'আন্দামানের' কুখ্যাত 'সেলুলার জেলে' আর্যসমাজের প্রচার - ভাই পরমানন্দ

 


আর্যবীর ভাই পরমানন্দের বলিদান দিবসে (৮ ডিসেম্বর) জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি, যিনি আন্দামান সেলুলার জেলে বন্দি থেকেও চালিয়ে গিয়েছেন আর্যসমাজের প্রচার। দক্ষিণ আমেরিকায় আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কৃতিত্বও ভাই পরমানন্দের। আজ আমরা কিছু বিখ্যাত বিপ্লবীর বয়ানে তৎকালে সনাতনী বন্দীদের ওপর হওয়া অত্যাচার রোধে ও জোর করে ধর্মান্তর থেকে রক্ষা করতে আর্যসমাজ ও ভাই পরমানন্দের অবদানের কথা জানব যা সেই সেলুলার জেলের চার দেয়ালের বাইরে খুবই কম চর্চিত হয়েছে।
আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে বৃটিশ আমলে বন্দীদশা কাটিয়েছিলেন আর্যসমাজীরা, ওয়াহাবিরা, লড়াকু শিখরা , বর্মি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা , গদর পার্টির সদস্যরা ( ১৯১৫ সালের পরে প্রচুর সংখ্যায়), "বাঙালি বোমাবাবু" ও বিভিন্ন মতাদর্শের স্বদেশীরা এবং ....... বিনায়ক দামোদর সাভারকর। 
 
নির্বান্ধব এই জীবনে বন্দিরা হাতে পেতেন না কোনও সংবাদপত্র, যোগাযোগ রাখা সম্ভব হত না বাড়ির সঙ্গে। যে চিঠিপত্র আসত তাঁদের নামে‚ সেগুলো অবধি বারবার পরীক্ষা করা হত। দুর্বল শরীরে টানতে হত জেলের বিশাল ঘানি। বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাতে ছিল 'ডান্ডাবেড়ি' ও penal diet এর শাস্তি। এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে উল্লাসকর দত্তের মত বহু বন্দি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, আত্মহত্যা করেছিলেন ইন্দুভূষণ রায়। বন্দীদের খাবার হিসেবে যা দেওয়া হত‚ তা এককথায় অখাদ্য এবং পরিমাণে সামান্য | সারাদিনের অমানুষিক পরিশ্রমের পর যৎসামান্য খাবার নিয়ে সোচ্চার হলে উল্টো করে টাঙিয়ে তিনদিন ধরে প্রহার করা হয়েছে, এমন ঘটনা সেখানে নিয়মের পর্যায়ে -- জল চাইলে মুখে প্রস্রাব করা হত। আন্দামান সেলুলার জেল ছিল বন্দী স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের মনোবল ও নৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেবার একটি বৃহৎ গবেষণাগার। 
 
" জেলে ঢুকিলে প্রথমেই নজরে পড়ে বহু জাতির সমাবেশ। বাঙ্গালী, হিন্দুস্থানী, পাঞ্জাবী, মারাঠী, পাঠান, সিন্ধি, বর্মী, মাদ্রাজী সব মিশিয়া খিচুড়ি পাকিয়া গিয়াছে।’’
 
লিখেছেন বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর "নির্বাসিতের আত্মকথা" বইতে। ১৯০৯ সাল থেকে প্রায় বারো বছর তাঁর কেটেছে আন্দামানের সেলুলার জেলের অভ্যন্তরে।
 
১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলায় বিপ্লবী মদনমোহন ভৌমিক দশ বছর আন্দামানে নির্বাসনের সাজাপ্রাপ্ত হন। মুক্তি পাওয়ার পরে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জেল জীবন নিয়ে মদনমোহন “আন্দামানে দশ বৎসর” নামে একটি বই রচনা করেন।
 
"আন্দামানে দশ বৎসর" বইতে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, বিপ্লবী মদনমোহন ভৌমিক লিখছেন, 
 
" এই convict officer নির্বাচন করার প্রথম হাত ( জেলার) ব্যাড়ী সাহেবের। সুতরাং সে এমন লোক বাছিয়া নির্বাচন করে --- যে অসমসাহসী, গোঁয়ারগোবিন্দ, অর্ধসভ্য, শক্তিশালী, হিতাহিত জ্ঞানহীন, চুকলিতে মুকবরিতে ওস্তাদ এবং হুকুম তামিলে সর্বদা প্রস্তুত -- ..... ; এইরূপ প্রকৃতির লোক দ্বারাই অঙ্গুলী সঙ্কেতে কার্য করা যায়। ইহার ষোল আনাই পাঠান চরিত্রে বিদ্যমান।"
 
"পাঠান মানে সহজ কথায় মেওয়াবেচা কাবুলীওয়ালা,পোর্ট ব্লেয়ারে ইহারা যমের দোসর ; ধরিয়া আনিতে বলিলে বাঁধিয়া আনে। নিজেরা যেমন ধর্মভীরু ও কলুষিতচরিত্র, তেমনই পরকে খাটাইতে ওস্তাদ ও দুর্দ্দান্ত।" 
--- শ্রী অরবিন্দর অনুজ, বিপ্লবী বন্দী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের অকপট স্মৃতিচারণ, তাঁর "দ্বীপান্তরের কথা" বইতে। 
 
মদনমোহন ভৌমিক নিজের চোখে দেখেছেন এঁদের দৌরাত্ম্য। তিনি লিখছেন, 
 
" পূর্বে সমগ্ৰ আন্দামানে পাঠান নির্বাসিতগণ একছত্রাধিপতি ছিল। সের আলী নামক এক পাঠান কর্তৃক ১৮৭২ সালে Lord Mayo নিহত হবার পর সরকারের এ বিশ্বাস খর্ব হয়। পূর্বে খানসামা - পাঠান, গাড়োয়ান - পাঠান, নৌবাহক - পাঠান, আর্দালী - পাঠান, জমাদার, টিন্ডেল, পেটি অফিসার - পাঠান। পাঠান যেন হলুদের গুঁড়া। হলুদের ব্যবহার যেমন সকল তরকারীতেই হয় সেইরূপ এই আন্দামানে সব কার্যেই পাঠান। .... সরকারের এইরূপ সাহায্য পাইয়া পাঠানগণ স্বীয় প্রবৃত্তি চরিতার্থ এবং হিন্দুকে মুসলমান করিবার অবাধ সুযোগ পাইত।"
 " এই বর্বর জাতিকে সুযোগ দিয়া ( সরকার ) এই স্থানের অবস্থা ক্রমে ক্রমে এমন করিয়া তুলিলেন যে পাঠানদের যন্ত্রনায় অন্যান্য কয়েদীরা অতিষ্ঠ হইয়া উঠিল।" 
 
যে পাঠানরা আন্দামানে একদিন কয়েদী হয়ে এসেছিল,তাঁরা সরকারী উর্দি, চাপরাস ও ব্যাটন পেয়ে বলত, "খোদা আমাকে হাকিম করেছেন, আমার হুকুমে দুশো কয়েদী ওঠে - বসে।" 
 
" স্বাতন্ত্র্যবীর" বিনায়ক দামোদর সাভারকর তাঁর "My Transportation for Life" বইতে লিখেছেন, 
 
"The Pathans as a rule, were bigoted Mahommedans and were especially notorious for their fanatical hatred of the Hindus. The officers had pampered them to serve their own ends."
 
ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী প্রখ্যাত বিপ্লবী সংগঠক পুলিনবিহারী দাশ দীর্ঘদিন আন্দামান সেলুলার জেলে অন্তরীণ ছিলেন (১৯১০-১৯১৮)। তাঁর "আমার জীবনকাহিনী" বইতে রয়েছে ওই সময়ের প্রতিচ্ছবি। 
 
" কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থানুসারে আন্ডামানে পাঠান কয়েদীদের প্রাধান্যই সর্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। তাই পাঠান কয়েদীগণ হিন্দু কয়েদীগণের প্রতি নানাবিধ অত্যাচার করিতে কখনই দ্বিধাবোধ করিত না, --- এবং কখনও বা থাপ্পড় মারিয়া, কিংবা প্রলোভন দেখাইয়া কোন কোন নির্বোধ হিন্দু কয়েদীকে মুসলমান করিয়া লইত। কোন হিন্দু কয়েদী মুসলমান হইলে, বিভিন্ন মুসলমান কয়েদী আদর করিয়া তাহাদের আপন আহার্যের অংশ, কখনও বা উচ্ছিষ্ট অন্ন - ব্যঞ্জনাদিও নব- দীক্ষিতকে আহার করিতে দিত।
নব - দীক্ষিতগণ ক্ষুধার তাড়নায় ঐ উচ্ছিষ্টই ভক্ষণ করিত ( জেল প্রদত্ত আহার্যে বলশালী হিন্দুস্থানী কিংবা পাঞ্জাবীগণের পরিপূর্ণ ক্ষুন্নিবৃত্তি হইত না। ) কোন কোন নব- দীক্ষিত নব-কৃত বন্ধু মুসলমানগণের আদর উপেক্ষা করিতে ভরসাই পাইত না, উচ্ছিষ্টই ভক্ষণ করিতে বাধ্য হইত। আর্য সমাজ মতে দুই একটি মুসলমানকে হিন্দু করিবার চেষ্টাও হয়েছিল বটে, কিন্তু মুসলমানগণের বাধা প্রদানে এবং কর্তৃপক্ষগণের আচরণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হইয়া গিয়েছিল। 
 
দুই একটি পাঠান- কয়েদী পাহারাওয়ালা, কিন্তু বিপ্লবী কয়েদীগণের সবিশেষ বন্ধুও হইয়াছিল, এবং বাঙ্গালী বিপ্লবী কয়েদীগণের গুপ্তকর্মে অতি বিশ্বাসযোগ্য ভাবেই সাহায্য করিত। সহানুভূতি সূচক আচরণ ও সহৃদয় বাক্যালাপেই ঐ সমস্ত পাঠানগণ বশীভূত থাকিত। -- কিন্তু সাধারণ পাঠানগণ স্বাভাবিক বাক্যালাপ ও ব্যবহারে নিতান্ত প্রীতিপূর্ণভাব দেখাইতে সবিশেষ দক্ষই প্রতিপন্ন হইত বটে,--- তথাপি প্রয়োজন মত হাসি হাসি মুখেই বিভিন্ন ছলনা চাতুরী ও কপটতাসহ অনিষ্ট সাধনে কদাচ পরাম্মুখ হইত না, --- এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতে মুহূর্তের মধ্যে বাহ্যিক বন্ধুভাব পরিত্যাগ করিয়া হিংস্র পশুর আচরণে প্রবৃত্ত হইতে কদাচ দ্বিধা বোধ করিত না। 
 
একই কথা লিখে গেছেন মদনমোহন ভৌমিক, তাঁর " আন্দামানে দশ বৎসর" বইতে ...
 
" আন্দামানে পাঠানদেরই প্রাধান্য বেশি, আর পাঠানগণই অন্যায় বিষয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে অসংযত। তাহারাই সকল খারাপ কাজের নানা উপায় অবলম্বন করে। হিন্দুর ছেলেকে পাইলে তাহাকে শুধু চরিত্রহীন করিয়াই সন্তুষ্ট হয় না, একেবারে কলমা পড়াইয়া ছাড়ে। এভাবে অনেক হিন্দুর ছেলেকে বলপূর্বক ইসলামধর্ম গ্ৰহণ করাইয়াছে।
যদি কোনো হিন্দু এ সকল কাজে প্রতিদ্বন্দ্বী হয় তবে জেলের সমস্ত পাঠান ও অন্যান্য মুসলমান একযোগ হইয়া তাহার সর্বনাশ করিতে কৃতসংকল্প হয় ; এবং উল্টা তাহাকেই বদমাইশ বলিয়া সকলের নিকট প্রচার করে। এ সকল সংবাদ যখন কর্তৃপক্ষের কর্ণে পৌঁছে তখন Divide and Rule নীতি অবলম্বন করিয়া হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধাইয়া তাহাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিবার নিমিত্ত পাঠানদলকে সাহায্য করে এবং হিন্দুগণকে দুর্বল দেখিয়া তাহাদিগকে নির্যাতনে প্রয়াসী হয়......
....সরকারের সাহায্য পাইয়া পাঠানগণ স্বীয় প্রবৃত্তি চরিতার্থ এবং হিন্দুকে মুসলমান করিবার অবাধ সুযোগ পাইতো। ..., হিন্দুদের demoralized করিয়া হিন্দু জাতকে ছোট করাই ইহাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
.... নিরাশ্রয় হিন্দু নাবালক যদি মুসলমান জমাদারের হাতে আসিয়া পড়ে তবে তাহার জীবন বিপদহীন হইতে পারে না। যদি নিজে মানসিক বলে বলবান হয়, কোনো দুঃখ- কষ্টে পড়িলেও দমে না, তাহা হইলে তাহার রক্ষা। শতকরা পচাঁনব্বই জন মুসলমান জমাদার। সুতরাং সর্বত্রই হিন্দু নাবালককে এই সংগ্রামের সম্মুখীন হইতে হয়।
অসৎ অভিপ্রায়ে প্ৰথমে টাকা- পয়সা, খাবার ও নানারূপ প্রলোভন দেখায়। যদি এই প্রলোভনেই কাহারও ধর্মের মেরুদন্ড শিথিল হইয়া যায় তাহা হইলে তো জমাদারের পক্ষে সোনায় সোহাগা। ক্রমে বন্ধুত্ব করিয়া সর্বদা তাহার সঙ্গে সঙ্গে বিনা কাজে রাখিয়া তাহাকে মুগ্ধ করে। পরে হাতের ছোঁয়া জিনিষ তাহাকে গোপনে খাইতে দিলে সে আর অমত করিবার শক্তি পায় না। আর যদি ইহাতেও না হয়, তবে হাড়ভাঙা কাজে নিয়োগ করিয়া জব্দ করিতে চেষ্টা করে; ...... ছেলেদের অবস্থা হয় ধান খেয়েছো মুরগি যাবে কোথায় গোছের। নবাগত নাবালকেরা কখন কোন কাজের জন্য কোন অবস্থা ঘটিবে বুঝিতে পারে না। আর তাহাদের এ বয়সে সকল ষড়যন্ত্র ধরিবার ক্ষমতাও হয় না।
এরূপ ঘটনা এ স্থানে অনেক ঘটিয়াছে ও ঘটিতেছে দেখিয়া নির্বাসিত আর্যসমাজিগণ তাহাদিগকে শুদ্ধ করিয়া লইবার চেষ্টা যখন আরম্ভ করিয়াছে তখন হিন্দু মুসলমানের মধ্যে একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হইয়াছে। আর্য সমাজিগণ বহু পুরানো ইসলাম ধর্মমতে দীক্ষিত হিন্দুগণকে পুনরায় হিন্দু করিয়া লইতেছে। ইহাদের এ কার্য যখন আরম্ভ হইয়াছে তখন হইতে মুসলমানদের অবারিত-দ্বার ক্রমে সঙ্কীর্ণ হইয়া আসিল।"
এ বিষয়ে আলিপুর বোমা মামলার আসামী, পরবর্তীকালে " বিজলী", " আত্মশক্তি" পত্রিকার অন্যতম লেখক ও "দৈনিক বসুমতী" পত্রিকার সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবলোকন খুব ভিন্ন নয়। " 
 
নির্বাসিতের আত্মকথা"য় তিনি লিখছেন, 
 
"দুর্বলের উপর নির্যাতন সব জায়গাতেই হয় আর সে নির্যাতন পাঠানেরাই বেশি করে। কিন্তু পাঠানদের সহস্র দোষ সত্ত্বেও একটা গুণ দেখিয়াছি যে যাহাকে একবার বন্ধু বলিয়া স্বীকার করিয়া লয় নিজের মাথায় বিপদ লইয়াও তাহার সাহায্য করে। তাহাদের মধ্যে নৃশংসতা যথেষ্ট আছে, কিন্তু তাহাদের মনের দৃঢ়তা আমাদের দেশের লোকদের চেয়ে অধিক। ধর্মঘটের সময় জেলার আমাদের দাবাইবার জন্য জেলার আমাদের উপর পাঠান প্রহরী লাগাইয়া দিত কিন্তু পাঠান অনেকসময় বিশেষভাবে আমাদের বন্ধু হইয়া উঠিত। ......
হিন্দু মুসলমানের ভেদটা জেলখানার মধ্যে মাঝেমাঝে তীব্র হইয়া উঠিত। স্বধর্মীদের ওপর টানটা মুসলমানদের মধ্যে স্বভাবতঃই একটু বেশি। সেজন্য জেলের মধ্যে কর্তৃত্বের জায়গাগুলা যাহাতে মুসলমানদের হাতেই থাকে এজন্য তাহারা সর্বদা চেষ্টা করিত। অধিকন্তু নানা প্রলোভন দেখাইয়া তাহারা হিন্দুকে মুসলমান করিতে পারিলেও ছাড়িত না। কোনরূপে হিন্দুকে মুসলমান ভান্ডারীর খানা খাওয়াইয়া তাহার গোঁফ ছাটিয়া দিয়া একবার কলমা পড়াইয়া লওয়াতে পারিলে বেহেস্তে যে খোদাতাল্লা তাহাদের জন্যে বিশেষ আরামের ব্যবস্থা করিবেন, এ বিশ্বাস প্রায় সকল মোল্লারই আছে। আর কালাপানির আর্তভক্তদের মধ্যে মোল্লারও অসদ্ভাব নেই। কাজে কাজেই হিন্দুর ধর্মান্তর গ্ৰহণ লইয়া উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মধ্বজীদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝগড়ি চলিত। একজন হিন্দু বিশেষতঃ ব্রাহ্মণের ছেলে যদি ঘাণি পিষিতে যায় তাহা হইলে পাঁচ সাতজন মোল্লা মিলিয়া তাহাকে নানারূপে বিপদে ফেলিবার ষড়যন্ত্র করে আর সে যদি মুসলমান হয় তাহা হইলে যে কিরূপ পরম সুখে দিন কাটাইতে পারিবে সে সম্বন্ধে নানারূপে প্রলোভন দেখায়। 
 
**মুসলমানদের মত আর্যসমাজীরাও জেলের মধ্যে প্রচারকার্য চালাইতে থাকে এবং ধর্মভ্রষ্ট হিন্দুকে আর্যসমাজভুক্ত করিয়া লইবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে। সাধারণ হিন্দুর মধ্যে সেরূপ কোন আগ্ৰহ দেখা যায় না। তাহারা দল হইতে বাহিরে করিয়া দিতেই জানে, নূতন কাহাকেও দলে টানিয়া লইবার সামর্থ্য তাহাদের নাই। "
 
একই কথা বলেছেন মদনমোহন বাবু, 
 
"ভাই পরমানন্দ এ কার্যে হিন্দুগণকে গোপনে অনেক সাহায্য করিয়াছেন। বাহির হইতে যাহারা দণ্ড পাইয়া জেলে আসিয়াছে তাহাদিগকে নানা উপদেশ ও শ্রী দয়ানন্দ সরস্বতীর গ্রন্থাদি পাঠ করিতে দিয়া হিন্দুদের অনেক উপকার করিয়াছেন। এমনকি গোপন পুস্তক আনাইয়া বাহিরের প্রচার কার্যে অনেক সাহায্য করিয়াছেন। ধর্মান্তরিত হিন্দুগণকে স্বধর্ম গ্রহণের কার্য তিনি নিজেও জেলে দুই - চারটা করিয়াছেন। তিনি নিজে আর্য সমাজের লোক সুতরাং তাঁহার চেষ্টায় আর্য সমাজের সমাজ হিসাবে মঙ্গল হউক আর না হউক হিন্দু সমাজের যে একটা আমূল পরিবর্তন হইয়াছে একথা অস্বীকার করা চলে না।"
 

তথ্যসূত্র ; 
 
নির্বাসিতের আত্মকথা
উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
বেঙ্গল পাবলিশার্স
পঞ্চম সংস্করণ, ১৩৬১
 
আন্দামানে দশ বৎসর ;
মদনমোহন ভৌমিক
লেখক সমবায় সমিতি ;
দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৫৮ 
 
দ্বীপান্তরের কথা
বারীন্দ্রকুমার ঘোষ
আর্য পাবলিশিং হাউস
১৩২৭
 
আমার জীবনকাহিনী
পুলিনবিহারী দাশ
অনুশীলন সমিতি
১৯৮৭
 
My Transportation for Life
Vinayak Damodar Savarkar
Swatantraveer Savarkar Rashtriya Smarak Trust, Mumbai

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.