শ্রীমৎ স্বামী মহর্ষি দয়ানন্দ জী হরিদ্বারে প্রচার-কার্য সমাপ্তির পর 'দেহরাদূন' নগরে গমনের জন্য মনস্থির করেন ।
১৮৭৯ সনের ১৪ই এপ্রিল প্রাতঃকাল ১০ ঘটিকায় তাঁর পবিত্র চরণযুগল দেহরাদূন নগরের ভূমিতে স্পর্শ করে । সেখানে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন এবং ২৯শে এপ্রিল দেহরাদূনে আর্য সমাজ মন্দির স্থাপিত করেন ।
এই
নগরে রঈস নামক এক ব্যক্তির দুই পুত্র ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলো ।
খ্রিষ্টমত অনুসারীগণ এই দুই সহোদরকে বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করে
খ্রিষ্টমত গ্রহণের জন্য উদ্যত করে তোলে । দুই সহোদর পরবর্তীতে বিভিন্ন
সময়ে একাধিক পৌরাণিকদের সাথে বাগ্বিতণ্ডা করে তাদের নিমিষেই দলন করতে
থাকে । বিহ্বল হয়ে পুত্রদ্বয়ের পিতা তাদের অনুরোধ করে বলে, "তোমরা ছয়
মাস পর্যন্ত এই বিজ্ঞপ্তি দাও যে, যদি কেউ খ্রিষ্টমতের অসারত্ব,
অসত্যতা সিদ্ধ করতে না পারে তাহলে খ্রিষ্টমত গ্রহণ করবে" । সনাতন বৈদিক
ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব এবং খ্রিষ্টমতের নিকৃষ্টত্ব সিদ্ধ করার জন্য কোনো
পৌরাণিকই ঈষৎ পরিমাণ সাহস দেখাচ্ছিলো না ।
যখন
মহর্ষি দয়ানন্দ জী দেহরাদূন নগরে পদার্পণ করেন তখন ছয় মাস সমাপ্ত হতে
কেবল ২-৪ দিন অবশিষ্ট ছিলো । মহর্ষি যখন উক্ত সমাচার সম্বন্ধে জ্ঞাত
হন, তৎক্ষণাৎ সেই দুই সহোদরকে তাঁর সমক্ষে আসতে বলেন । খ্রিষ্টমত নিয়ে
বিস্তার কথোপকথন শুরু হয় । দু'জনেই অত্যন্ত গম্ভীরভাবে উপলব্ধি করলো যে,
মহর্ষির প্রদর্শিত যুক্তিগুলো পাথরের ন্যায় অতিশয় দৃঢ় এবং বিরোধীরা তা
বহন করতে পারছে না, মহর্ষির বজ্রধ্বনিতে সব ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে ।
পরিশেষে তারা খ্রিষ্টমতের অসারত্ব, অসত্যতা সম্বন্ধে পরিপূর্ণভাবে
জ্ঞাত হয় এবং সর্বতোভাবে অস্বীকার করে । সেইসাথে খ্রিষ্টমত গ্রহণ না করার
সিদ্ধান্ত নেন ।
মহর্ষি
সেই দুই সহোদরকে একাধিকবার বলেন পাদরিকে তাঁর সমক্ষে নিয়ে আসতে, পরন্তু
পাদরি কোনোভাবেই মহর্ষির সমক্ষে আসতে সাহস করে নাই । পাদরি সেই দু'জন
সহোদরকে বিভিন্নভাবে ভীতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে । পাদরি বলে, "যদি
তোমরা খ্রিষ্টমত গ্রহণ না করো তাহলে কালেক্টর সাহেব তোমাদের প্রতি রুষ্ট
হবে । পরন্তু তাতে তারা ঈষৎমাত্রও ভীতিগ্রস্থ হলো না ।
এরূপ মহৎ উপকারের জন্য মহর্ষিকে তাদের পিতা প্রীতিসূচকভাবে ধনরত্ন দান করার ইচ্ছাপোষণ করেন, পরন্তু মহর্ষি তা গ্রহণ না করে কোনো সংস্কৃত পাঠশালায় দান করার আদেশ দেন ।
এই ঘটনার কিছুদিন পর মহর্ষি দয়ানন্দ জী মুহাম্মদ উমর নামে পারিবারিকভাবে একজন জন্মগত মুসলিমকে সত্য মার্গ দর্শন করান এবং শুদ্ধিযজ্ঞ করিয়ে তার নাম রাখেন 'অলখধারী' ।
তথ্যসূত্রঃ পণ্ডিত ঘাসীরাম লিখিত " মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কা জীবন-চরিত (২য় ভাগ) ; সংস্করণঃ ১৯৩৩ সন