গোরক্ষা আন্দোলন ও মহর্ষি দয়ানন্দ রচিত পুস্তক ‘ গোকরুণানিধিঃ ’

 


💠 গোরক্ষা আন্দোলন ও মহর্ষির রচিত পুস্তক ‘ গোকরুণানিধিঃ ’ 
 
গবাদি পশুর রক্ষার বিচার নিয়ে মহর্ষি গোকরুণানিধিঃ নামক একটি লঘু পুস্তক রচনা করেন। এই পুস্তকে মহর্ষি গোরক্ষার মূল উপদেশসমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করেছেন। অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ এ বইটি গোরক্ষা আন্দোলনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে বিবেচিত হয় । কারণ গোরক্ষা কার্যক্রম বেগবান করতে কিংবা বিভিন্ন স্থানে গোরক্ষা আন্দোলন জাগিয়ে তুলতেও এই ছোট বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । যারা মহর্ষির প্রবচন শুনেননি তারা এই বইয়ের মাধ্যমেই মহর্ষির মহত্ত্বপূর্ণ বিচারধারা সম্পর্কে অবগত হয়ে গোরক্ষা আন্দোলনে সম্মিলিত হয়েছিলেন । সুতরাং আকারে ছোট হলেও গোকরুণানিধিঃ কে মহর্ষির এক অনন্য রচনা বলে গণ্য করা হয়। 
 
‘গোকরুণানিধিঃ’ তিনটি অধ্যায় বা অংশে বিভক্ত। যথা -
 
১.সমীক্ষা প্রকরণ
২. হিংসক রক্ষক সংবাদ
৩. গো-কৃষ্যাদি রক্ষিণী সভার নিয়ম উপনিয়ম।
 

  1. প্রথম সমীক্ষা প্রকরণে মহর্ষি পশুদের রক্ষা করার উপকারিতার বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন।
  2. দ্বিতীয় হিংসক রক্ষক সংবাদ অংশ এই পুস্তকের অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে মহর্ষি মাংসভোজী ও পশুহত্যাকারীদের বিভিন্ন যুক্তি খণ্ডন করেছেন।
  3. তৃতীয় অংশে গোরক্ষার জন্য স্থাপন হওয়া গো কৃষ্যাদি রক্ষিণী সভাসমূহের কার্যক্রম যেন সুচারুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য উক্ত সভার নিয়ম উপনিয়ম ইত্যাদি লিখেছেন।

 
আজকের আলোচনায় মহর্ষির মহত্ত্বপূর্ণ লিখার কিছু অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তা থেকে গোরক্ষা আন্দোলনের মহত্ত্ব প্রতিপাদনের চেষ্টা করব। কিন্তু আপাততঃ গোকরুণানিধিঃ র সামগ্রিক কোনো আলোচনা করবো না।
 
মহর্ষি গোকরুণানিধিঃ কে যেমন সুন্দর বাক্য বিন্যাসের দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন তেমনই এখানে দিয়েছেন অপূর্ব সব গাণিতিক যুক্তি। সাধারণ যুক্তি অনেকে এড়িয়ে যেতে পারেন কিন্তু মহর্ষি যে শৈলিতে লিখেছেন তা অস্বীকার করার মতো নয়। মহর্ষির এই যুক্তিসমূহ সমীক্ষা প্রকরণ অংশে লিখিত হয়েছে। সেখান থেকে গোরুর উপকার বিষয়ক অংশ উদ্ধৃত করছি-
 
“ যদি একটি গোরু ন্যূনকল্পে দুই সের দুগ্ধ দেয় এবং অন্য আর একটি গোরু বিশ সের দুগ্ধ দেয় তবে প্রত্যেক গোরু যে গড়ে এগারো সের দুগ্ধ দেয় সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। এই হিসাবে প্রতি গোরু এক মাসে সওয়া আট মন দুগ্ধ দিয়া থাকে। যদি একটি গোরু ন্যূনকল্পে ছয় মাস ও অন্য আর একটি গোরু ন্যূনকল্পে ১৮ মাস পর্যন্ত দুগ্ধ দেয়। তাহা হইলে প্রতি গোরুর গড়ে বারো মাস দুগ্ধ হয়। এই পরিমাণের দুগ্ধ জ্বাল দিয়া প্রতি সেরে এক ছটাক চাউল ও দেড় ছটাক চিনি দিয়া পরমান্ন প্রস্তুত করিয়া খাইলে প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে দুই সের দুগ্ধের পরমান্ন যথেষ্ট হয়। ইহাও গড় পরিমাণের হিসাব। কেহ দুই সের দুগ্ধের অধিক পরমান্ন খাইবে এবং কেহ কম খাইবে। এই হিসাবে একটি প্রসূতা গাভীর দুগ্ধে (১,৯৮০) এক হাজার নয় শত আশী ব্যক্তি একবার তৃপ্ত হইতে পারে। গাভী কম পক্ষে আট বার ও অধিক পক্ষে আঠারো বার সন্তান প্রসব করে। ইহার গড় পরিমাণে তেরো বার হয়। তাহা হইলে (২৫,৭৪০) পঁচিশ হাজার সাত শত চল্লিশ ব্যক্তি একটি গাভীর সারা জীবনের দুগ্ধে একবার তৃপ্ত হইতে পারে। এই গাভীর প্রথম বংশে যদি ছয়টি বকনা বাছুর ও সাতটি এঁড়ে বাছুর হয় এবং যদি রোগাদি হেতু একটির মৃত্যু হয় তবুও বারোটি বাছুর থাকিবে। উক্ত ছয়টি বকনা বাচ্চুর ভবিষ্যতে যে দুগ্ধ দিবে তাহাতে উক্ত প্রকারে (১,৫৪,৪৪০) এক লক্ষ, চুয়ান্ন হাজার, চারশত চল্লিশ ব্যক্তির পোষণ হইতে পারে, বাকি রইলো ছয়টি এঁড়ে বাছুর। তাহাদের মধ্যে প্রতি জোড়ায় দুইটি করিয়া এঁড়ে হইলে প্রতি বৎসর (কৃষিকার্যে ব্যাবহৃত হয়ে) (২০০) দুই শত মণ চাউল উৎপন্ন করিতে পারে। এই ভাবে তিন জোড়া এঁড়ে (৬০০) ছয় শত মণ চাউল উৎপন্ন করিতে পারে। ইহাদের জীবনের উপযোগী অংশ মধ্য ভাগের আট বৎসর। এই হিসাবে এক জন্মে তিন জোড়া এঁড়ে গোরুতে (৪৮০০) মণ চাউলে (২,৫৬,০০০) দুই লক্ষ, ছাপান্ন হাজার মনুষ্য একবার ভাত খাইতে পারে। দুগ্ধ ও অন্ন এক সঙ্গে যোগ করিয়া দেখিলে নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে (৪,১০,৪৪০) চার লক্ষ, দশ হাজার, চারশত চল্লিশ ব্যক্তির একবারের ভোজন ও পোষণ একটি গাভীর দ্বারা সম্ভব হইতে পারে। এখন ছয়টি গাভীর বংশ পরম্পরার হিসাব কষিলে দেখা যাইবে যে ইহাদের দ্বারা অসংখ্য মানুষের ভরণ পোষণ হইতে পারে। কিন্তু ইহার মাংস দ্বারা কেবল আশী জন মাংসাহারী একবার তৃপ্ত হইতে পারে। দেখিতে হইবে সামান্য লাভের জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে বধ করিয়া অসংখ্য মনু্ষ্যের ক্ষতি করা মহাপাপ কিনা। ”
 
🔥 প্রশ্ন- মহর্ষি দয়ানন্দ সকল প্রাণীকে রক্ষার কথাই বলেছেন কিন্তু গোরুর বিষয়ে এতো বেশি মনোযোগ কেন ?
 
উত্তর - হ্যাঁ। মহর্ষি সকল প্রাণীর রক্ষার কথা বলেছেন কিন্তু তিনি গোকরুণানিধিতে গোরুকেই সর্বাপেক্ষা সুখদায়ী প্রাণী বলে উল্লেখ করেছেন। 
 
“ যদিও গরুর দুগ্ধ অপেক্ষা মহিষের দুগ্ধের পরিমাণ কিছু বেশী হয় এবং মহিষ অপেক্ষা বলদ কিছু কম উপকার করে তথাপি গরুর দুগ্ধ ও বলদ হইতে মনুষ্য যতটা সুখ লাভ করে মহিষের দুগ্ধে ও মহিষ হইতে ততটা হয় না। কেননা, আরোগ্যকর ও বুদ্ধি বর্দ্ধকাদি গুণ গরুর দুগ্ধে ও বলদে যতটা আছে ততটা মহিষের দুগ্ধে ও মহিষাদিতে থাকিতে পারে না। এই জন্য আর্য্যগণ গরুকেই সর্বোত্তম পশু বলিয়া মানিয়াছেন। উষ্ট্রের দুগ্ধ গরুর ও মহিষের দুগ্ধের অপেক্ষাও পরিমাণে বেশী হয় তবুও ইহার দুগ্ধ গরুর দুগ্ধের ন্যায় নহে। ”
 
এটা মহর্ষির পক্ষপাত নয় । দেখুন লালন পালন, পোষ মানা, শান্ত স্বভাব, প্রভুর উপকার করা সবদিক থেকে অন্যসব গবাদি পশুর চেয়ে গোরুই এগিয়ে সুতরাং আর্য মান্যতা অনুসারে মহর্ষি গোরুকেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে অভিহিত করেছেন । তাই বলে মহিষাদির পালন পোষণ হবে না তা বলেননি। 
 গোকরুণানিধিঃ তে মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর দ্বারা হওয়া উপকারের কথাও মহর্ষি লিখেছেন। তাছাড়া গোরক্ষা আন্দোলনের বিভিন্ন প্রসঙ্গে মহিষাদি পশুদের রক্ষার উল্লেখও রয়েছে । 
 
প্রথম পর্বে লিখেছিলাম ইংরেজরা অবাধে গবাদি পশু হত্যার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে কসাইখানার ব্যাবস্থা করেছিল যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গোরু তথা গবাদি পশুকে হত্যা করা হতো। এছাড়াও ইংরেজ শাসনামলে দরিদ্র কৃষকের উপর অমানবিক নির্যাতনের কথা কে না জানেন? ইংরেজদের এসব মানবতা বিবর্জিত কুকৃত্যের নিন্দা করে করে মহর্ষি লিখেছেন-
 
“ যদি কোন মনুষ্য ভোজনার্থে উপস্থিত হয় এবং তাহার সম্মুখ হইতে ভোজ্যবস্তু অপসারিত করা হয় ও তাহাকে সেখান হইতে দূর করিয়া দেওয়া হয় তবে কি সে সুখী হইবে? এইভাবে আজকাল গবাদি পশু সরকারী জঙ্গলে গিয়া তাহার ভোজ্য পদার্থ তৃণ পত্রাদি বিনা শুল্কে ভোজন করিলে বা ভোজন করিতে গেলে সেই হতভাগ্য পশুর ও তাহার প্রভুর দুর্দ্দশা ঘটে। জঙ্গলে আগুণ লাগিয়া গেলে কোন চিন্তা নাই কিন্তু ঐ সব পশু যেন সেখানে তৃণাদি ভক্ষণ করিতে না পারে। ”
 
“শ্রীমতী রাজরাজেশ্বরা শ্রীভিক্টোরিয়া মহারাণীর ঘোষণা বাণীও সর্বজনবিদিত যে এইসব মূক পশুকে যে যে দুঃখ দেওয়া হয় তাহা আর দেওয়া হইবে না। আচ্ছা, হত্যা করা অপেক্ষা কি আর অধিক দুঃখ আছে?”
 
🔥 গবাদি পশু এবং কৃষকদের রক্ষাহেতু; ইংরেজ সরকারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন,
 
“ মনোযোগ দিয়া শুনুন, নিজের যেমন সুখ দুঃখ হয়, অন্যেরও ঠিক সেইরূপই হয় এইরূপ বুঝিতে থাকুন। ইহাও মনে রাখিবেন, পশু, তাহাদের প্রভু, কৃষকদের পশু ও প্রজাগণের অত্যধিক পুরুষার্থ বলেই রাজার ঐশ্বর্য্য অধিক বৃদ্ধি হয় এবং তাহাদের হ্রাস পাইলেই রাজার ঐশ্বর্য্য বিনাশ প্রাপ্ত হয়। প্রজার যথাযথ রূপে রক্ষার জন্যই রাজা তাহার নিকট হইতে কর গ্রহণ করেন । রাজা ও প্রজার সুখের মূল কারণ গবাদি পশুর বিনাশ করা হউক এজন্য নহে। অতএব আজ পর্যন্ত যাহা হইবার তাহা হইয়াছে। ভবিষ্যতে চক্ষু মেলিয়া সকলের ক্ষতিকর কার্য্য করিবেন না এবং অন্যকেও করিতে দিবেন না। হ্যাঁ, আমাদের কর্তব্য, আপনাদের ভালমন্দ সব কাৰ্য্য সম্বন্ধে সচেতন করা এবং আপনাদের কর্তব্য পক্ষপাতিত্ব পরিত্যাগ করিয়া সকলের রক্ষা ও উন্নতির জন্য তৎপর থাকা, সর্বশক্তিমান জগদীশ্বর আমাদের ও আপনাদের উপর সম্পূর্ণরূপে কৃপা করুন যেন আমরা ও আপনারা বিশ্বের হানিকর কর্ম পরিত্যাগ করিয়া সকলে আনন্দে থাকি। এই সব কথা শুনিয়া ভুলিবেন না। মনে রাখিবেন এই সব অনাথ পশুদের প্রাণকে শীঘ্রই বাঁচাইতে হইবে। ”
 
🔥 এরপর জনসাধারণ এবং সমাজের সজ্জন ব্যক্তিবর্গকে আহ্বান করে মহর্ষি লিখেছেন,
 
“ হে ধর্মপরায়ণ সজ্জনবৃন্দ! আপনারা তনু, মন ও ধন দ্বারা এই সব পশুকে কেন রক্ষা করিতেছেন না? হায়! বড়ই দুঃখের বিষয় যখন হিংসকেরা গরু ও ছাগাদি পশুকে এবং ময়ুরাদি পক্ষীকে হত্যা করার জন্য লইয়া যায় তখন তাহারা আমাদের ও আপনাদের দিকে তাকাইয়া রাজা ও প্রজা সকলের প্রতি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে।..”
“ বন্ধুগণ! শ্রবণ করো, তোমাদের তনু, মন ও ধন যদি গবাদি পশুর রক্ষার্থে নিয়োজিত না হয় তবে তাহার সার্থকতা কোথায়? পরমাত্মার স্বভাবের প্রতি দৃষ্টিপাত করো। তিনি অখিল বিশ্ব ও সমগ্র পদার্থ পরোপকারের জন্য রচনা করিয়াছেন। সেইরূপ তোমাদের তনু, মন ও ধন পরোপকারার্থে অর্পণ করো। ”
🔥 পরম উপকারী গবাদি পশুর হত্যাকারীদের বিবেকবর্জিত কর্মের তিরস্কার করে মহর্ষি লিখেছেন-
 
“ দেখুন, পশু অসার তৃণ, লতা, পাতা, ফল, ফুলাদি ভক্ষণ করে কিন্তু সার দুগ্ধাদি অমৃতরূপী রত্ন দান করে। লাঙ্গল চালাইয়া ও গাড়ী বহন করিয়া বহুবিধ খাদ্য পদার্থ উৎপন্ন করে এবং সে সকলের বুদ্ধি বল, পরাক্রম বৃদ্ধি করিয়া আরোগ্য দান করে। সে পুত্র, কন্যা মিত্রগণের ন্যায় মানুষের সহিত বিশ্বাস ও প্রেমপূর্ণ ব্যবহার করে। তাহাকে যেখানে বাঁধ সে সেখানেই বাঁধা থাকিবে যেদিকে চালাও সেদিকেই চলিবে, যেখানে হইতে সরাইবে সেখান হইতেই সরিয়া যাইবে, দেখিলে বা ডাকিলে নিকটে চলিয়া আসে। যখন সে ব্যাঘ্রাদি পশু বা ঘাতককে দেখে, আত্মরক্ষার জন্য সে নিজের প্রতিপালকের নিকট দৌড়াইয়া আসে, কেন না সে তাহার রক্ষা করিবে। যাহার মৃত্যুর পর চর্মও কন্টকাদি হইতে রক্ষা করে, জঙ্গলে চরিয়া নিজের বৎস ও প্রভুকে দুগ্ধ দানের জন্য যথাস্থানে যথাসময়ে চলিয়া আসে, নিজের প্রভুর রক্ষার জন্য শরীর ও মন লাগাইয়া দেয়, যাহার যথা সর্বস্ব রাজা প্রজা সকল মনুষ্যের জন্যই অর্পিত, এইরূপ শুভগুণযুক্ত, সুখকারী পশুর গলায় ছুরি দিয়া যাহারা নিজের উদর পুরণ করে ও সংসারের ক্ষতি করে, সংসারে তাহাদের অপেক্ষা অধিক বিশ্বাসঘাতক, অপকারী, দুঃখদায়ী ও পাপী আর কে আছে?”
 
🔥 গবাদি পশু রক্ষার গুরুত্ব ও মহর্ষির মত
 
“ গবাদি পশু ও কৃষ্যাদি কর্মের রক্ষা ও বৃদ্ধির ফলে মনুষ্যাদি প্রাণী সর্ব প্রকারের সুখ লাভ করিতে পারে। ইহা ছাড়া উক্ত সুখ মনুষ্য কখনও প্রাপ্ত হইতে পারে না। ”
“ দুগ্ধ ও অন্ন এক সঙ্গে যোগ করিয়া দেখিলে নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে (৪,১০,৪৪০) চার লক্ষ দশ হাজার চার শত চল্লিশ ব্যক্তির একবারের ভোজন ও পোষণ একটি গাভীর দ্বারা সম্ভব হইতে পারে। এখন ছয়টি গাভীর বংশ পরম্পরার হিসাব করিলে দেখা যাইবে যে ইহাদের দ্বারা অসংখ্য মানুষের ভরণ পোষণ হইতে পারে। কিন্তু ইহার মাংস দ্বারা কেবল আশী জন মাংসাহারী একবার তৃপ্ত হইতে পারে। দেখিতে হইবে সামান্য লাভের জন্য লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে বধ করিয়া অসংখ্য মনুষ্যের ক্ষতি করা মহাপাপ কিনা। ”
“ প্রমাণিত হইল যে গবাদি পশুর বিনাশ হইলে রাজা এবং প্রজার ও বিনাশ হয়। কারণ, পশুর সংখ্যা হ্রাস পাইলে দুগ্ধাদি পদার্থ এবং কৃষি কার্য্যাদিও হ্রাস প্রাপ্ত হয়। দেখো এই জন্যই যে মূল্যে যে পরিমাণ দুগ্ধ ঘৃতাদি পদার্থ ও বৃষাদি পশু সাতশত বৎসর পূর্বে পাওয়া যাইত সেই পরিমাণে দুগ্ধ ঘৃতাদি পদার্থ ও বৃষাদি পশু আজ কাল দশ গুণ মূল্যেও পাওয়া যায় না। কারণ গত ৭০০ সাত শত বৎসরের মধ্যে এই দেশে গবাদি পশুর হন্তা মাংসাহারী বিদেশী বহু সংখ্যায় আসিয়া বাস করিয়াছে। তাহারা ঐ সব সর্বহিতকারী পশুর হাড় মাংস পর্যন্তও ছাড়ে না। “নষ্টে মূলে নৈব পত্ৰং ন পুষ্পম্” কারণের নাশ করিয়া দিলে কার্যের নাশ কেন হইবে না।”
“ কোন ব্যক্তি যদি হরিণ ও সিংহাদি পশু এবং ময়ূরাদি পক্ষী হইতেও উপকার লইতে ইচ্ছা করে তবে সে লইতে পারে। কিন্তু সকলের পালন পোষণ উত্তরোত্তর সময়ানুকূল হওয়া চাই। অধুনা পরম উপকারী গবাদি পশুকে রক্ষা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।”
 
🔥 গোকরুণানিধিঃ -র ইংরেজি অনুবাদ করে ইংল্যান্ডে পাঠানোর উদ্যোগ- 
 
“ মহর্ষি গোরক্ষা আন্দোলনের সফলতার জন্য উক্ত পুস্তককে ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে ইংল্যান্ডে রাজ্যাধিকারীদের কাছে প্রেরণ করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য লালা মূলরাজ এম০ এ০ নামক একজন ব্যক্তিকে ইংরেজি অনুবাদের দায়িত্ব দেন। লালা মূলরাজ অনুবাদ করার কথাও দিয়েছিলো। কিন্তু একবছরের অধিক সময় (১৫ মাস) নিয়েও মহর্ষির বার বার পত্রব্যবহার সত্ত্বেও অনুবাদ করে দেয় নি । কারণ সে মহর্ষির দৃষ্টির আড়ালে মাংসভোজী ছিল । গোকরুণানিধিঃ পুস্তকে তার মাংসভক্ষণের প্রতিকূল মত থাকা কারণে এই বইটি অনুবাদ না করে বৃথা কালক্ষেপন করেছে। তার কাছ থেকে নিরাশ হয়ে; বোম্বাইয়ের কোনো এক ব্যক্তির দ্বারা মহর্ষি গোকরুণানিধিঃর ইংরেজি অনুবাদ করান। কিন্তু মহর্ষির দ্বারা করানো এই অনুবাদ সেসময় প্রকাশিত হয়েছিলো কি না সে-সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। ”
[ - মহর্ষি দয়ানন্দ কে গ্রন্থো কা ইতিহাস । পৃষ্টা- ১৩৮। সংস্করণ- ১৯৪৯ সন্।]
-
অনুবাদ কার্যে দেরী হওয়া, মহর্ষির বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ততা আর অকালে দেহ ত্যাগের কারণে মহর্ষির দ্বারা করানো ইংরেজি অনুবাদটির প্রকাশ করা বা ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়নি। 
 
  • 🔥 গোকরুণানিধিঃ পুস্তকের প্রচারকার্যে সাফল্য-
 
“ পণ্ডিত ভীমসেনের মহর্ষির নামে লিখিত পত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে 'গোকরুণানিধিঃ' পুস্তকের প্রথম সংস্করণের সব কপি খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এবং এক বছরের মধ্যেই এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে মহর্ষির দ্বারা শুরু হওয়া গোরক্ষা আন্দোলনের কারণেই পুস্তকের বিক্রি এতো বেড়েছিলো। ”
 
[- মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত শ্রী যুধিষ্ঠির জী মীমাংসক কৃত মহর্ষি দয়ানন্দ কে গ্রন্থো কা ইতিহাস । পৃষ্টা- ১৩৫ । সংস্করণ- ১৯৪৯ সন্।]

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.