ओ३म्
পণ্ডিত বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার
অথর্ববেদ এবং সামবেদের আধ্যাত্মিক ভাষ্যকার
তথা অনেক প্রসিদ্ধ, মহত্ত্বপূর্ণ বৈদিক সাহিত্যের রচয়িতা পণ্ডিতপ্রবর
শ্রদ্ধেয় শ্রী বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার, বিদ্যামার্তণ্ড বৈদিক সাহিত্য তথা
আর্য জগতের উচ্চকোটির মর্মজ্ঞ বিদ্বান্ ছিলেন ।
পূজ্য পণ্ডিত জীর স্বরচিত জীবনী সম্বন্ধে এক হস্তলেখ থেকে জানা যায় যে, তাঁর জন্ম বজীরাবাদ ( গুজরাংবালা-পাকিস্তান ) জেলায় ১৮৮৯
সনে । তাঁর পিতা শ্রী প্রীতমদাস আর্য গুজরাম্বালা আর্যসমাজের প্রধান
ছিলেন । তিনি ( পণ্ডিত জীর পিতা ) তাঁর জীবনকালে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
জীকে দর্শন করেছিলেন ।
আর্যসমাজের সিদ্ধান্তের উপর দৃঢ়তা থাকার দরুণই তিনি তাঁর পুত্রকে গুরুকূলে প্রবিষ্ট করান ।
তাঁর বিদ্যাধ্যয়ন গুরুকূল কাঁগড়ী বিশ্ববিদ্যালয়, হরিদ্বারে গঙ্গাপারের তপঃস্থলীতে সম্পন্ন হয় । সেখানে তিনি
প্রসিদ্ধ বিদ্বান্ মহাত্মা মুন্শীরাম (স্বামী শ্রদ্ধানন্দ সরস্বতী ) জীর
সান্নিধ্যে কঠোর অধ্যাবসায় দ্বারা বিবিধ বিদ্যা পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত
করেন ।
গুরুকূল
কাঁগড়ীর সর্বপ্রথম স্নাতক ছিলেন পণ্ডিত ইন্দ্র বিদ্যাবাচস্পতি তথা তাঁর
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পণ্ডিত হরিশ্চন্দ্র বিদ্যালঙ্কার । উভয়ই ছিলেন গুরুকূল
কাঁগড়ীর সংস্থাপক মহাত্মা শ্রদ্ধানন্দ জীর সুপুত্র তথা তাঁরা দুইজনই
১৯১২ সনে কাঁগড়ী থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন । পরের বছর কেউ স্নাতক ছিলেন না
। তৎপশ্চাৎ ১৯১৪ সনে পাঁচ জন স্নাতক সম্পন্ন করেন, তাঁর মধ্যে
পণ্ডিতপ্রবর বিশ্বনাথ জীও ছিলেন । তিনি গুরুকূল কাঁগড়ীর প্রথম সারির
তুখোড় মেধাবী ছাত্র ছিলেন । সমগ্র বেদের পাণ্ডিত্য প্রাপ্ত করার
সাধনায় ব্রতী হয়ে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীকে গুরু মেনে তাঁর বিবিধ গ্রন্থ
তথা তাঁর অমৃতময় বেদভাষ্য থেকে বিবিধ জ্ঞান আয়ত্ত করে দৃঢ় পরিশ্রম
তথা অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ গবেষণা দ্বারা তিনি বেদের ভাষ্য তথা বিবিধ
বৈদিক সাহিত্য প্রণয়ন করেন । সেই সময়ে মহর্ষি দয়ানন্দ
দ্বারা নির্দেশিত বিশুদ্ধ বৈদিক পদ্ধতিতে বেদ তথা সমগ্র আর্ষ
সাহিত্যের শিক্ষা, পঠন-পাঠন বিধির প্রদানকারী কোনো বিদ্বান্ উপলব্ধ ছিলেন
না ।
বেদ
তথা সমগ্র আর্ষ শাস্ত্র অতিরিক্ত পণ্ডিত জী ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং
পাশ্চাত্য দর্শন , রসায়নশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ইংরেজি ভাষা আদির
প্রসিদ্ধ বিদ্বান্ ছিলেন ।
পূজ্য পণ্ডিত জীর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তাঁর ভাষায় ব্যক্ত করছি, যা তিনি স্বয়ং নিজ জীবনী সম্পর্কে কিছু বক্তব্য রেখেছেন ।
""
আমার পিতা বজীরাবাদ, গুজরাম্বালা জেলার ( বর্তমান পাকিস্তান ) নিবাসী ।
তাঁর নাম লালা প্রীতমদাস। তৎকালীন সময়ে সমগ্র দেশব্যাপী আর্যসমাজ দ্বারা
গুরুকূল সম্বন্ধী প্রচার, প্রসার তথা গুরুকূল শিক্ষা পদ্ধতির প্রভাবে
প্রভাবিত তথা অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে প্রবল পক্ষধারী ছিলেন তিনি । প্রসিদ্ধ
বিদ্বান্ পণ্ডিত গুরুদত্ত বিদ্যার্থী আদি বিদ্বানগণের বিদ্বতার প্রেরণায়
পিতাজী মহাত্মা মুন্শীরাম জীর মাধ্যমে আমাকে গুরুকূলে প্রবিষ্ট করান ।
আমার বয়স সেই সময় প্রায়ঃ ৯ বছর ছিলো ।
প্রারম্ভে
বৈদিক পাঠশালা গুজরাম্বালায় আমাকে ভর্তি করানো হয় । উক্ত বৈদিক পাঠশালা
গুরুকূলের প্রারম্ভিক বীজ ছিলো এবং সঞ্চালক ছিলেন মহাত্মা মুন্শীরাম জী ।
শ্রী পণ্ডিত গঙ্গাদত্ত জী ব্যাকরণাচার্য উক্ত বৈদিক পাঠশালার আচার্য
ছিলেন । এই পাঠশালাতে প্রসিদ্ধ ব্রহ্মচারীগণও ছিলেন তথা উচ্চ আয়ুর
বিদ্যার্থীও ছিলেন । কিছুকাল পশ্চাৎ ব্রহ্মচারীদের অন্য বিদ্যার্থীদের
থেকে পৃথক করে গুজরাম্বালার অপর একটি স্থানে রাখা হয় । সেই সময়ে
পণ্ডিত বিষ্ণুমিত্র জী ব্রহ্মচারীগণের আচার্য ছিলেন । সেই সময় থেকে
ব্রহ্মচারী শ্রী আচার্য পণ্ডিত গঙ্গাদত্ত জী তথা পণ্ডিত বিষ্ণুমিত্র জী
সমেত শ্রী মুন্শীরাম জীর অধ্যক্ষতায় গুরুকূল কাঁগড়ীতে পৌঁছাই । ""
"" ১৯১৪
সনে আমি স্নাতক প্রাপ্ত হই এবং প্রায়ঃ ২-৩ মাস পর আমাকে গুরুকূলে
প্রফেসর পদে নিযুক্ত করা হয় । প্রারম্ভে আমাকে দর্শনশাস্ত্র তথা
রসায়নশাস্ত্র পাঠ দানে নিযুক্ত করা হয় । সেই সময়ে গুরুকূলে
বেদ পড়ানোর মতো কোনো বিশেষ প্রবন্ধ ছিলো না । দর্শন পড়ানোর সময়
ন্যায়শাস্ত্রে আমার কোনোরূপ আগ্রহ ছিলো না , এ কারণে মহাত্মা মুন্শীরাম
জী তথা প্রফেসর রামদেব জীর প্রেরণায় আমি বেদ পড়ানোর কার্যে রত হই । আচার্য রামদেব জীর আচার্যত্বকালে আমি প্রায়ঃ ১৫ বর্ষ উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম । পরন্তু কতিপয় বিষয়ে মতভেদ হওয়ার দরুণ আমি ত্যাগপত্র দেই । ""
"" বৈদিক সাহিত্যের লেখনকার্যে ব্রতী হই ১৯৪২ সনের পশ্চাৎ, যখন আমি গুরুকূল সেবা থেকে মুক্ত হই । সর্বপ্রথম আমি ‘বৈদিক গৃহস্থাশ্রম’ পুস্তক প্রণয়ন করি । রাজাধিরাজ উমেদসিংহ জীর রাজ্যারোহণকালে আমাকে রাজাধিরাজ জী আমন্ত্রিত করেন এবং রাজসূয় পদ্ধতি অনুসারে রাজসূয় যজ্ঞ করান এবং
‘বৈদিক গৃহস্থাশ্রম’ পুস্তক প্রকাশনার্থে তিনি আমাকে তিন হজার রুপি
প্রণামী দেন । এই সহযোগিতা দ্বারা দেহরাদূন হতে ১৯৪৭ সনে পুস্তকরূপে
প্রকাশিত হয় । "
"" পাঞ্জাব বিভাজনের পশ্চাৎ লাহোর থেকে দেহরাদূন-এ চলে আসি । ১৯৭৩ সন পর্যন্ত
আমি কোনো প্রকার সাহিত্য-গ্রন্থ প্রণয়ন করি না, কেননা সাহিত্য-গ্রন্থ
প্রকাশনার্থের পর্যাপ্ত টাকা আমার নিকট ছিলো না । ১৯২৩-২৪ সনে
অজমের-এ অবস্থান করে পরোপকারিণী সভার তত্ত্বাবধানে আমি ঋগ্বেদের সংশোধিত
মূলপাঠ তৈরি করি এবং মথুরা-শতাব্দীর নিমিত্তে মহর্ষি দয়ানন্দ জীর
পুস্তকসমূহ'র দুটি সংস্কৃত সংস্করণ তৈরি করে পরোপকারিণী সভার নিকট
হস্তান্তর করি, পরোপকারিণী সভা থেকে মথুরা–শতাব্দীতে পুস্তক রূপে প্রকাশিত
করা হয় ।""
" ১৯৫৬-৫৭
সনে আমি প্রায়ঃ দুই বছর সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভা বাটিকাতে
অনুসন্ধান কার্যে রত থাকি । ‘বৈদিক অনুসন্ধান’ ত্রৈমাসিক পত্রিকার প্রকাশন
তথা মহর্ষির ঋগ্বেদভাষ্য সুগম সংস্করণরূপে প্রায়ঃ এক হজার মন্ত্রের ভাষ্য
পরোপকারিণী সভার নিকট হস্তান্তর করি ।
১৯৭৩ সনে রায়সাহেব শ্রী প্রতাপসিংহ জী চৌধুরী করনাল দ্বারা আর্থিক সহায়তায় সামবেদের
আধ্যাত্মিক ভাষ্য, অথর্ববেদ-পরিচয়, যজুর্বেদ-স্বাধ্যায় তথা
পশুযজ্ঞ-সমীক্ষা গ্রন্থ পুস্তকরূপে প্রকাশিত হয় । অথর্ববেদ ভাষ্যের চারটি
খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে, পঞ্চম খণ্ড চলমান । ‘শতপথব্রাহ্মণ ঔর
অগ্নিচয়ন-সমীক্ষা’ গ্রন্থ ছাপানো হচ্ছে । এবং প্রত্যেক বর্ষ একটি করে
গ্রন্থ প্রণয়ন করে প্রকাশনার্থের নিকট হস্তান্তর করি । এই সমস্ত কিছু
রায়সাহেব শ্রী প্রতাপসিংহ জীর সহায়তায় সম্পন্ন হচ্ছে । অথর্ববেদ এর
অবশিষ্ট কাণ্ডের উপর ভাষ্যকার্য চলমান । লেখন কার্য এখন শনৈঃশনৈঃ গতিতে হচ্ছে । শরীরের অবস্থা অবনতির দিকে ।’’
যখন
পূজ্য পণ্ডিত জী আত্মপরিচয় লিখছিলেন, তখন অথর্ববেদ ভাষ্যের অন্তিম চার
খণ্ডই (অর্থাৎ ১১তম কাণ্ড থেকে ২০ তম কাণ্ড ) প্রকাশিত হয়েছিলো তথা ৫ম
খণ্ড (অর্থাৎ ৯ম এবং ১০ম কাণ্ডের ভাষ্য) চলমান ছিলো । পরন্তু দেহ
ত্যাগের কিছু সময়কাল পূর্বে পূজ্য পণ্ডিত জীর অত্যন্ত দৃঢ় সঙ্কল্প তথা
অধ্যবসায়ের দরুণ অন্তিম খণ্ডের (কাণ্ড ১-৩) সাথে সম্পূর্ণ অথর্ববেদ ভাষ্য
সম্পন্ন করে প্রকাশিত করেন । প্রবল স্বাস্থ্যহানি তথা লেখনকার্যের সময়
পণ্ডিত জী কাঁপা কাঁপা হাতেও অথর্ববেদ ভাষ্য পূর্ণ করেন যা তাঁর বিদ্বতা
তথা অত্যন্ত গভীর সাধনার ফল ।
গুরুকূল কাঁগড়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদ্যালঙ্কার পরীক্ষায় ১৯১৪ সনে পণ্ডিত বিশ্বনাথ জী প্রথম শ্রেণীতে সর্বপ্রথম হন ।
বৈদিক
সাহিত্য, সংস্কৃত সাহিত্য, দর্শনশাস্ত্র এবং রসায়নশাস্ত্রে পৃথক্-পৃথক্
তথা সর্বশাস্ত্রেও প্রথম অবস্থান করার কারণে পণ্ডিত জীকে শ্রেষ্ঠ চারটি
সুবর্ণপদক এবং বিবিধ রজতপদকে ভূষিত করা হয় । ১৯১৪ সনেই গুরুকূল কাঁগড়ী
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাধ্যায় পদে নিযুক্ত হয়ে নিরন্তর ২৮ বর্ষ সফল অধ্যাপনা
করেন ।
১৯৪২ সনের মার্চ মাসে উক্ত পদ থেকে সেবানিবৃত হন ।
পদে নিযুক্ত থাকাকালীন তাঁর কার্য কেবল শিক্ষা প্রদানই ছিলো না, বরং
উপাচার্য হওয়ার দরুণ ছাত্রদের বিবিধ ব্রতপালন তথা চতুর্মুখী বিকাসেরও
উত্তরদায়িত্বে ছিলেন তিনি । সময়-সময়ে তিনি ছাত্রদের সাহিত্য সঞ্জীবনী আদি
সভাতে বিবিধ বিষয়ের উপর ভাষণ দিয়েও এসবের জ্ঞানবর্দ্ধন করেছিলেন ।
বিদেশ
থেকে যেসব ছাত্র বা বিদ্বান্ তার নিজের জ্ঞানবর্ধনার্থ গুরুকূলে
এসেছিলেন , তাদেরও বৈদিক সংস্কৃতির বিষয়ে মার্গদর্শন করাতেন তিনি তথা তারা
গুরুকূল থেকে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতো ।
বৈদিক বিষয়সমূহের উপর বিভিন্ন প্রসিদ্ধ গ্রন্থলেখন পণ্ডিত বিশ্বনাথ জী গুরুকূলে অবস্থানকালীনই আরম্ভ করেছিলেন, যদিও বিবিধ বিষয়ের উপর আরও অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সেবানিবৃত্তির পশ্চাতে লিখেন ।
গুরুকূলে
অধ্যাপক পদে থাকাকালীন তিনি বৈদিক পশুযজ্ঞ মীমাংসা, বৈদিক জীবন তথা
সন্ধ্যা-রহস্য নামক মহত্ত্বপূর্ণ পুস্তক প্রণয়ন করেন । এসব
পুস্তকের মধ্যে প্রথম পুস্তকে তিনি অনেক বৈদিক প্রমাণ তথা মহাভারত, রামায়ণ
আদি আর্ষ গ্রন্থ থেকে বহুল প্রমাণের আধারে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সিদ্ধ করেন
যে, যজ্ঞে পশুহিংসা বেদানুমোদিত কদাপি নয়, সর্বথা সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ
।
দ্বিতীয় পুস্তকে বেদমন্ত্র দ্বারা বৈদিক জীবনের নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করেন । এই পুস্তক মথুরা-শতাব্দীতে প্রকাশিত হয় ।
তৃতীয়
পুস্তকে ভূমিকা সহিত সন্ধ্যার মন্ত্রসমূহের মহত্ত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা করেছেন ,
এই পুস্তকের একটি বিশেষতা হলো ব্যাখ্যায় জ্যোতির্বিদ্যার বিস্তৃত
প্রয়োগও করেছেন । সেবানিবৃত্তির উপরান্ত তিনি যেসব গ্রন্থ প্রণয়ন
করেছেন, তার মধ্যে সামবেদ এবং অথর্ববেদ এই দুই বেদের ভাষ্য অত্যন্ত
মহত্ত্বপূর্ণ তথা অমৃতময় কার্য ।
পণ্ডিত
জীর সামবেদভাষ্য অধ্যাত্মপরক তথা এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্বান্ কৃত
হিন্দীতে সামবেদের যতো অনুবাদ এবং ভাষ্য প্রণয়ন হয়েছে, তার মধ্যে
পণ্ডিত জীর ভাষ্য অতীব পাণ্ডিত্যপূর্ণ ।
পণ্ডিত
জী অথর্ববেদ ভাষ্য উল্টা ক্রমে আরম্ভ করেন । সর্বপ্রথম ২০তম কাণ্ডের
ভাষ্য করেন, তদনন্তর ১৯, ১৮,১৭ আদি কাণ্ডের ভাষ্য ক্রমানুসারে করতে থাকেন
।
পণ্ডিত
জী উল্টা ক্রমে ভাষ্য করেন এই কারণে যে, প্রতীত হয় অন্তিম কাণ্ডে
রহস্যময় বর্ণন অধিকতম বিদ্যমান, যথা: ২০ তম কাণ্ডের কুন্তাপ সূক্ত,
১৯তম কাণ্ডের মণিবন্ধন সূক্ত, ১৮তম কাণ্ডের পিতৃমেধ-সূক্ত এবং ১৫তম
কাণ্ডের ব্রাত্য-সূক্ত। ১৪তম কাণ্ডের দুইটি বিবাহ-সূক্ত , এসব সূক্তের উপর
পণ্ডিত জী বিশেষ মনন-মন্থন করেছেন এবং রহস্যময়, জটিল তত্ত্ব সমূহ তথা
বিবাদাস্পদ সূক্ত সমূহের অত্যন্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষ্য পাঠকগণকে প্রদান
করে তাদের ইন্দ্রিয়তে অন্যরকম অনুভূতির প্রলোভন হেতু উল্টো ক্রমে
ভাষ্য করার বিশেষ প্রেরক নির্দেশ করেছেন ।
পণ্ডিত
জী তাঁর অথর্ববেদ ভাষ্যে জ্যোতির্বিদ্য , নিরুক্ত, গণিত, ভৌতিক বিজ্ঞান,
দর্শনশাস্ত্র আদি শাস্ত্রের গভীর বিস্তৃত জ্ঞানের প্রয়োগ করেছেন,
ভাষ্যশৈলী অত্যন্ত সুবোধ ।
পণ্ডিত জী এক প্রৌঢ় গ্রন্থ ‘শতপথব্রাহ্মণস্থ অগ্নিচয়নসমীক্ষা’ নামে প্রণয়ন করেছেন । এই পুস্তকে শতপথের জটিল অগ্নিচয়ন-প্রকরণের বিস্তৃত মীমাংসা করা হয়েছে ।
আরেকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘যজুর্বেদ স্বাধ্যায় তথা পশুযজ্ঞ-সমীক্ষা’ । এই পুস্তকে তাঁর যজুর্বেদের সূক্ষ্ম তথা গহীন অধ্যয়নে পরিচয় পাওয়া যায় ।
তাঁর
কতিপয় অন্য পুস্তক বৈদিক গৃহস্থাশ্রম, বাল সত্যার্থপ্রকাশ,
ঋগ্বেদাদিভূমিকা কা সরল অধ্যয়ন, ঋগ্বেদ-পরিচয়, অথর্ববেদ-পরিচয় তথা বীর
মাতা কা উপদেশ ।
তাঁর
প্রগাঢ় বৈদিক বৈদুষ্য তথা অমর সাহিত্য সাধনার কারণে পূজ্য পণ্ডিত জী কে
অনেক খ্যাতিমান সংস্থা বিবিধ উচ্চ পুরস্কারে সম্মানিত তথা পুরস্কৃত করে
সেই সংস্থাগুলো স্বয়ংকে সৌভাগ্যশালী মেনেছে। পণ্ডিত জীর মাতৃ-সংস্থা গুরুকূল কাঁগড়ী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সর্বোচ্চ পূজ্যপাধি ‘বিদ্যামার্তণ্ড’ উপাধিতে ভূষিত করেছে ।
আর্যসমাজ সান্তাক্রুজ মুম্বাই ১৯৮৭ সনে পণ্ডিত বিশ্বনাথ জীকে ২১ সহস্র রুপির রাশি, রজত-পদক, উত্তরীয় এবং প্রশস্তিপত্র অর্পিত করে তাঁকে বেদবেদাঙ্গ-পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে । এর অতিরিক্ত ১৯৭৯ সনে গঙ্গাপ্রসাদ উপাধ্যায় পুরস্কার তথা ১৯৮৩ সনে পণ্ডিত গোবর্ধনশাস্ত্রী সাহিত্য পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়েছে তাকে ।
উত্তরপ্রদেশ সংস্কৃত একাডেমীও পণ্ডিত জীর অমৃতময় কার্য অথর্ববেদ ভাষ্য আদি সাহিত্যকে পুরস্কৃত করেছে । পণ্ডিত
জীর কী আয়ু শত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর আর্য প্রতিনিধি সভা পাঞ্জাবের পক্ষ
থেকে প্রতিনিধি সভা প্রধান শ্রী বীরেন্দ্র জী কন্যা গুরুকূল দেহরাদূনে এক
বিশাল আয়োজন করে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিলো ।
এই প্রকারে উত্তরপ্রদেশে
আর্য প্রতিনিধি সভার মন্ত্রী শ্রী ধর্মেন্দ্রসিংহ আর্য দ্বারা গঠিত
সমিতির পক্ষ থেকেও পণ্ডিত জীকে অতি উচ্চ সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে ।
আদরণীয় পণ্ডিত জীর অনেক প্রসিদ্ধ সাহিত্যের প্রকাশন
করেছেন রায়সাহেব স্ব. চৌধরী প্রতাপসিংহ জী, রামলাল কাপুর ট্রাস্ট বহালগঢ়
তথা আর্য জগতের শ্রেষ্ঠ বিদ্বান মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জী
মীমাংসক ।
রায়সাহেব
দ্বারা আর্থিক সহায়তা যদি পণ্ডিত জী প্রাপ্ত না হতেন তাহলে তিনি
প্রকাশনে সন্দিগ্ধ হওয়ার দরুণ তিনি গ্রন্থ লেখন কার্যেও প্রবৃত্ত হতেন না
।
রামলাল কাপুর ট্রাস্ট তথা পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জী মীমাংসক পণ্ডিত জীর অমৃত গ্রন্থসমূহ প্রকাশনে পূর্ণ সহায়তা করেছেন ।
রায়সাহেব দেহ ত্যাগের পর সমস্যা হয়েছিলো যে, অথর্ববেদের অন্তিম ছয়টি কাণ্ড কিভাবে প্রকাশিত হবে ।
কিন্তু অর্থাভাব হওয়ার পরেও মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক জীর প্রেরণায় উক্ত ট্রাস্ট অন্তিম ছয়টি কাণ্ডের প্রকাশনের ভার বহন করে ।
পণ্ডিত বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার জীর জীবন অত্যন্ত তপস্যাময় ছিলো । তাঁর স্বভাব অতি সরল ছিলো ।
আগন্তুকের আগমনে তিনি আনন্দিত হতেন । অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায়ও বিভিন্ন পত্রের উত্তর দিতেন ।
গুরুকূল কাঁগড়ীর প্রায়ঃ সমস্ত পুরানো স্নাতক তাঁর শিষ্য ছিলেন । শিষ্যগণের উন্নতি দেখে তিনি সদা প্রসন্ন হতেন তথা তিনি বিবিধ কার্যে উৎসাহিত করতেন
পণ্ডিত জী দীর্ঘায়ু ছিলেন ।
তাঁর জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত তিনি বিবিধ প্রসিদ্ধ লেখন-কার্যে রত ছিলেন । ১৯৯১ সনের ১১ মার্চ ১০২ বর্ষ আয়ুতে এই মহান বৈদিক বিদ্বান দেহত্যাগ করেন ।
তাঁর শবযাত্রায় দেহরাদূন তথা গুরুকূল কাঁগড়ী, হরিদ্বারে অনেক গণমান্য ব্যক্তি সম্মিলিত হয়েছিলেন ।
পণ্ডিত জীর ধর্মপত্নী শ্রীমতী কুন্তী দেবীর জন্ম ১৮৯৮ সনে ক্বেটা'র এক আর্যসমাজী পরিবারে ।
তিনি জালন্ধর প্রদেশের কন্যা মহাবিদ্যালয় প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন । পণ্ডিত জীর সমস্ত কার্যে সর্বদা তিনি সহযোগী ছিলেন । পণ্ডিত জীর দেহাবসানের সময়ে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ ছিলেন ।
১৯৯২ সনের ১৫ এপ্রিল ৯৪ বর্ষ আয়ুতে তিনি দেহত্যাগ করেন ।
পণ্ডিত জীর চার পুত্র এবং তিন কন্যা । চার পুত্র ক্রমশঃ ডা. প্রেমনাথ, শ্রী রাজেন্দ্রনাথ, শ্রী সোমনাথ তথা শ্রী রবীন্দ্রনাথ ।
তিন কন্যা ক্রমশঃ শ্রীমতী কমলা ডবরাল, শ্রীমতী বিমলা বহল এবং শ্রীমতী ইন্দিরা খন্না।
ডা.
প্রেমনাথ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় চণ্ডীগঢ়ে দর্শন বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন ,
উনি ১৯৭৫ সনে দেহত্যাগ করেন । শ্রী রবীন্দ্রনাথ খন্না বিএসএফ-এ ( BSF)
ডিপুটি কমাণ্ডার ছিলেন । তিনিও দেহত্যাগ করেছেন ।
বর্তমানে পণ্ডিত জীর দুইজন পুত্র এবং তিন কন্যা জীবিত আছেন ।
পণ্ডিত বিশ্বনাথ জী তাঁর ধর্মপত্নীর সহিত তাঁর কনিষ্ঠ বোন শ্রীমতী ইন্দিরা খন্না'কে নিয়ে কাম্বলী রোড, ৬১, দেহরাদূনে থাকেন ।
পণ্ডিত. বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার জী যেসব অমূল্য, অমৃত বৈদিক সাহিত্য রচনা করেছেন, তার জন্য তিনি সদা অমর থাকবেন ।
লেখন কার্য –
1. সামবেদ ( আধ্যাত্মিক ভাষ্য )
2. সন্ধ্যারহস্য ( ১৯৩৭ সন )
3. বৈদিক পশুযজ্ঞ মীমাংসা
4. বৈদিক জীবন
5. বৈদিক গৃহস্থাশ্রম
6.. বাল সত্যার্থ প্রকাশ
7. ঋগ্বেদ ভাষ্যভূমিকা কা সরল অধ্যয়ন
8. অথর্ববেদ পরিচয়
9. অথর্ববেদ ভাষ্য ( ৫ খণ্ডে সম্পূর্ণ )
10. যজুর্বেদস্বাধ্যায় তথা পশুযজ্ঞসমীক্ষা
11. শতপথব্রাহ্মণস্থ অগ্নিচয়নসমীক্ষা
12. ঋগ্বেদ পরিচয়
13. বীর মাতা কা উপদেশ
14. আত্মিক জীবন ( ১৯২৫ সন )