত্তা
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥১২॥
ভাবরূপ: যিনি ঘাতককেও আশীর্বাদ দিয়ে শান্তিতে পরলোক যাত্রা করেছিলেন, যিনি প্রভুতত্ত্ববেত্তা হয়ে মুক্ত হয়েছিলেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
সংস্থাপ্য সাম্রাজ্যমধর্মনাশং
কর্তুং তথা ধর্মবিবর্ধনায় ।
যেন প্রযত্নো বিহিতোঽভিনন্দ্যঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥১৩॥
ভাবরূপ: যিনি আর্যসাম্রাজের স্থাপনা করে ধর্মের বৃদ্ধি ও অধর্মের নাশের জন্য প্রশংসনীয় প্রযত্ন করেছেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
যো মোহনঃ স্বীয়গুণৈঃ প্রশস্তৈঃ
স্থিতো জনানাং হৃদয়েষু নিত্যম্ ।
নিষ্কামকর্মাণ্যকরোৎসদা যঃ
কৃষ্ণো মহাত্মা স ন কেন বন্দ্যঃ ? ॥১৪॥
ভাবরূপ: যে মোহন নিজের শ্রেষ্ঠ গুণের জন্য মানুষের হৃদয়ে সদা নিবাস করেন, যিনি সর্বদা নিষ্কাম কর্মই করেছেন - এমন মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ কার বন্দনীয় না ?
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর