নোয়াখালী-কোলকাতা দাঙ্গায় আর্যসমাজের ভূমিকা

 


১০ই অক্টোবর, ১৯৪৬ সালে অখন্ড বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালীর ৮০% মুসলিম বহুল অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হয়। হিন্দু ঘরবাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। হাজারো হিন্দুদের হত্যা করা হয়। হিন্দু নারীদের সতিত্ব হরণ করা হয়। বহুজনের জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ করে মুসলিম বানানো হয়। হিন্দুরা তৎকালীন বাংলার রাজধানী কোলকাতায় পালিয়ে যেতে থাকে।  
মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী যেয়ে হিন্দুদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করলেও মুসলমানেরা তার সিদ্ধান্তকে পুনরায় ভুল প্রমাণিত করে। আশ্রয়হীন সেই হিন্দুদের উপর কোলকাতার অলিগলিতে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দীর মুসলিম গুন্ডারা যাতে আক্রমণ না করে, তাদের সুরক্ষার জন্য বড়সড় সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। আর্যসমাজ সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভার নেতৃত্বে কোলকাতাকে কেন্দ্র করে দিনরাত ২৪ ঘন্টা তাদের সেবা কার্য শুরু করা হয়। বাংলার পূর্বাঞ্চলে সর্বমোট সাতটি কেন্দ্র বানানো হয়েছিল। কেন্দ্রের মাধ্যমে আর্যসমাজ দ্বারা সংগৃহীত আনুমানিক এক লক্ষ টাকা, ২০০০ মন চাল ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়৷ আহতদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে মানসিক শান্তনা প্রদানের সর্বোচ্চ সম্ভব চেষ্টা চালানো হয়। উল্লেখ্য যে, যে সময় মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী পরিদর্শনে যান, তখন তার সাথে সুচেতা কৃপলানীও ছিলেন। মুসলমান দাঙ্গাবাজেরা গান্ধীর দৃষ্টির অগোচরে সুচেতা কৃপলানীকে অপহরণ করে সমগ্র দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিল। আর্য সমাজের নেতা ওমপ্রকাশ ত্যাগী জী এখবর জানতে পারেন। গান্ধী ও সুচেতার অবস্থানরত আশ্রমে যখনই মুসলিম দাঙ্গাকারীরা দল বেধে হামলা করতে পৌছায়, তখনই ত্যাগী জী আর্যবীরদের সাথে তাদের রক্ষার্থে পৌছে যান। সুচেতা জী আর্যসমাজের প্রতি এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
 
(তথ্যসূত্র: আর্যসমাজ কোলকাতা কা ইতিহাস- উপাকান্ত উপাধ্যায়)
 
আর্যসমাজ কোলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে অবস্থিত শিব মন্দিরেরও রক্ষা করে মুসলমান গুন্ডাদের হামলা থেকে। এভাবেই মাসব্যাপী সহায়তাকেন্দ্র পরিচালনা করে আর্যসমাজ নিজেদের হিন্দু সমাজের রক্ষক ও প্রহরী হিসেবে প্রমাণ দেয়। ১৯৪৭ সালে সোহরাওয়ার্দীর গুণ্ডাদের থেকে হিন্দুদের রক্ষা করা, তাদের হিন্দুবহুল সুরক্ষিত এলাকায় পৌছে দেয়ার কাজ আর্যসমাজের সদস্যদের দ্বারা যুদ্ধস্তরে করা হয়েছিল। 
 
প্রথমে নোয়াখালীর দাঙ্গা ও পরবর্তীতে কোলকাতার গণহত্যা আজ হিন্দুদের ধর্মরক্ষার্থে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।
 
 

 
চিত্র-১: আর্যসমাজের সহায়তাকেন্দ্র
 
 

 
চিত্র-২: জাকারিয়া স্ট্রিটে অবস্থিত শিব মন্দির যা আর্যবীরগণ রক্ষা করেছিল

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.