১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে আর্যসমাজের অবদান

 


১৯৭১ সালের জুন মাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৩ লাখেরও বেশী। এসময় আর্যসমাজের দিল্লি সভা থেকে শ্রী ওম্ প্রকাশ ত্যাগী কলকাতায় আসেন শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। হাজার হাজার অনাথ শিশুরা শরণার্থী হিসেবে শিবিরে ছিলো। অনাথদের প্রতি অন্য মতাবলম্বী বিশেষত খ্রিস্টান মিশনারীদের তৎপরতাও ছিলো। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে শ্রী ত্যাগীর পরামর্শে আর্যসমাজ কলকাতায় রিলিফ সোসাইটি গঠন করা হয়। তাতে সভাসদ ছিলেন - 


প্রধান - শ্রী বারাণসী দাস অরোড়া [প্রধান, আর্যসমাজ কলকাতা] 

মন্ত্রী - শ্রী মোহনলাল আগরওয়াল [উপমন্ত্রী, আর্যপ্রতিনিধি সভা বাংলা ] 

সহমন্ত্রী - শ্রী সত্যানন্দ আর্য [কলকাতা কোষাধ্যক্ষ]

কোষাধ্যক্ষ - শ্রী সত্যনারায়ণ আগরওয়াল [হাওড়া]


এছাড়াও শ্রী গজানন্দ, শ্রী রাম জসওয়াল, শ্রী রুলিয়ারাম গুপ্ত, শ্রী ছবীলদাস সৈনী, শ্রী বটুকৃষ্ণ বর্মন, শ্রী পূর্ণচন্দ্রসহ অনেকে মিলে একটি উত্তম টীম গঠিত হলো। 


সার্বদেশিক সভা প্রায় ৩০০০ হাজার বস্ত্র সহায়তা হিসেবে দ্রুত প্রেরণ করে। আর্যসমাজ ও ভারত সেবাশ্রম সংঘ এখানে সম্মিলিত কাজ করেছিলো। সরকারীভাবে তো সাহায্য চলছিলোই পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের চাপও বাড়ছিলো । ভোরুকা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ১৩০০ কম্বলের ব্যবস্থা করে এবং শ্রী প্রভুদয়াল আগরওয়াল যিনি কিনা তৎকালীন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়াতে ছিলেন তিনি ব্যক্তিগত আগ্রহে সমগ্র কাজে যান্ত্রিক ও যানবাহনগত সহায়তা প্রদান করেন৷ একই কোম্পানির শ্রী ব্রহ্মানন্দ গোয়েল ব্যক্তিগতভাবে ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৬০টি কম্বল প্রদান করেন। 


মুক্তিযুদ্ধের সময় সব থেকে বেশী পীড়িত ধর্মীয় কারণে সনাতনীরাই হয়েছিলো। শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ার কারণে দ্বিতীয়ধাপে পণ্ডিত বাচস্পতি শাস্ত্রীকে পাঠানো হয় সরেজমিনে অবস্থা দেখতে । তিনি ব্রহ্মচারী চেতনানন্দের সহায়তায় ক্যাম্প গিয়ে স্থানীয় প্রতিটি পরিবারের খোঁজ নেন। কৃষ্ণনগরের নিকটে শিমুলতলা আমবাগানে ৫৮টি ক্যাম্পে ৩২৫টি শরণার্থী পরিবার ছিলো। রিলিফ সোসাইটির মন্ত্রী শ্রী মোহনলাল আগরওয়াল এখানে সাহায্যের উদ্বোধন শ্রী পণ্ডিত বাচস্পতি শাস্ত্রীর মাধ্যমেই করান । এই ক্যাম্পে ৩৫০টি কম্বল সব পরিবারে ও ১৫০টি গরমবস্ত্র শিশুদের দেওয়া হয় । 


সল্টলেকে ৫০০ চাদর ও ১৬০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। পূর্বোক্ত শ্রী প্রভুদয়াল স্বয়ং এই বিতরণ করেছিলেন । শরণার্থীদের মধ্যে যারা শিক্ষিত ছিলো তাদের জন্য আহার্যের পাশাপাশি পুস্তক বিরতণ ও এমনকি যজ্ঞোপবীত সংস্কারও হয়েছিলো যারা ইচ্ছুক ছিলো তাদের মধ্যে । পণ্ডিত বাচস্পতি শাস্ত্রী স্বয়ং এই সংস্কারের ঋত্বিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময় পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। 


কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্ 


সন্দর্ভঃ 

১। আর্যসমাজ কলকাতার শতবর্ষীয় ইতিহাস - প্রফেস উমাকান্ত উপাধ্যায়

২। আর্যসমাজের ইতিহাস - ড. সত্যকেতু বিদ্যালঙ্কার ও প্রফেসর হরিদত্ত বেদালঙ্কার



বাংলাদেশ অগ্নিবীর 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.