আর্য জগতের‌ মহান বিভূতি পণ্ডিত রাজবীর‌ শাস্ত্রী



আর্য জগতের‌ মহান বিভূতি পণ্ডিত রাজবীর‌ শাস্ত্রী 


আর্যজগতের গগন মণ্ডলের ভাস্বর নক্ষত্র, মহান বৈদিক বিদ্বান কীর্তিশেশ ঋষিভক্ত পণ্ডিত. রাজবীর শাস্ত্রী জীর জন্ম উত্তর প্রদেশের‌ গাজিয়াবাদ জেলার মুরাদপুর জট্ট গ্রামে ১৯৩৮ সনের ৪ঠা এপ্রিল ‌বৈশ্য সিংহল পরিবারে


তাঁর পিতার নাম শ্রী শিবচরণ দাস আর্য । মাতার নাম শ্রীমতী মনসাদেবী । পণ্ডিত জীর মাতা বৈষ্ণব মতাবলম্বী ছিলেন । আর্যসমাজের প্রমুখ বিদ্বান পণ্ডিত রামচন্দ্র দেহলবী, কুবের সুখলাল, ঠাকুর অমর সিংহ জী, স্বামী মুনীশ্বরানন্দ সরস্বতী, পণ্ডিত শান্তি প্রকাশ, পণ্ডিত বুদ্ধদেব মীরপুরী, পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী আদি আর্য বিদ্বানগণের প্রবচন, ব্যাখ্যান শ্রবণ করে তাঁর পিতা শ্রী শিবচরণ দাস জী নিষ্ঠাবান আর্যসমাজী হয়েছিলেন ।  শাস্ত্রী জীর মোট পাঁচ ভ্রাতা এবং দুইজন‌ ভগিনী ছিলেন । পণ্ডিত রাজবীর জীর পিতৃপ্রদত্ত নাম  রাজকুমার ছিলো ।  

শাস্ত্রী জীর প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় তাঁর গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে । তৎপশ্চাৎ  ১৯৪৬ সনে যখন তাঁর বয়স ৭-৮ বর্ষ, তখন তিনি 'দয়ানন্দ বেদ বিদ্যালয় গুরুকুল', গৌতমনগর, দিল্লীতে  প্রবিষ্ট হন । এই গুরুকুল বিদ্যালয় স্বামী সচ্চিদানন্দ যোগী জী দ্বারা স্থাপিত  এবং তিনি‌ই সঞ্চালন করতেন । স্বামী সচ্চিদানন্দ যোগী জীর পূর্বাশ্রমীয় নাম শ্রী রাজেন্দ্র নাথ শাস্ত্রী  । তিনি মহর্ষি দয়ানন্দ জীর সহপাঠী পণ্ডিত উদয় ভান প্রকাশ জীর শিষ্য ছিলেন । মহর্ষি দয়ানন্দ জীর সান্নিধ্যে বৈদিক সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় নিষ্ঠা এবং বিদ্যা তাঁর গুরুর থেকে লাভ করেন । 

 রাজবীর জী গুরুকুল ঝজ্জর-এ অধ্যয়নের সময় প্রসিদ্ধ বিদ্বান স্বামী ওমানন্দ জী এবং ব্যাকরণাচার্য আচার্য বিশ্বপ্রিয় শাস্ত্রী জীর দর্শন লাভ করেন । 


শাস্ত্রীজী গুরুকুল গৌতমনগর, দিল্লীতে অধ্যয়নের সময় স্বামী ওমানন্দ জী, যিনি এই গুরুকুলের‌ বিদ্যার্থী ছিলেন , সেই সময়ে গুরুকুল ঝজ্জর এর সঞ্চালন পদে ছিলেন । গুরুকুল  ঝজ্জর এর স্থাপনা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জীর প্রেরণায় পণ্ডিত বিশ্বম্ভরদাস জী করেছিলেন । এই গুরুকুলের  প্রথম আচার্য ছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ জী । 

গুরুকুল ঝজ্জর-এ অধ্যয়নের সময় রাজবীর জী  ১৯৫৪ সন পর্যন্ত  সমগ্র বেদ, বেদাঙ্গের গভীর অধ্যয়ন করেন । তিনি গুরুকুলে সরকারী পরীক্ষার অংশ না নিয়ে পরম্পরাগত শাস্ত্রীয় অধ্যয়ন করেন ।

শাস্ত্রীজীর‌ আচার্য ছিলেন আচার্য ভগবান দেব অর্থাৎ স্বামী ওমানন্দ জী, আচার্য বিশ্বপ্রিয় শাস্ত্রী, পণ্ডিত জগদেব সিংহ সিদ্ধান্তী, পণ্ডিত মহামুনি, মুনি দেবরাজ বিদ্যাবাচস্পতি আদি বিদ্বান । সেই সময়ে স্বামী ওমানন্দ জীর আগ্রহে  কবিবর মেধাব্রত, আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী, স্বামী ব্রহ্মমুনি, স্বামী বেদানন্দ জী তীর্থ, স্বামী ব্রতানন্দ, স্বামী আত্মানন্দ আদি বৈদিক বিদ্বান গুরুকুল ঝজ্জর-এ এসে ব্রহ্মচারীদের পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেন ।  দিগ্‌গজ বিদ্বানগণের সান্নিধ্যে অধ্যয়নের সৌভাগ্য পণ্ডিত রাজবীর জী প্রাপ্ত হন । বৈয়াকরণ আচার্য শিবপূজন জী, যোগদর্শনের বিখ্যাত বিদ্বান পণ্ডিত মহামুনি জী, দর্শনাচার্য পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র জী এবং  পণ্ডিত দামোদর সাতবলেকর জী আদি বিদ্বান গুরুকুল ঝজ্জর-এ পাঠদান কালে রাজবীর জীর পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ‌ হন । রাজবীর জীর পৌরোহিত্য কর্মের শিক্ষা সম্পন্ন হয় প্রসিদ্ধ কর্মকাণ্ডী বিদ্বান স্বামী মুনীশ্বরানন্দ সরস্বতী জীর সান্নিধ্যে ।


 ড. হরিদত্ত শাস্ত্রী জী পণ্ডিত রাজবীর জীকে আগরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ.  পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সহায়তা করেছিলেন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন শাস্ত্রী জী । গুরুকুল ঝজ্জর-এ অধ্যয়নের সময় রাজবীর জীর‌ সহপাঠী ছিলেন পণ্ডিত যজ্ঞদেব জী, পণ্ডিত বেদব্রত জী মীমাংসক, পণ্ডিত সুদর্শনদেব জী, শ্রী সত্যবীর জী, শ্রী মনুদেব জী (স্বামী সত্যপতি জী), শ্রী ভীমসেন জী, শ্রী আতরসিংহ জী, শ্রী জয়দেব জী, শ্রী জগদীশ জী আদি প্রসিদ্ধ বিদ্বান

 পণ্ডিত রাজবীর জী অনেক শাস্ত্রীয় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন ।  ১৯৫০ সনে 'সিদ্ধান্ত রত্ন', ১৯৫১ সনে 'সিদ্ধান্ত ভাস্কর', ১৯৫২ সনে উপনিষদ্ বিষয়ক অলঙ্কার পরীক্ষা , 'সংস্কৃতিবিজ্ঞ'‌ পরীক্ষা , 'সিদ্ধান্ত শাস্ত্রী' পরীক্ষা, ১৯৫৩ সনে‌ 'সংস্কৃত প্রবীণ' পরীক্ষা  তথা ১৯৫৪ সনে 'ছন্দোলঙ্কার শাস্ত্র সাহিত্যাচার্য'  পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন ।

উপর্যুক্ত পরীক্ষা অতিরিক্ত শাস্ত্রী জী ১৯৬১ সনে বেনারস সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'শাস্ত্রী' পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন । ১৯৬২ সনে  পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  'ব্যাকরণাচার্য' পদবী লাভ করে ।  ১৯৬৪ সনে বেনারস সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'আচার্য'  পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । উপুর্যক্ত পরীক্ষা  অতিরিক্ত পণ্ডিত রাজবীর জী  পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বিশারদ' (সংস্কৃতে উচ্চ দক্ষতা), 'শাস্ত্রী' (সংস্কৃত সম্মান) এবং 'প্রভাকর' (হিন্দি সম্মান) ক্রমশঃ ১৯৫৫, ১৯৫৬ এবং ১৯৫৮ সনে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন । শাস্ত্রী জী ১৯৫৬ সনে কাশী রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ মধ্যমা পরীক্ষায়‌ও উত্তীর্ণ হন । পাঞ্জাবের শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৯৫৮ সনে 'ল্যাঙ্গুয়েজ অব‌ টিচার্স' (Language Of Teachers) কোর্সে‌ও সফলতা অর্জন করেন । ১৯৬৭ সনে এম.এ. (সংস্কৃত) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আগরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।

 এই প্রকারে পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জী  পরম্পরাগত অধীত শাস্ত্র সহিত আধুনিক পরীক্ষা প্রণালী উভয় ক্ষেত্রের শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সংস্কৃত এবং উচ্চস্তরীয় শিক্ষা প্রাপ্ত করেন

গুরুকুল ঝজ্জর থেকে ১৯৫৮ সনে শিক্ষা সম্পন্ন করার পর উক্ত গুরুকুলেই ১৯৬০ সন পর্যন্ত তিনি অধ্যাপন কার্যে নিযুক্ত থাকেন । পাঞ্জাবের শিক্ষা বিভাগেও ১৯৬০ সন থেকে ১৯৬৭ সন পর্যন্ত সংস্কৃত এর অধ্যাপক পদে কার্যরত ছিলেন । শাস্ত্রী জী  ঝজ্জর এর  গ্রাম, বেরীর শাসকীয় বিদ্যালয়েও অধ্যাপন কার্য করেছেন । এই সময়ে তিনি স্বামী রামদেব জীর বিদ্যাগুরু মহাত্মা বলদেব জী তথা ইন্দ্রদেব মেধার্থী ( স্বামী ইন্দ্রবেশ সাংসদ ) জীকে ব্যাকরণ এবং মহাভাষ্যে অধ্যয়ন করিয়েছেন।  ১৯৬৭ সনে  পণ্ডিত রাজবীর জী  দিল্লীর প্রশাসনে সংস্কৃত শিক্ষক পদে  কার্যরত থাকেন এবং  ১৯৯৮ সনে এই পদ‌ থেকে অবসর নেন ।


১৯৬২ সনে পণ্ডিত রাজবীর জী  নাঙ্গল-দেহরাদূন নিবাসী একজন ধার্মিক তথা গৃহ কার্যের নিপুণ দেবী পুষ্পলতা জীর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।  তিনি চারটি সন্তানের পিতা । চার সন্তান ক্রমশঃ বিনয় কুমার আর্য, সঞ্জয় কুমার, আয়ু. অর্চনা এবং অজয় কুমার । সকলেই  উচ্চ শিক্ষিত এবং বিবাহিত । তাঁর সব পুত্রবধু এবং জামাতা আর্য সংস্কার দ্বারা সুভূষিত । 


পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জী প্রসিদ্ধ‌  ‘দয়ানন্দ সন্দেশ’ মাসিক পত্রিকার‌  অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন । এ পত্রিকায়  বিবিধ  বিষয়ের উপর লেখ, শঙ্কা-সমাধান আদি অবৈদিকদের‌ বিভিন্ন অপদাবী সপ্রমাণ‌তার‌ সহিত‌ অত্যন্ত‌ বিস্তৃতভাবে খণ্ডন করে প্রকাশিত হতো ।   

পণ্ডিত রাজবীর  জীর সম্পাদন কালে ‘দয়ানন্দ-সন্দেশ’ পত্রিকা বিবিধ বিষয়ে  অনেক বিশেষাঙ্ক প্রকাশিত করা হয়েছে । 

 

পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জী ‘‘বৈদিক কোশ” নামক অত্যন্ত মহত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রণয়ন‌ করেছেন । এই কোষ গ্রন্থে পণ্ডিত জী মহর্ষি দয়ানন্দ জী কৃত বেদভাষ্য সহ  অন্য সমস্ত সাহিত্য থেকে বৈদিক পদসমূহের  অর্থ সংগ্রহ করে  এই গ্রন্থে একত্র করে প্রস্তুত করেছেন। 

এই বিষয়ে  পণ্ডিত জী স্বয়ং ব্যক্ত করেছেন,   ‘মহর্ষি দয়ানন্দ জীর বেদ-ভাষ্যের (অনেক) বিশেষতাকে কেন্দ্র করে আমার এই ইচ্ছা যে‌, মহর্ষিকৃত অর্থ দ্বারা যুক্ত বৈদিক পদসমূহের  অকারাদি ক্রম দ্বারা এমন এক কোষ প্রস্তুত করা উচিত, যেখানে বেদ এর অধ্যেতা তথা অনুসন্ধানকর্তারা পদার্থ দর্শনমাত্র সরলতা তথা সুগমতা প্রাপ্ত হয়। প্রকরণ ভেদে মন্ত্রে পঠিত পদের  বিভিন্ন অর্থের  এক সন্দর্ভ পূর্ণ চিত্র উপস্থিত করতে উক্ত কোষ পাঠকগণের  বিশেষ সহায়ক হবে । মহর্ষি দয়ানন্দ জীর বেদভাষ্য তথা তাঁর অন্যাদি গ্রন্থে যেখানে-যেখানে যেসব  বৈদিক পদসমূহের  অর্থ উপলব্ধ,  তার সবকিছু সংগ্রহ করে বৈদিক কোশ‌ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ।’ 

পণ্ডিত রাজবীর  জীর ‘বৈদিক কোশ’ গ্রন্থটি বেদের অধ্যেতাগণের নিকট বিবিধ প্রকারে লাভদায়ক হবে । 

এই বৈদিক কোশ গ্রন্থের পঠনে তাঁর তপ এবং পুরুষার্থের দর্শন উপলব্ধি হয়ে থাকে । এমন মহনীয় এবং পুরুষার্থ কার্যকর্তা  আর্য‌ জগতে বিরল । বিনা কোন আর্থিক লাভে সমগ্র জীবনে  সদা যশ থেকে দূরে অবস্থানকারী ব্যক্তির এমন মহত্ত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন নিঃসন্দেহ তাঁকে অসাধারণ এবং শ্রদ্ধাস্পদ মনুষ্য ভূষিত করা হবে । এহেন পাণ্ডিত্যপূর্ণ কীর্তির জন্য পণ্ডিত রাজবীর  জী ইতিহাসে  সদা অমর থাকবেন ।  এই গ্রন্থের প্রকাশনের জন্য  স্বামী প্রণবানন্দ জী এবং তাঁর ন্যাস ‘শ্রীমদ্দয়ানন্দ বেদার্ষ মহাবিদ্যালয় ন্যাস, দিল্লি‌‌’-ও প্রশংসাপত্র প্রদান করেছেন । 


পণ্ডিত জীর এক প্রসিদ্ধ কার্য ‘পাতঞ্জল যোগ-দর্শন-ভাষ্যম্’ গ্রন্থের প্রণয়ন ।  আর্য জগতের কয়েকজন বিখ্যাত বিদ্বান তাঁর যোগ দর্শনের ভাষ্য‌ সম্বন্ধে মন্তব্য প্রদান করেন, পণ্ডিত রাজবীর জী দ্বারা লিখিত যোগ ভাষ্য উচ্চকোটির সাহিত্য‌ । ভাষ্যকার   প্রতিটি‌ যোগ সূত্রের উপর ব্যাস ভাষ্যের বিস্তৃত বর্ণনা করে যো‌গ দর্শনের ভাবানুবাদ মাহাত্ম্য আর‌‌ও অধিক উচ্চমাত্রায় তুলে ধরেছেন ।  অন্য আরেকটি বিশেষতা‌ও  লক্ষ্যণীয় –  যোগ‌ দর্শনের যে‌সব সূত্রের উপর মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ব্যাখ্যা উপলব্ধ, সেসব ব্যাখ্যা‌সমূহ‌ও এই গ্রন্থে সর্বত্র উদ্ধৃত করা হয়েছে ।  এই প্রকারে যোগদর্শনের অধ্যেতাগণের নিকট মহর্ষি দয়ানন্দ দ্বারা প্রতিপাদিত যোগের আর্ষ স্বরূপের বোধগম্য‌ খুব‌ই বিস্তৃতভাবে হবে । গ্রন্থারম্ভে বিস্তৃত ভূমিকা লিখে  ভাষ্যকার বৈদিক দর্শন সম্বন্ধী অনেক প্রশ্নের বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন । নিশ্চয়‌ই যোগদর্শনের এই অভূতপূর্ব  ব্যাখ্যা আর্য জগতের দার্শনিক সাহিত্যে উচ্চ সম্মানের স্থান প্রাপ্ত করবে । 


  


পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জী তিন ( ঈশ-কেন-কঠ )  উপনিষদের বিস্তৃত ভাষ্য‌ও প্রণয়ন করেছেন, যা আর্ষ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছে । গ্রন্থে  ঈশ-কেন-কঠ উপনিষদের শ্লোক, বচনসমূহ এবং পাঠের উপর মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য‌ এবং নির্দেশ‌ও উপলব্ধ এবং প্রায়ঃ প্রতিটি স্থলে শঙ্করাচার্যের ভাষ্য বিস্তৃতভাবে খণ্ডন করে মহর্ষির‌ সিদ্ধান্তের পুষ্টি সপ্রমাণতার‌ সহিত‌ অতি বিস্তৃতভাবে সিদ্ধ করেছেন । এই ত্রয়ী উপনিষদের ভাষ্যে বিশেষতা‌ সম্বন্ধে স্বয়ং রাজবীর‌ জী‌ মন্তব্য‌ প্রদান করেন‌ – ‘মহর্ষির ভাষ্য এবং শাঙ্করভাষ্যাদি শ্রদ্ধার সহিত সাধারণভাবে পঠিত হয়ে থাকে । সূক্ষ্ম বিবেক শক্তি দিয়ে‌ অধ্যয়ন‌ না করার‌ দরুন  সত্যাসত্যের নির্ণয় হ‌ওয়া অসম্ভব । এই উপনিষদ্‌ অঙ্ক প্রকাশের উদ্দেশ্য –  পাঠকগণ যেনো সমীক্ষাত্মক দৃষ্টিতে সমস্ত ব্যাখ্যাকারগণের ব্যাখ্যা বিচারের সহিত  পরিচিত হয়ে সত্যাসত্য নির্ণয় করতে যেনো সক্ষম হয় ‌।"  এহেন মহত্ত্বপূর্ণ কার্যের দরুন শাস্ত্রী জী  বৈদিক জগতে সদা অমর থাকবেন ।


কীর্তিশেশ পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জীর একটি অন্য মহত্ত্বপূর্ণ রচনা ‘মহর্ষি-দয়ানন্দ-বেদার্থপ্রকাশ’ , এই গ্রন্থে মহর্ষি দয়ানন্দ জীর বেদভাষ্য থেকে শুরু করে তাঁর প্রণীত সমস্ত গ্রন্থে ব্যাখ্যাত বেদমন্ত্র বিষয়ানুসারে সংগ্রহ করা হয়েছে । এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ ১৯৮০ সনে প্রকাশিত হয় । 


পণ্ডিত রাজবীর শাস্ত্রী জী অনেক বর্ষ পর্যন্ত 'দয়ানন্দ-সন্দেশ' এর সম্পাদক ছিলেন । তাঁর সম্পাদনায়  এই পত্রিকায় অনেক মহত্ত্বপূর্ণ বিশেষাঙ্ক বিভিন্ন প্রকাশিত হয়েছে । ‘‘জীবাত্ম-জ্যোতি বিশেষাঙ্ক” (জানুয়ারি-মে সংখ্যা ; ১৯৮১ সন‌) , ‘‘বৈদিক মনোবিজ্ঞান বিশেষাঙ্ক” (ফ্রেব্রুয়ারি-এপ্রিল সংখ্যা ; ১৯৭৮ সন) এবং ‘‘বিষয়-সূচী বিশেষাঙ্ক” (মে-জুন সংখ্যা ; ১৯৭৭ সন )  এই তিন বিশেষাঙ্ক  অতি মহত্ত্বপূর্ণ গ্রন্থ । 

"দয়ানন্দ-সন্দেশ" এর অন্য বিশেষাঙ্কের মধ্যে ‘বেদ বিশেষাঙ্ক’ [৩টি ভাগ‌] (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যা ; ১৯৯৬ সন‌, আগস্ট সংখ্যা ; ১৯৯৮ সন এবং আগস্ট সংখ্যা ; ২০০৮ সন ) "বেদ ঔর মহর্ষি দয়ানন্দ" (মে‌ সংখ্যা ; ১৯৭৮ সন)," যথার্থ বেদান্ত" (নভেম্বর সংখ্যা ; ১৯৭৭ সন‌), "বেদোং মেং অনিত্য ইতিহাস নহীং" (অক্টোবর সংখ্যা ; ১৯৭৭ সন) "মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম" ( এপ্রিল সংখ্যা; ১৯৯০ সন), "যোগেশ্বর শ্রী কৃষ্ণ" ( সেপ্টেম্বর সংখ্যা ; ১৯৮৯ সন), "সরল যোগ সে ঈশ্বর সাক্ষাৎকার" [লেখক-স্বামী সত্যপতি পরিব্রাজক] (মে সংখ্যা ; ১৯৯২ সন), "আর্য মান্যতা" (এপ্রিল সংখ্যা ; ১৯৯৪ জন), "সত্যার্থ প্রকাশ সমীক্ষা বিশেষাঙ্ক" [সমীক্ষক ডা. রামনাথ বেদালঙ্কার] (অক্টোবর সংখ্যা ; ১৯৯৫ সন), "সত্যার্থ প্রকাশ বিশেষাঙ্ক" (নভেম্বর সংখ্যা ; ২০০২ সন), "সত্যার্থ প্রকাশ বিশেষাঙ্ক" [কবিবর শ্রী প্রকাশবীর ব্যাকুল জীর সত্যার্থ প্রকাশের  প্রথম দশটি সমুল্লাসের কাব্যবদ্ধ রচনা] (নভেম্বর সংখ্যা ; ১৯৮৭ সন), "সংস্কার ভাস্কর বিশেষাঙ্ক" (নভেম্বর সংখ্যা ; ১৯৯৪ সন ), " মানব-শরীর মেং জীবাত্মা-স্থান অর্থাৎ হৃদয়-মীমাংসা বিশেষাঙ্ক" ( জানুয়ারি সংখ্যা ; ১৯৯১ সন), "গোপাষ্টমী বিশেষাঙ্ক" (নভেম্বর সংখ্যা ; ১৯৯৭ সন ), "পারস্কর গৃহ্যসূত্রম্" [১ম কাণ্ডম্]  (জানুয়ারি সংখ্যা ; ১৯৯৩ সন),  "আর্য ‘মরুত’ গীত বিশেষাঙ্ক" (মে সংখ্যা ; ২০০১ সন), "পণ্ডিত লেখরাম জন্মশতাব্দী বিশেষাঙ্ক' (জুলাই মাস ; ১৯৯৭ সন), "আর্য বলিদান-সংযুক্ত বিশেষাঙ্ক" (অক্টোবর সংখ্যা, ১৯৯৯ সন) এবং "সুখ-দুঃখ মীমাংসা" বিশেষাঙ্ক আদি উল্লেখযোগ্য।  শাস্ত্রী জী 'দয়ানন্দ-সন্দেশ' থেকে "বেদার্থ-সমীক্ষা" এবং "সৃষ্টি সম্বত" বিশেষাঙ্ক‌ও পুস্তকাকারে প্রকাশিত করেছিলেন, যা‌ বৈদিক সাহিত্যে মহত্বপূর্ণ স্থান হয়ে রয়েছে ।  পণ্ডিত জী আর্ষ সাহিত্য প্রচার, দিল্লীতে‌ও অনেক বর্ষ‌ কার্যরত ছিলেন ।

আর্য জগতের এই মহান বিদ্বান্ আজ আমাদের মধ্যে নেই । পরন্তু তাঁর প্রণীত বিশাল বৈদিক সাহিত্যের রচনা তাঁকে সদা অমর‌ রাখবে । 


 



গ্রন্থরাজিঃ


1. সংস্কারবিধি [সম্পাদন] (২০৩৪ বিক্রমাব্দ)


2. ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা [সম্পাদন] (২০৩৭ বিক্রমাব্দ)


3. উপদেশ মঞ্জরী [সম্পাদন] (২০৩৭ বিক্রমাব্দ)


 4. আর্যাভিবিনয় [সম্পাদন] (২০২৩ বিক্রমাব্দ)


5. দয়ানন্দ বৈদিককোষ [বিমর্শ টীকা সহিত] (২০২৩ বিক্রমাব্দ)


6. যজুর্বেদ দেবতার্থ বিষয় সূচী [পণ্ডিত সুদর্শনদেব শাস্ত্রী জী সহলেখনে] (১৯৭২সন)


7. মহর্ষি দয়ানন্দ বেদার্থ প্রকাশ (২০৩৭ বিক্রমাব্দ)


8. উপনিষদ্ ভাষ্য — ঈশ, কেন, কঠ (২০৩৭ বিক্রমাব্দ)


9. যোগ মীমাংসা


10. পাতঞ্জল যোগদর্শন ভাষ্যম্ (২০৩৯ বিক্রমাব্দ)


11. বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি (২০৩৮ বিক্রমাব্দ)


12. ষড়দর্শন পদানুক্রমণিকা (১৯৭৮ সন)


-----বিদুষাং বশংবদঃ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.