আর্যসমাজ কি আদৌ হিন্দু বিরোধী ?

 


আর্য সমাজ হিন্দু বিরোধী কী করে? 
 
◾ আর্য সমাজ এটা মানে না যে শ্রীকৃষ্ণ জী মাখনচোর ছিলেন, গরু চুরি করতেন, গোপিদের সাথে রাসলীলা করতেন, রাধার সঙ্গে বিবাহপূর্ব প্রেম সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন, কুব্জা দাসীর সাথে সঙ্গম করেছিলেন, ঈশ্বরের অবতার ছিলেন।
 
বরং আর্যসমাজের মান্যতা এইযে তিনি জন্ম থেকে ৪৮ বছর বয়স পর্যন্ত ব্রহ্মচারী ছিলেন। কেবল একজন স্ত্রী ছিলো রুক্মিণী, যার সহিত বিবাহের পর বিষ্ণুপর্বতে উপমন্যু ঋষির আশ্রমে ১২ বছর ব্রহ্মচর্য্যের তপস্যা করে নিজ সমান তেজস্বী পুত্র প্রদ্যুম্ন কে জন্ম দেন। যোগেশ্বর হওয়ায় তিনি নিত্য উপাসনা, প্রাণায়াম, সন্ধ্যা, অগ্নিহোত্রাদি করতেন। তিনি বহু যুদ্ধকলায় পারদর্শী ছিলেন, তার প্রিয় অস্ত্র সুদর্শন চক্র ছিল। মহান বিচারক ছিলেন, অদ্বিতীয় যোদ্ধা ছিলেন। 
 
তো এমন মান্যতায় আর্য সমাজ হিন্দুবিরোধী হয় কি করে?
 
◾ আর্যসমাজ রামচরিতমানসের গল্পের ভিত্তিতে এটা মানে না যে হনুমানজি বাঁদরমুখি ছিলেন, না এটা মানে যে তিনি লেজ দ্বারা লঙ্কাদহন করেন।
 
বরং বাল্মিকী রামায়ণের ভিত্তিতে এটা মানে যে হনুমানজি বনে বসবাসকারী দক্ষিণভারতের সেই ক্ষত্রিয় শাখার একজন অখণ্ড ব্রহ্মচারী, মহাবলশালী, ব্যাকরণ প্রগাঢ় বিদ্বান, বেদজ্ঞানী ছিলেন।
তো এমন মান্যতা থাকায় আর্যসমাজ হিন্দুবিরোধী কিভাবে হয়?
 
◾ আর্য সমাজ গরুর, অগ্নি, ব্রহ্মবৈবর্ত, মার্কণ্ডেয়, ভাগবত প্রভৃতি অষ্টাদশ নবীন পুরাণগুলো মানে না 
 
কেননা এসবে পরস্পরবিরোধী কথা, দেবদেবীদের সম্পর্কে অভদ্র অশ্লীল কাহিনী লিখিত রয়েছে। নিজ নিজ আরাধ্য দেবতার স্তুতি কিন্তু অন্যান্য দেবতাদের নিন্দা করা হয়েছে। এসবকে ব্যাসদেবকৃত গ্রন্থ মনে করা হলেও মূলত তা বিভিন্ন মতবাদের পক্ষপাতী ব্যক্তিদের দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন সময়কালে রচিত।
বরং আর্যসমাজ চার বেদের চার ব্রাহ্মণ গ্রন্থ ( ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, শতপথ, গোপথ) গুলোকে পুরাণ হিসেবে মানে, যেখানে আশ্বলায়ন, যাজ্ঞবল্ক্য, জৈমিনি আদি ঋষি-ঋষিকাদের প্রামাণিক ইতিহাস রয়েছে।
তো এমনটা মানায় আর্যসমাজ হিন্দুবিরোধী কিভাবে হয়?
 
◾ আর্য সমাজ হিন্দুদের সকল সংস্কৃততে রচিত শাস্ত্র প্রামাণিক মানে না।
 
বরং তারা বেদ ও বেদানুকুল সকল শাস্ত্রগুলোকে ( দর্শন, উপনিষদ, আরণ্যক, বেদাঙ্গ, রামায়ণ, মনুসংহিতা, মহাভারত, কৌটিল্য অর্থশাস্ত্র) প্রামাণিক মানে এবং সেসবকেও বেদের ভিত্তিতে বিচার করে গ্রহণ করে।
তো এমনটা মান্যতা রাখায় আর্য সমাজ হিন্দুবিরোধী হয় কিকরে?
 
◾ আর্য সমাজ এটা মানেনা যে পাথরের তৈরি লিঙ্গে দুধ অর্পণ করে, মূর্তির সামনে মাথা ঠেকিয়ে, হাত জোড় করে, ধুপ-আগরবাতি দেখিয়ে, মূর্তির নিকট ভোগ দিয়ে, মূর্তিকে কাপড় পড়িয়ে, ঢোল-কাশা বাজিয়ে বা কীর্তনের তালে নাচানাচির মতো অন্ধবিশ্বাস পালনে ঈশ্বর ভক্তি হয়।
 
বরং আর্য সমাজের মান্যতা এই যে ঋষি পতঞ্জলির যোগশাস্ত্রের উপাসনা বিধি (যম-নিয়ম পালন, প্রাণায়াম, প্রণবজপ, ধ্যান ইত্যাদি) অনুসরণ করলেই নিরাকার সর্বব্যাপক পরমেশ্বরের উপাসনা হয়। এই বিধিতেই আমাদের পূর্বজ ঋষি-মুনি-মহাত্মাগণ উপাসনা করতেন। তাই আমাদেরও উক্ত বিধি পালন করা উচিত। 
 
তো এমন ঋষি পরম্পরা অনুসরণে আর্য সমাজ হিন্দুবিরোধী হয় কিকরে?
 
◾ আর্য সমাজ এটা মানেনা যে তীর্থযাত্রা করলে, গঙ্গা স্নান করলে, ঠাকুর-পুজারীদের দান করলে, এসকল বৃথা পাখন্ড ও সকাম কর্মতে অর্থ, সময় ও শক্তির অপচয় করলে মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।
 
বরং এটা মান্যতা যে ঋষি পরম্পরা অনুসারে যজ্ঞ (অগ্নিহোত্র) করায় ৩৩ কোটি (৩৩ প্রকার) দেবতা [ ১১ রুদ্র, ১২ আদিত্য, ৮ বসু, ইন্দ্র ও প্রজাপতি ] পুষ্ট হয় ফলে বায়ুমন্ডল বিশুদ্ধ হয়, বর্ষা দ্বারা ঔষধি, ফল-মূল, সবজি, অন্নের বৃদ্ধি ও শুদ্ধি হয়। এমন এক যজ্ঞ দ্বারা হাজারো মনুষ্যের উপকার হয়,এটা গীতাতেও বলা হয়েছে। এক যজ্ঞতেই ভরপুর পূন্য লাভ হয়।
তো এমন বেদানুকুল মান্যতা দ্বারা আর্য সমাজ হিন্দুবিরোধী হয় কিকরে?
 
◾ আর্য সমাজ এটা মানে না যে মৃতকের শ্রাদ্ধ করায়, কর্মগুণহীন লোভী তথাকথিত ব্রাহ্মণ পূজারীদের উদরপূর্তিতে, ভস্ম গঙ্গায় ভাসালে মৃতব্যক্তির আত্মার শান্তি লাভ হয়।
 
বরং এটা বিশ্বাস করে যে ব্যক্তি তার কর্ম ও কর্মফলের জন্য নিজেই দায়ী, শবদাহ সংস্কার বা অন্তেষ্টিক্রিয়ার ( নরমেধ যজ্ঞ ) পর বায়ু শুদ্ধি হেতু অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করা উচিত এবং অতপর ভস্ম নদীতে না ভাসিয়ে কৃষি জমিতে সার হিসেবে প্রয়োগ করা উচিত। এরপর মৃতকের জন্য কোনো ক্রিয়াই ফলশ্রুত নয় এবং সেই ব্যর্থ কর্ম করাও উচিত নয়।
তো এমন যৌক্তিক মান্যতা রাখায় আর্য সমাজ হিন্দুবিরোধী হয় কি করে ?
 
◾ আর্য সমাজ এটা চায় না যে কোটি, মিলিয়ন, বিলিয়ন টাকার ধনসম্পদ মন্দিরে দান করে তা অপচয় করতে; কেননা সে টাকা দ্বারাই পণ্ডিত-পূজারীরা নিজেদের উদরপূর্তি করবে, বিলাসবহুল বাড়ি বানাবে, গলায় মোটা মোটা সোনার চেইন পড়ে সেই অসৎ পথে হাতিয়ে নেয়া অর্থে জীবন চালাবে।
 
বরং এটা চায় যে এই বিশাল পরিমাণের অর্থ দ্বারা যেন বৈদিক গুরুকুল, সংস্কৃত পাঠশালা, বৈদিক বিজ্ঞানের গবেষণাগার স্থাপন ও পরিচালনা করা হোক। যার দরুন আমাদের দেশ অতিদ্রুত সংস্কৃত রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হয় এবং পুনরায় আমাদের দেশ গৌরবময় আর্যবর্তে পরিণত হোক। সাথে অনাথাশ্রম স্থাপন করা হোক যেন মাতৃপিতৃহীন সনাতনী সন্তানেরা মাদ্রাসা, কনভেন্টে আশ্রিত হিয়ে ইসলাম বা খ্রিস্টানে ধর্মান্তরিত না হয়।
 
তো সনাতনীদের সামাজিক উন্নতিতে এমন চিন্তাভাবনা রাখায় আর্য সমাজ হিন্দুবিরোধী হল কি করে ?
 
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.