হিন্দুধর্ম নিয়ে পাদ্রীকে মোক্ষম জবাব দিলেন মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী

 

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীজী'র জীবদ্দশায় নানা শাস্ত্রার্থ ও প্রশ্নের সম্মুখীন তাঁকে হতে হয়েছে । এমনই এক সময় ১৮৭৭ সালের দিকে পাদ্রী ও কমিশনার এইচ. পরিকিংসের সাথে তাঁর নিম্নলিখিত আলোচনা হয় ।


পাদ্রী এইচ. পরিকিংস সাহেব, কমিশনার অমৃতসর— ‘হিন্দু ধর্ম সুতার তন্তুর মতো দুর্বল কেন?’ 

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী স্বামীজী — ‘ এই ধর্ম সুতার তন্তুর মতো দুর্বল নয়, বরং লোহার থেকেও দৃঢ় । লোহা ভেঙ্গে গেলে তো ভেঙ্গেই যাবে কিন্তু এটি কখনো ভাঙ্গার মতো অবস্থায় আসবে না।’ 

পাদ্রী মহোদয়— ‘আপনি কোনো উদাহরণ দিন তবেই আমার বিশ্বাস হবে।’ 

স্বামীজী— ‘হিন্দু ধর্ম সমুদ্রের গুণ ধারণ করে; যেরূপ সমূদ্রে অসংখ্য ঢেউ উঠে থাকে সেরূপ এই ধর্মতেও দেখুন। 

(১) এমন লোকেদেরও একটি মত আছে, যারা জল শোধন করে পান করে যাতে জলের মাধ্যমে কোনো অণুজীব তাঁদের পেটে না যেতে পারে । 

(২) একটি মত এমন লোকেদেরও আছে, যারা দুগ্ধাহারী অর্থাৎ কেবল দুধ পান করে; অন্য কোনো দ্রব্য গ্রহণ করে না । 

(৩)সেই সাথে একটি মত এমন লোকেদেরও আছে, যাদেরকে বামমার্গী বলা হয়। তাঁরা যা কিছু পায় সেটা পবিত্র-অপবিত্র, যোগ্য-অযোগ্যের বিচার করা ছাড়াই খেয়ে নেয় । 

(৪) একটি মত এমন লোকেদেরও আছে, যারা জীবনভর যতি থাকেন অর্থাৎ না তো কোনো মহিলাকে বিবাহ করেন আর না কারোর উপর কুদৃষ্টি দেন । 

(৫) একটি মত এমন লোকেদেরও আছে, যারা পরস্ত্রী আসক্ত হয়ে সম্মান নষ্ট করে । 

(৬) একটি মত এমন লোকেদেরও আছে, যারা কেবল নিরাকার পরমাত্মারই পূজা করে; তাঁর ধ্যান করে। 

 (৭) আবার একটি মত এমন লোকেদেরও আছে, যারা অবতারদের পুজা করে । 

(৮) একটি মত এমন আছে যে যারা কেবল জ্ঞানী । 

(৯) একটি মত এমন আছে, যারা কেবল ধ্যানী ।

(১০) এই ধর্মে সেই লোকেরাও আছে, যারা অস্পৃশ্যতা নিয়ে এমন বিচার করে যে অন্য মতের লোক তো একদিকে, শূদ্রদের হাতের জলও খায় না, আর না খাবার খায় । 

(১১) একটি মত সেই লোকেদেরও আছে, যারা শূদ্রদের হাতে জল পান করে এবং এদের সাথে খাবার তৈরি করে খায়। এতো কিছু হওয়ার পরেও তাঁদের সবাইকে হিন্দু বলা হয় এবং বাস্তবেও হিন্দুই। কেউ এদেরকে হিন্দু ধর্ম থেকে সরাতে পারবে না । এজন্য বুঝা উচিৎ যে, এই ধর্ম অত্যন্ত পরিপক্ব, অপক্ব নয়। 

পিরিকিংস সাহেব— ‘আপনি কোন প্রকার মত বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন?’ 

 স্বামীজী—

 ‘আমি কেবল এটা চাই যে, সকল লোক পবিত্র বেদের আজ্ঞা পালন করবে এবং কেবল নিরাকার, অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের পূজা এবং উপাসনা করবে । শুভ গুণ আদিকে গ্রহণ করবে এবং অশুভ গুণ আদিকে ত্যাগ করে দিবে । 

 

 (‘আর্যদর্পণ’ খণ্ড ৩, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা ২৬,২৭ উদ্ধৃত)

 



 

সূত্রঃ পণ্ডিত লেখরাম কৃত জীবনী , পৃষ্ঠা ৩৩৯-৪০

 অর্থাৎ সনাতন ধর্মেও কালক্রমে ভালো-মন্দ অনেক কিছুরই অনুপ্রবেশ ও মিশ্রণ ঘটেছে । তাই বলে কেউ সনাতনের বাইরে নয় , বরং সনাতন শুদ্ধতার পথে অগ্রসর হতে শেখায় । মহর্ষিও তাই সনাতন ধর্মে মতের বিভিন্নতার বর্ণনা করেও পরিশেষে "যত মত তত পথ " না বরং বেদের সিদ্ধান্তই সমর্থন করেছেন । অবিশ্বাসী বলে প্রাণনাশ করা সনাতন পরম্পরার অংশ নয় । মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী "হিন্দু" শব্দটি অর্বাচীন ও বিদেশী প্রভাবিত বলে ব্যবহার করতেন না, কিন্তু এখানে পাদ্রীর প্রশ্নের সমুচিত জবাবে তাঁর বোধগম্যতার জন্য সেই শব্দ ব্যবহার করেই উত্তর দিয়েছেন ।  

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.