

মুক্তিলাভের কিছু প্রায়োগিক ধাপ নিম্নরূপ -
১। সত্যাচরণ,
৩। জ্ঞানী মহাপুরুষদের সান্নিধ্য লাভ করা ।
৪। যোগাভ্যাস এর মাধ্যমে মন, ইন্দ্রিয় ও আত্মাকে অসত্য থেকে সরিয়ে সত্যে স্থাপিত করা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করা।
৫। ঈশ্বরের কৃপা তথা গুণের মাহাত্ম্য শোনা, বর্ণনা করা অর্থাৎ স্তুতি করা।
৬। প্রার্থনা এইরূপ হবে -
❝ হে জগদীশ্বর! হে কৃপানিধে! হে অস্মৎপিতঃ ! আমাদের অসত্য থেকে সত্যে নিয়ে যাও; হে ভগবান! আমাকে অন্ধকার অর্থাৎ অজ্ঞান এবং অধর্মাচরণ, প্রমাদ আদি দুষ্ট গুণ থেকে পৃথক করো, বিদ্যা, ধর্ম এবং শ্রেষ্ঠ কর্মে নিযুক্ত করো এবং আমাকে উচ্চস্থানে সম্পূর্ণরূপে স্থাপন করো । হে প্রভু! আমাকে সংসাররূপ জন্ম-মৃত্যু থেকে মুক্ত করে নিজ কৃপা দ্বারা অমৃত অর্থাৎ মোক্ষ প্রদান করো । ❞
যখন শুদ্ধ চিত্তে নিজ আত্মা, প্রাণ এবং সম্পূর্ণ সামর্থ্যের দ্বারা জীব পরমেশ্বর কে ভজনা করে তখন করুণাময় পরমেশ্বর জীবকে নিজ আনন্দে স্থির করে থাকেন।
শিশু যখন কোনো উঁচু স্থান হতে নিচে অবস্থানরত পিতমাতার নিকটে আসতে চায় বা নিচু স্থান হতে উঁচু স্থানে যেতে চায় তখন পিতামাতা অতি ব্যস্ততার মাঝেও নিজ সন্তানকে কোলে তুলে নেয় যাতে পরে গিয়ে ব্যাথা না পায়। পিতামাতা যেমন নিজ সন্তানকে সুখে রাখার জন্য সর্বদা প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম করতে থাকে, তেমনি পরম কৃপানিধি পরমেশ্বরের পথে যদি কেও একাগ্রতার সাথে চলে তাহলে ঈশ্বর তাঁর অনন্ত শক্তিরূপ হাত দ্বারা জীবকে নিজ শরণে সর্বদার জন্য স্থাপন করে থাকেন। তাঁকে কোনো প্রকার দুঃখ পেতে দেন না এবং জীব সর্বদা আনন্দে থাকে ।
অন্যায় এবং পক্ষপাতিত্ব ত্যাগই ধর্ম। অর্থাৎ অধর্মের সহিত কোনো জিনিস প্রাপ্তির ইচ্ছা না করা ।
দেখো ! সব পাপ অন্যায়, অধর্ম এবং পক্ষপাতের দ্বারাই হয়ে থাকে। পক্ষপাতিত্ব দ্বারা সর্বদা অধর্ম হয় এবং একে "অনর্থ" বলা হয়। ধর্ম এবং অর্থ দ্বারা কামনা করা অর্থাৎ নিজের সুখ সিদ্ধ করাকে "কাম" বলা হয় অধর্ম এবং অনর্থ দ্বারা নিজের সুখ সিদ্ধ করাকে "কুকাম" বলা হয়। এজন্য এই তিন অর্থাৎ ধর্ম, অর্থ, কাম দ্বারা পূর্বোক্ত মোক্ষ প্রাপ্ত করতে হবে ।
এখানে শিক্ষা এই যে, ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করাকে ধর্ম বলে এবং লঙ্ঘন করাকে অধর্ম বলা হয় । ধর্মাদিই মুক্তির উপায়, অন্য উপায় নেই । মুক্তি সঠিক পুরুষার্থ দ্বারাই লাভ হয়, অন্য কিছুর মাধ্যমে নয়।
- সূত্রঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবন চরিত - পণ্ডিত লেখরাম [ সত্যধর্ম বিচার সভা - শাস্ত্রার্থ অধ্যায় ]