🕉️ নেপালের রক্তঋণ -আর্যবীর পণ্ডিত শ্রী শুক্ররাজ শাস্ত্রীর বলিদান
লেখকঃ- শ্রদ্ধেয় স্বামী ওমানন্দ সরস্বতী
সন্দর্ভ পুস্তকঃ- আর্যসমাজের বলিদান
✅ ভূমিকা
নেপাল রাজ্য - আর্যরাজ্য হওয়ার পরেও সুদীর্ঘকাল এ ভূমি পৌরাণিক পাখণ্ডিদের মায়াজালে আবদ্ধ ছিল। একারণে এমনকি বর্তমান সময়েও বিজয়া দশমীর মতো পবিত্র বৈদিক পর্বদিবসে সহস্র সহস্র মূক, নিরপরাধ ছাগল-মহিষ প্রভৃতি প্রাণীদেরকে পাথর-নির্মিত বালকল্পিত, মিথ্যা দেবী-দেবতার কাছে বলি হিসেবে উৎসর্গ করা হয়। উপাসনার উদ্দেশ্যে নির্মিত পবিত্র মন্দিরগুলোতে এই বামমার্গীয় উলঙ্গ বিভৎস নৃত্য দ্বারা ভগবানের পূজার নামে রক্তের নদী বইতে থাকে। এরূপ ঘোর অত্যাচার আর্যসমাজের জন্য সর্বদাই অসহ্য হওয়ায় আর্যসমাজের বীরগণ এইরূপ দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে নেপালেও প্রতিবাদী দল প্রস্তুত করা শুরু করে। সেসময় এই নেপালে জন্ম নেয়া নাথ সম্প্রদায়ের এক সন্ত স্বামী শ্রী ব্রহ্মনাথজী আর্যসমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি ভ্রমণার্থে ও তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্য প্রায়ই ভারতবর্ষে আসা-যাওয়া করতেন। তিনি আর্যসমাজের সত্য, পবিত্র সিদ্ধান্তসমূহের প্রবচন শুনে প্রবলভাবে প্রভাবিত হন ও আর্যসমাজী হয়ে যান। তিনি নেপালী ভাষায় সত্যার্থ প্রকাশও অনুবাদ করে ছাপান কিন্তু নেপাল রাজ্যে এই পবিত্র গ্রন্থেরও প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। কতটা অসহায় পরিবেশ ছিল তখন!
তাই তিনি তখন নেপাল রাজ্যের সীমানায় অবস্থিত তুলশীপুর আর্যসমাজে সকল সত্যার্থ প্রকাশের কপি রেখে দেন এবং সেখান থেকে গুপ্তরূপে নেপাল রাজ্যে সত্যার্থ প্রকাশ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন। এই তপস্বী সাধু অনুপ্রেরণা দিয়ে অনেক বিদ্যার্থীকে ভারতবর্ষের গুরুকুলগুলোতে শিক্ষার জন্য পাঠাতে থাকেন। এই বিদ্যার্থীদের স্রোতে প০ শ্রী শুক্ররাজ শাস্ত্রী, প০ শ্রী রায়সিংহ তথা প০ শ্রী ইন্দ্রসেন প্রভৃতি ছিলেন যারা গুরুকুলে স্নাতক হয়ে নেপালে প্রচারের কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের কী কী কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল তার বাস্তবিক ইতিহাস প০ শ্রী শুক্রবীর শাস্ত্রীর বৃত্তান্ত পড়ার মাধ্যমে সকলে জানতে পারবেন।
✅ প০ শ্রী শুক্ররাজ জীর জন্মপরিচয়
প্রসিদ্ধ আর্যবীর, অমর হুতাত্মা প০ শ্রী শুক্ররাজ জী শাস্ত্রীর জন্ম হয়েছিল আর্যরাজ্য নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর এক ব্রাহ্মণ পরিবারে, নেপাল রাজ্যের রাজ জ্যোতিষী শ্রী প০ মাধবরাও জোশীর ঘরে। কাশীতে শ্রী যোশীজীর সাথে মহর্ষি দয়ানন্দের সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং সেখানেই তিনি মহর্ষির প্রবচন শোনেন। তিনি আর্যসমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নেপাল পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে সর্বপ্রথম দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে প্রথমে নিজের সন্তানদেরকে আর্যসমাজী হিসেবে প্রস্তুত করে আর্যসমাজের জন্য উৎসর্গ করবেন।
একদিকে প০ মাধবরাও জী নেপালে আর্যসমাজের প্রচার আরম্ভ করেন অন্যদিকে তিনি তাঁর দুই পূত্রকেই গুরুকুল সিকন্দরাবাদ জিলা বুলন্দ শহরে শিক্ষার্থে ভর্তি করান। তার্কিক শিরোমণি, শাস্ত্রার্থ মহারথী, বীতরাগ মহাত্মা, স্বামী দর্শনানন্দ জী এই গুরুকুল খুলেছিলেন। এই নিঃশুল্ক গুরুকুলে স্নাতক হয়ে নেপালে প্রচারার্থে যাওয়ার পূর্বে সবাইকে লাহোর থেকে পাঞ্জাবের শাস্ত্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এরপর তাঁরা নেপাল গিয়ে ঝড়বেগে তাদের নিজনিজ প্রচারকার্যে আত্মনিয়োগ করতেন, এ ঝড়ে পুরাণী, কিরাণী প্রভৃতি পাখণ্ডিরা কীভাবে টিকে থাকবে? এসব স্নাতকের অন্যতম প০ শ্রী শুক্ররাজ জী শাস্ত্রী ছিলেন ধুরন্ধর বিদ্বান ছিলেন। তিনি মূর্তিপূজা, মৃতকশ্রাদ্ধ এবং অবতারবাদের খণ্ডন করতেন কিন্তু নেপালের রাণাগণের রাজ্যে এসব অধর্মের বিরুদ্ধে বলা ঘোর অপরাধ ছিল, এসব জায়গায় এসব অধর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখই খুলতে পারত না। [প্রকৃতপক্ষে, এসব রাণারা ছিল অধর্মের-কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অহংকারী, স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরাচারী, ইংরেজদের টাট্টুঘোড়া]
হে বানী! থাকো যদি চুপ তুমি, উড়ে যাবে শির।
করো যদি প্রতিবাদ, বলবে লোকে বীর॥
এমন পরিস্থিতিতে এই বীর বিদ্বানেরা পাষণ্ডদের ক্রর দৃষ্টি থেকে কীভাবে বাঁচত? কিন্তু আমাদের এও মনে রাখতে হবে, বৈদিক ধর্মের এই প্রকৃত বীরেরা কাউকে ভয় করে চলে না। এই নির্ভীকতার সংস্কার তিনি পেয়েছিলেন তাঁর পিতার নির্ভীকতা থেকে, যার কিছু দৃষ্টান্ত আমরা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে উল্লেখ করছি।
✅ ধর্মের জন্য নিবেদিত পিতার ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংগ্রামের সংস্কার
প্রকৃতপক্ষে নেপালে আর্যসমাজের প্রচার নেপালকেশরী বীরশিরোমণি প০ মাধবরাও জোশীর পরিবারের সাথে মূখ্যরূপে জড়িত। শ্রী প০ শুক্ররাজ শাস্ত্রীর পিতা শ্রী মাধবরাও জোশীর জন্ম হয়েছিল নেপালের প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী শ্রীকণ্ঠরাজ জোশীর ঘরে। ধার্মিক পরিবার হওয়ার কারণে জোশীজী নিজের ঘরেই পৌরাণিক সম্প্রদায়ের শিক্ষাদীক্ষা সহজেই লাভ করেন। শিক্ষা লাভের শেষে তিনিও অন্য পৌরাণিকদের মতো বামমার্গের সাধনার শিক্ষা, মাংস-মদের খোলাখুলিভাবে ব্যবহার ও ভক্ষণ ইত্যাদির প্রচার করতে থাকেন। এরপরও তাঁর আত্মায় কিছু পুরোনো সংস্কার ছিল, সেখানের সন্ত, মোহন্ত এবং পূজারিদের পতিত পাখণ্ডপূর্ণ জীবন তাঁর ভালো মনে হয়নি। তাদের কলুষতার কালিমা দেখে তাঁর মনে ঘৃণা উৎপন্ন হওয়া শুরু হয় এবং প্রকৃত-ধর্মজিজ্ঞাসা তাঁর হৃদয়মন্দিরে উৎপন্ন হতে থাকে। মাধবরাওজী প্রখর বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন, মোক্ষম মূহুর্তে তিনি ঘড় ছেড়ে পালান। মাতা পিতার আজ্ঞা না নিয়েই তিনি জগন্নাথ ধাম, পুরীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি পায়ে হেটেই পাটনা পৌঁছান এবং সেখান থেকে রেলগাড়ীতে চড়ে পুরী পৌঁছান। সেখানেও তিনি ধর্মের নামে ভণ্ডামির সম্মুখীন হন। পুরী থেকে প্রস্থান করে তিনি ধর্মনগরী কাশীতে পৌঁছান। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানেও পাখণ্ডি তিলকধারী পাণ্ডাদের দুষ্কর্ম দেখে নিরাশ হন। সেসময় সারা দেশেই স্বামী শ্রী দয়ানন্দ মহারাজের বড্ড চর্চা হচ্ছিল। সেই কাশীতেই মহর্ষি দয়ানন্দের পবিত্র দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল মাধবরাওজীর। মহর্ষি দয়ানন্দের ভাষণসমূহ শুনে তিনি এতই প্রভাবিত হন যে তাঁর জীবনঘড়ির কাটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। সেসময়েই তিনি বাস্তবিক বৈদিকধর্মী হয়ে যান। তিনি স্বামীজীর পবিত্র দর্শন ও উপদেশসমূহ শুনে বিশেষ উৎসাহের সাথে নিজের দেশ নেপালে পুনরায় ফিরে আসেন।
শ্রী মাধবরাওজী মহর্ষির থেকে শঙ্কা সমাধানের জন্য অনেক প্রশ্ন করেন। জাতি, বর্ণব্যবস্থা, ঈশ্বর নিরাকার না সাকার, পরমেশ্বর প্রাপ্তির উপায়, যম, নিয়ম, যোগসাধন তথা শাস্ত্রের বিরোধ প্রভৃতি বিষয় জিজ্ঞাসা করে তাঁর শঙ্কা সমাধান করেন এবং এ সমাধানে সন্তুষ্ট হয়ে ঋষিরভক্ত হিসেবে পুনরায় নেপাল পৌছান। জোশীজী নেপালের রাজ-পুরোহিত ছিলেন, তাঁর সেখানে বড় সম্মান ছিল। তিনি রাজকুমারদের শিক্ষা দেয়ার কাজে নিজের অধিক সময় ব্যয় করতেন। তিনি স্পষ্টভাষী ও প্রখর উপস্থিত বুদ্ধির ব্যক্তি হওয়ার কারণে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। স্বামী দয়ানন্দের বলিদানের খবর শুনে তিনি বড্ড ধাক্কা খান। এরপর থেকেই ওনার বর্তমান জীবনের প্রতি প্রচুর ঘৃণা ও গ্লানি অনুভূত হতে থাকে এবং তিনি স্বামী দয়ানন্দের দর্শনের দ্বারা পবিত্র হয়ে নিজের জীবন পরিবর্তন করার জন্য বিবশ হয়ে যান। রাজকীয় বিলাসিতা ও সম্মানের প্রতিও তাঁর বৈরাগ্য উৎপন্ন হতে থাকে এবং তিনি নিজের ভাইকে সাথে নিয়ে পুনরায় কাশী চলে যান। কাশী নগরে ওনাদের দুইবছর ধরে স্বাধ্যায় তথা সৎসঙ্গ চলতে থাকে। মাধবরাওজীর সত্যার্থ প্রকাশ পড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেসময় সত্যার্থ প্রকাশ প্রাপ্তি ছিল যেন অমাবস্যার চাঁদ হাতে পাওয়া৷ বহু চেষ্টা করার পরেও উনি কোথাও থেকে সত্যার্থ প্রকাশ জোগাড় করতে পারেননি।
তাঁর সত্যার্থ প্রকাশ পড়ার ইচ্ছা সে সময় পর্যন্ত কেবল স্বপ্নই ছিল। তিনি আবার নেপাল ফিরে গেলেন। একদিন আরেক প্রসিদ্ধ নেপালী জ্যোতিষী জোশীজীকে তাঁর নিজের ঘরে নিমন্ত্রণ করেন। সেখানে তাঁদের মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মেই বার্তালাপ চলছিল কিন্তু হঠাৎ করে জোশীজীর নজর যায় ঘরের এক কোনায় পরে থাকা একটি পুরোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তুপের দিকে। সেখানে তিনি আশ্চর্যের সাথে কয়েকটি পৃষ্টা-ছেঁড়া সত্যার্থ প্রকাশ দেখতে পান। বইটি দেখে তিনি বড় প্রসন্ন হন। বহু প্রতীক্ষার পর তিনি তাঁর কাঙ্খিত বস্তু খুঁজে পেলেন। তিনি বইটি দেখেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়েন এবং বইটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। শ্রদ্ধাপূর্বক সম্পূর্ণ সত্যার্থ প্রকাশ স্বাধ্যায় করার পর বৈদিক সিদ্ধান্তসমূহের যথাযথ জ্ঞান হওয়ায় বৈদিক সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা আরো অধিক বৃদ্ধি পায় এবং সকল শঙ্কা পূর্ণরূপে সমাপ্ত হয়। এরপর থেকেই তিনি কোন পরিণামের চিন্তা না করে আর্যসমাজের প্রচারে পূর্ণরূপে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
“যে বলে বৈদিক ধর্মের জয়, সেই হয় অভয়”- এই নির্ভীক জয়ধ্বনি ঋষি দয়ানন্দ ও আর্যসমাজের দান। যিনিই আর্যসমাজের ছত্রছায়ায় আসেন তিনিই নির্ভয়তার অমৃতপান করেন। মাধবরাওজীও নির্ভীক হয়ে সমগ্র নেপালে আর্যসমাজের প্রচারের দুন্দুভী বাজান। ফলশ্রুতিতে নেপালের সর্বত্র আর্যসমাজের চর্চা হতে থাকে। এদিকে আর্যসমাজের বিরোধীরাও সত্য না মেনে নিয়ে জোশীজীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর নামে কানভাঙানি দেয়া শুরু করে। বিরোধীদের এই অভিযোগসমূহের কারণে জোশীজীকে রাজদরবারে ডাকানো হয়। সেসময় সরকার দেব শমশের জঙ্গবাহাদুর রাণাজী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জোশীজীর বাল্যমিত্র ছিলেন। বাল্যকালের সখা হওয়ার কারণে অনেক বর্ষ তারা একসাথে খেলাধুলা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রেমপূর্বক বললেন, “মাধব! তুমি আর্যসমাজের এই গঙ্গায় ডুব দিয়ো না। যদি আমার কথা না মানো তবে এতে তলিয়ে যাবে। অতএব তুমি নিজে এ থেকে বাঁচো, অন্যকেও বাঁচাও।” উত্তরে যোশীজী বলেন, “হে দেব! এই অমৃতময়ী গঙ্গায় ডুব দিলে এর যে অমৃতপূর্ণ জলবিন্দু মুখ দিয়ে পেটে প্রবেশ করে তা আমার কাছে সুমিষ্ট ও মধুর মনে হয়। শ্রীমান্ দেব তূল্য, শ্রী মহারাজও স্বয়ং এই অমৃত পান করে আনন্দিত হবেন তথা প্রজাদেরও অমৃতপান করিয়ে পূণ্যভাগী হবেন।” শ্রী মহারাজ জোশীজীর বচন শুনে ওনার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ থেকে ওনাকে মুক্ত করে দেন। সেবার মহারাজের প্রেম এবং উদারতার কারণে জোশীজী বেঁচে যান। বিরোধীদের ষড়যন্ত্র সেইবার সফল হয়নি। কিন্তু মহারাজ চন্দ্র শমশের রাণাজীর শাসনকালে বিরোধীরা পুনরায় ষড়যন্ত্র করার সুঅবসর পান।
✅ তিরস্কার
একবার শাস্ত্রার্থের বাহানায় জোশীজীকে দরবারে ডেকে খুব মারপিট করা হয়, এরপর এক ক্ষুদ্র কুঠুরিতে বন্দি করে রাখা হয়৷ অন্য আর্যসমাজীদেরও উপরে ভয়ানক অত্যাচার শুরু হয়। যোশীজীকে মার-পিটের পরে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় সিপাহীদের দ্বারা বেধে পুরো নগরে খুবই জঘন্যভাবে ঘুরানো হয়। নিজের পিতার এই দুর্দশা শুক্ররাজ শাস্ত্রী তাঁর নিজের চোখে বাল্যকালেই দেখেছিলেন। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য বালকের সুকোমল হৃদয়ে এক গভীর ছাপ ফেলে। এসমস্ত দৃশ্য বালক এক দোকানে বসে বসে নিজের চোখেই দেখছিলেন। জোশী পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও একইভাবে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল। এক ধর্মাত্মা ব্যক্তির ধার্মিক পরিবারকে এরূপ বিকট ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে দেখে, এরূপ ভয়ঙ্কর দূর্যোগের মুখোমুখি হয়ে অনেক মহান ধৈর্যশীল ব্যক্তিরও ধৈর্যচ্যুতি হয় কিন্তু জোশীজীর পরিবার এরূপ পরিস্থিতিতেও ভীত হলো না। এসময় যদি যোশীজী ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন তবে তিনি এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারতেন কিন্তু তিনি মহারাজা ভর্তৃহরি বিরচিত ও মহর্ষি দয়ানন্দের প্রিয়বচন নিজের হৃদয়ে খোদাই করে রেখেছিলেন-
নিন্দন্তু নীতিনিপুণা যদি বা স্তুবন্তু,
লক্ষ্মীঃ সমাবিশতু গচ্ছতু বা যথেষ্টম্।
অদ্যৈব বা মরণমস্তু যুগান্তরে বা,
ন্যায়্যাৎপথঃ প্রবিচলন্তি পদং ন ধীরাঃ॥
[ভর্তৃহরি নীতিশতক ৮৫]
অর্থাৎ, নীতিকুশল লোক আমার নিন্দা করুক বা প্রশংসা করুক, আমার ধন-বৈভব অর্জিত হোক বা নষ্ট হোক, আজই মৃত্যু হোক বা দীর্ঘায়ু লাভ হোক - এরূপ সকল দূর্ঘট পরিস্থিতেও ধৈর্যবান ও নীতিজ্ঞ সৎপুরুষ সন্মার্গ থেকে বিচলিত হয়ে কখনো এর প্রতিকূল আচরণ করেন না।
এরূপ আদর্শকে ধারণ করে জোশীজী ক্ষমাভিক্ষা করতে অস্বীকার করলেন। কারাগারে বসেই তিনি খবর পেলেন মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই তাকে পুনরায় খুবই জঘন্যরকম অমমান করা হবে। মুখে কালি মেখে মহিষের পিঠে চড়িয়ে তাঁকে সারা নগরে ঘুরানো হবে এবং তাঁর গলায় একটি বোর্ড ঝোলানো হবে যাতে লেখা থাকবে - “নেপালের জনতার মনে আতঙ্ক উৎপন্ন করা ব্যক্তিকে এই দণ্ড দেয়া হলো।” একথা শুনে তিনি জেল থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং সুযোগ পেয়েই নিজের এক সাথীকে নিয়ে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।
কারাগার থেকে পালিয়ে তিনি তাঁর পরিবারসমেত বীরগঞ্জ থেকে রক্সোল হয়ে গোরখপুর পৌঁছান। তাঁর সাহসী কার্যকলাপের ব্যাপক আলোচনা শুনে বিভিন্ন প্রান্তের আর্যসমাজের সভাসমূহ তাঁকে ভরপুর সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। তাঁর সন্তানদের শিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়। শুক্ররাজজীকেও গুরুকুল সিকন্দারাবাদে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয় এবং সেখান থেকেই তিনি বিদ্বান্ স্নাতক হিসেবে প্রচারকার্যের জন্য বেরিয়ে আসেন।
✅ কার্যক্ষেত্রে প০ শুক্ররাজ শাস্ত্রী
ভারতে বিদ্যাধ্যয়ন সম্পন্ন করে প০ শুক্ররাজ শাস্ত্রী নেপালে গিয়ে সেখানে মহারানা ৩ মহারাজ চন্দ্র শমশেরের সাথে দেখা করেন। রানা জোশীজীর প্রতি করা ব্যবহারের জন্য অনুতাপ করেন তথা শাস্ত্রীজীকে নির্ভীক ও স্বতন্ত্র শাস্ত্রার্থের জন্য আমন্ত্রণ জানান, শাস্ত্রীজীও সহর্ষে সে আমন্ত্রণ স্বীকার করেন। মহারাজের গুরু শ্রী হেমরাজের সাথে তাঁর শাস্ত্রার্থ হয়। শাস্ত্রার্থে শুক্ররাজ শাস্ত্রী মূর্তিপূজার প্রবল খণ্ডন করেন এবং শ্রী হেমরাজকে নিরুত্তর করে দেন। এই খণ্ডন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মহারাণারকেও প্রচণ্ড রাগান্বিত করে কিন্তু নিজের প্রতিজ্ঞানুযায়ী তিনি শাস্ত্রীজীকে বাড়ি ফিরে যেতে দেন।
শাস্ত্রীজীর কাছে সংবাদ আসে যে মহারাণা তাঁর প্রতি অপ্রসন্ন হয়েছেন তাই তিনি একবার পুনরায় ভারতে ফিরে আসেন। মহারাজও বুঝে যান যে এই পরিবারের অস্তিত্ব থাকলে নেপালেও আর্যসমাজের প্রচার বৃদ্ধি পাবে সুতরাং তিনি এই পরিবারকে সমূলে বিনষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহারাজ কিছু অযুহাত দিয়ে পুনরায় নেপালে ডাকেন এবং শাস্ত্রীজীর সাথে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করতে থাকেন। শাস্ত্রীজীও এর মধ্যে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে যান এবং পুনরায় ভারতে ফিরে এসে প্রয়াগে অবস্থান করে অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত হন।
এরই মধ্যে তাঁর কাছে খবর আসে যে তাঁর ভাই এবং তাঁর পত্নী দুজনেই স্বর্গগত হয়েছেন। এতেও তিনি তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে বলেন- “১৪বছর বয়সী এক কন্যার সাথে আমার বিবাহ হয়েছিল, তাঁর সাথে আমার কোন দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। আমি আদিত্য ব্রহ্মচারী, এখন আমি অধিক স্বতন্ত্রতাপূর্বক নেপালে আর্যসমাজ ও সমাজসংস্কারের কাজ করতে পারব। এই পবিত্র কাজের জন্য যদি আমার দেহত্যাগও করার প্রয়োজন হয় তবে তাও আমি সহর্ষে করব।” নেপালে তখন এক নিয়ম ছিল, “যে ব্যক্তি তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের বিয়ে না করাবেন তাকে তার জাতি থেকে বহিস্কার করা হবে।” শাস্ত্রীজীর প্রভাবেই নেপালে এই নিয়মেরও উচ্ছেদ হয়। তাঁর প্রভাবেই ‘ত্রিবেন্দ্র কলেজ’ এও প্রতিষ্ঠিত হয়।
✅ প০ মদনমোহন মালবীয়ের সাথে সাক্ষাৎ
হঠাৎ একদিন শুক্ররাজ শাস্ত্রীর কাছে খবর আসে কোলকাতায় প০ মদনমোহন মালবীয় এসেছেন। শাস্ত্রীজী তাঁর সাথে দেখা করেন এবং তাঁকে নেপালের পরিস্থিতি জানান। মালবীয়জী তাঁর পরিবারের কাজে অত্যন্ত প্রভাবিত হন তথা ভবিষ্যতেও তাঁকে কাজে লেগে থাকার প্রেরণা দেন ও কিছু আর্থিক সহায়তাও করেন। দার্জিলিং পৌঁছে শাস্ত্রীজী তাঁর প্রচার কার্য আরো তীব্র গতিতে করতে থাকেন এবং ‘দয়ানন্দ এংলো বৈদিক হাই স্কুল’, হিন্দু মহাসভা এবং প্রাচ্য হিন্দু মহাসভা স্থাপন করেন।
✅ মোহনচাঁদ গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ
একবার মোহনচাঁদ গান্ধী কলকাতা যান তখন শাস্ত্রীজী তার সাথেও মিলিত হন এবং নেপালের বর্তমান পরিস্থিতির উপরে দুজনে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ-আলোচনা করেন। নেপালের গুপ্তচর তাঁর পিছে লেগেই ছিল, সে শাস্ত্রীজীর সকল খবরাখবর মহারাণার কাছে পাঠাতে থাকে। শাস্ত্রীজী সেসময় মোহনচাঁদ গান্ধীকে ব্রহ্মসূত্রের শাঙ্করভাষ্যের ভামতী টীকার উপরে করা তাঁর নিজের ভাষ্য উপহার দেন। এই ভাষ্যের এক কপি আমার কাছেও আছে।
✅ নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর সাথে সাক্ষাৎ
সেদিন মোহনচাঁদ গান্ধীর সাথে সাক্ষাতের পর যখন শাস্ত্রীজী ফিরে যাচ্ছিলেন তখন পথে তাঁর সাথে নেতাজীর সাক্ষাৎ হয়, এসময়ও নেপালের বর্তমান পরিস্থিতির উপরে দুজনের দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ-আলোচনা করেন। সংবাদপত্রের সাংবাদিকও তখন সেখানে ছিল। এই সম্মেলনের বিস্তৃত বিবরণ পরেরদিনই ‘নেপালের সমাজসংস্কারক ও রাষ্ট্রনেতা প০ শুক্ররাজ শাস্ত্রী গান্ধীজী ও নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং নেপালে সুধারকর্ম সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করেন’ এই শিরোনামে সকল সংবাদপত্রে ছাপানো হয়। এ খবরে সারা নেপালে প্রচুর হুলস্থুল শুরু হয়।
✅ শাস্ত্রীজীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত পর্যায়
রাজপুরোহিত এবং পূজারীরা এই পরিস্থিতির লাভ উঠান এবং সরকারকে শাস্ত্রীজীর বিরুদ্ধে তীব্রভাবে উত্তেজিত করে তোলেন। শাস্ত্রীজীর হিতাকাঙ্ক্ষীগণ তাঁকে জানান যে নেপালের পরিস্থিতি তাঁর সম্পূর্ণ প্রতিকূল সুতরাং এ অবস্থায় তিনি যেন নেপালে না আসেন। কিন্তু শাস্ত্রীজী ছিলেন সম্পূর্ণ নির্ভীক। তিনি তাদের জানান - আমি নির্ভীক সন্ন্যাসী মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর শিষ্য, নিজের ধর্মপ্রচারের কাজে আমি মৃত্যুরও পরোয়া করিনা সুতরাং আমি নেপালে গিয়ে আর্যসমাজের প্রচার অবশ্যই করব।
এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়ে শাস্ত্রীজী নেপালে চলে আসেন এবং নিজের সহযোগীদের সাথে মিলে ' ‘প্রজা পরিষদ’ নির্মাণ করেন। এই পরিস্থিতি দেখে মহারাণা সরকার নিজের বাস্তবিক কুটিল স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং পূর্বরচিত ষড়যন্ত্রে আস্থা রেখে তদানুযায়ী কার্য শুরু করে। শাস্ত্রীজী এবং তাঁর পরিষদের সদস্যদের জেলে ঢোকানো হয়। শাস্ত্রীজীর বিরুদ্ধে আরোপ দেয়া হয় যে তিনি ভারতে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাষ্ট্রীয় নেতাদের সাথে মিলে নেপালের সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এই দোষে অভিযুক্ত করে শাস্ত্রীজীকে রাণার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। শাস্ত্রীজী সালামের স্থানে ‘নমস্তে' করলেন। [শাস্ত্রীজীকে নমস্তে করতে দেখে উত্তেজিত হয়ে রাণা বললেন, শাস্ত্রী তুমি এখানেও কুটিলতা করেছ, এক হাতে সালাম করার পরিবর্তে তুমি দুই হাতজোর করে নমস্তে করেছ। এ আমাদের জন্য অপমান। তোমাকে এর সাজা শীঘ্রই ভোগ করতে হবে।] তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও তর্কপূর্ণ বার্তালাপের সাথে সকলের পরিচিত ছিলেন। সকলে তাঁকে বিপ্লবীদের গুরু মানতেন। তাই রাণার সরকার সর্বপ্রথমেই তাঁকে নিধনের পরিকল্পনা সাজায় একইসাথে তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আরোপ লাগানোর চেষ্টা করে যে, শাস্ত্রীজী ‘নারায়ণ হট্টীর রক্তপাত কাণ্ড’ সংগঠিত করে রাণাদের মারার চেষ্টা চালিয়েছেন।
নেপালের জনসাধারণ তখন একদিকে রাণার কাছে প্রার্থনা জানাতে থাকেন যে শাস্ত্রীজীকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয় অন্যদিকে শাস্ত্রীজীকেও ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন। কিন্তু শাস্ত্রীজী তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করে বলেন, আমার তো কোন দোষই নেই তবে আমি কেন ক্ষমা চাইব? যদি আমার বাস্তবিক কোন অপরাধ থেকেই থাকে তবে আমার তো দণ্ডই পাওয়া উচিত। কয়েকদিন পরে শাস্ত্রীজীকে বিচারবহির্ভূতভাবে ফাঁসির সাজা শুনিয়ে পুনরায় জেলে পাঠানো হয়। জনসাধারণ তাঁর ধর্মের প্রতি প্রবল দৃঢ়তা দেখে অত্যন্ত প্রভাবিত হন।
✅ ধর্মের জন্য সহর্ষে জীবন বলিদান
অন্তিম দিন সন্ধ্যাবেলায় শাস্ত্রীজী ভোজনের জন্য কেবল বসেছেন এমন সময়েই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। ভোজন সেখানেই থেকে গেলো। রাত ঠিক ১২ টায় পুলিশ কর্মচারী ভর্তি একটি গাড়ি জেলে প্রবেশ করে। তার ঠিক পিছনেই দ্বিতীয় গাড়িতে রাণা শমশের এবং অন্য আধিকারিকগণ আসেন। জনবিদ্রোহ এড়াতে প০ শুক্ররাজ শাস্ত্রীকে দড়ি দিয়ে বেধে নগর থেকে দূরে নেপাল-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এক জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। এক বড় বৃক্ষের নিচে কিছু ইটের উপরে শাস্ত্রীজীকে দাঁড় করানো হয়। এই বৃক্ষের ডালেই ফাঁসির দড়ি ঝুলানো ছিল। তিনি পুলিশ কর্মচারীদের সড়িয়ে দিয়ে ফাঁসির দড়ি স্বয়ং নিজের গলায় লাগিয়ে নেন। [শোনা যায় যে ইটের উপরে শুক্ররাজ শাস্ত্রীকে দাঁড় করানো হয়েছিল সেই ইট বীর স্বয়ং নিজের পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দেন] কয়েক মূহুর্তেই দড়িতে টান পড়ে আর শাস্ত্রীজী “ও৩ম্ - ও৩ম্” উচ্চারণ করতে করতে তাঁর নশ্বর শরীরকে আর্যসমাজের উদ্দেশ্যে বলিদান করলেন। এই বলিদান একইসাথে রাণা সরকারের কপালে অসীমকালের জন্য এক কলঙ্কের টীকা লাগিয়ে দিল। জনসাধারণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য শাস্ত্রীজীর মৃতদেহ ৮প্রহর ধরে সেখানেই ঝুলিয়ে রাখা হয় আর তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহের গলায় একটি কাঠের বোর্ড ঝুলিয়ে তাতে লিখে দেয়া হয়-
“আর্যসমাজী হওয়ার কারণেই সমগ্র দেশে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী, স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের এই গুরু এরূপ শাস্তিরই যোগ্য ছিল।”
এই বৃক্ষ আজও নেপালের রাজমার্গে দাড়িয়ে থেকে অমর হুতাত্মা পণ্ডিত শ্রী শুক্ররাজ জী শাস্ত্রীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভারত নেপালের সীমানায় এই স্থানটি আজও ‘পচলী ঘাট’ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। এখনও জনসাধারণ এই গাছের শিকড়ে তিলক লাগান। স্থানটিকে অতিক্রম করা প্রত্যেক যাত্রীর মস্তক এখানে এসে শাস্ত্রীজীর প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে যায়।
বস্তুতঃ আর্যসমাজের বলিবেদীর উপরে নিজেকে আহুত করে শাস্ত্রীজী তাঁর ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীদের জন্য নেপালে বৈদিক ধর্ম প্রচারের মার্গ প্রশস্ত করে যান। যুগ-যুগান্তর ধরে শ্রী শাস্ত্রীজীর এই পবিত্র বলিদান রাষ্ট্রসেবকদের প্রেরিত করতে থাকবে। শ্রী শুক্ররাজ শাস্ত্রীর পরে তাঁর সাথী প্রসিদ্ধ আর্যসমাজী শ্রী গঙ্গালালজীকে গাছের সাথে বেধে গু*লি করে হ*ত্যা করা হয়। তাঁর দ্বিতীয় সহযোগী শ্রী ধর্মভক্তজীকেও একইভাবে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দিয়ে হ*ত্যা করা হয়। পাঞ্জাব নিবাসী শ্রী মাস্টার গুরুদয়াল সিংহজীও একইভাবে বীরগতি প্রাপ্ত হন। দেশ থেকে নির্বাসিত তাঁর অনেক অনুসারীকে পরবর্তীতে জেলে বন্দি করা হয়। অনেক বলিদানকারীর নাম পর্যন্ত জানা যায়নি। নেপালে আজ যত পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায় তার সবটুকুই এরূপ বীর হুতাত্মাদের পবিত্র বলিদানের সুপরিণাম।
নোটঃ- সংযুক্ত ছবিটি হরিয়ানা সাহিত্য সংস্থান, গুরুকুল ঝজ্জর থেকে প্রকাশিত শাস্ত্রার্থকেশরী প০ শ্রী অমর স্বামী শাস্ত্রীজীর পুস্তক শ্রী শুক্ররাজ শাস্ত্রীজীর বলিদান নামক পুস্তক থেকে নেয়া হয়েছে।