নাগেশ ভট্ট - মহাভাষ্যপ্রদীপ রচয়িতা



নাগেশ ভট্ট প্রদীপোদ্যত রচনা করে পতঞ্জল মহাভাষ্যের প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি কেবলমাত্র বৈয়াকরণ নন একজন দার্শনিকও বটে। পণ্ডিতদের মতে তাঁর আবির্ভাব কাল ১৬৫৫ – ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। নাগেশের শিষ্য বালশর্মার সময়কাল বিচার করে কোলব্রুক প্রভৃতি পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা তাঁর কাল নির্ণয় করতে চেয়েছেন।

মহাভাষ্য প্রদীপোনাতে স্বরচিত লঘুমঞ্জুষা ও শব্দেন্দুশেখরের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাহলে তার আগেই এই গ্রন্থ দুটি রচিত হয়েছিল বলে মনে করা চলে। প্রয়াগের নিকটবর্তী শৃঙ্গবের পুরের রাজা রামসিংহ তাঁকে জীবিকা অর্জনের ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন বলে জানা যায়। নাগেশ ভট্টের পিতার নাম ছিল শিব ভট্ট এবং মাতার নাম সতী। হরিদীক্ষিত ছিলেন নাগেশের শুরু। শেষ জীবনে নাগেশ সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কোনো পুত্র কন্যা ছিল না বলেই মনে হয়। লঘুশব্দেন্দু শেখর নামক গ্রন্থের শেষে নাগেশ শব্দেন্দুশেখর নামক স্বরচতি গ্রন্থকে তাঁর পুত্র বলেছেন এবং মঞ্জুষা গ্রন্থকে কন্যা বলেছেন। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার তালগাঁও-এর অধিবাসী ছিলেন এই পণ্ডিত। এনার শেষ জীবন কেটেছিল কাশীতে। পণ্ডিতদের মতে ছোটো বড়ো গ্রন্থ মিলিয়ে তাঁর রচনার সংখ্যা প্রায় শতাধিক। ব্যাকরণ বিষয়ে এনার লেখা সাতটি গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি হল-পরিভাষেন্দুশেখর, বৃহচ্ছব্দেন্দুশেখর, লঘুশব্দেন্দুশেখর, লঘুমভূষা, পরমলঘুমষা, স্ফোটবাদ এবং মহাভাষ্য প্রত্যাখ্যানসংগ্রহ । 

পরা, পশ্যন্তী, মধ্যমা ও বৈখরী প্রভৃতি শব্দতত্ত্বের কথা ইনি বলেছেন যার বিষয়ে বৃহৎজ্ঞান ভর্তৃহরি বা কৈয়টের ছিল না। মহাভাষ্যের উপরে প্রদীপোদ্যোত নামক টীকা রচনার আগে নাগেশ তাঁর গুরু হরিদীক্ষিতের কাছে বাস করেছেন এবং হরিদীক্ষিতের পিতামহ ভট্টোজিদীক্ষিতের লেখা সিদ্ধান্তকৌমুদীর উপরে লঘুশব্দেন্দুশেখর নামে একটি রচনা সমাপ্ত করেন। হরিদীক্ষিত সিদ্ধান্তকৌমদীর উপরে লেখা লঘুশব্দরত্ননামক টীকায় বলেছেন—“বিস্তরস্তু অস্মকৃতে বৃহচ্ছব্দরত্নে মদন্তেবাসিকৃত লঘুশব্দেন্দুশেখরে চ দ্রষ্টব্যঃ। নাগেশ তাঁর গ্রন্থকে শব্দেন্দুশেখর বলেছেন মাত্র তার লঘু, বৃহৎ ইত্যাদি বিভাজন করেন নি। গুরুদেবের কথা অনুসারে লঘুশব্দেন্দুশেখরের পর তিনি আরো বৃহৎ ব্যাখ্যা সমেত বৃহচ্ছব্দেন্দুশেখর লিখেছিলেন। নাগেশ ভট্টের ছাত্ররাও বিশেষভাবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বৈদ্যনাথ পায়গুণ্ড ছিলেন অন্যতম। ইতি নাগেশের উপরে ছায়া নামক বিখ্যাত টীকার রচয়িতা। এনার পুত্র বালশর্মাও বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.