আর্য সংস্কৃতির প্রবল প্রচারক — লালা রামজস


আর্য সংস্কৃতির প্রবল প্রচারক — লালা রামজস'জী
সনাতনী সমাজ এক কালে বেদের জ্ঞানকে ভূলে গিয়েছিলো। এর পরিণামস্বরূপ, হয় তারা ভোগ্যবাদী হয়ে গিয়েছিলো আর না হয় জগতকে মিথ্যা মনে করে বসেছিলো। এইজন্য তারা পরিশ্রম করা ছেড়ে দিয়ে অলস ভাবে জীবনযাপন করছিলো। এই মানসিকতার কারণে ভারতবর্ষে বিদেশীরা তাদের রাজ্য নির্মাণ করেছিলো। এই ভয়াবহ কালে ভারতবর্ষে প্রাদুর্ভাব হলো মহর্ষি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজীর। তিনি ঘুমন্ত হিন্দুজাতিকে জাগালেন। তিনি শিখিয়েছেন আত্মা অমর এবং কর্ম হলো ভাগ্যের নির্ধারক। মহর্ষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশে লিখেছেন, একটি ক্রিয়াশীল জীবনের মান্যতা ভাগ্যের নির্ধারিত ফলের স্বীকৃতি অপেক্ষা অধিক মহত্ত্বপূর্ণ। ভাগ্য হলো কর্মের ফল। কর্ম ভাগ্যের নির্মাতা। স্বামীজীর উপদেশ শুনে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়েছিলো। সেই মহাত্মাদের মধ্যে একজন ছিলেন লালা রামজস আর্য।
লালা রামজসজীর জন্ম ১৮৬৫ সালে মেরঠের অমানুল্লাপুর গ্রামে হয়েছিলো। স্বামী দয়ানন্দের যখন মেরঠে আগমণ হয়েছিলো তখন তাঁর দর্শনে এবং উদ্বোধনে বালক রামজসের বৈদিক ধর্মে প্রবেশ ঘটেছিলো। তিনি স্বামী দয়ানন্দের সামাজিক কাজে অংশ নিতে লাগলেন। তাঁর কাছে দলিতোদ্ধার এবং শুদ্ধিযজ্ঞ বিশেষ পছন্দের ছিলো। 
 
▪️একবার তিনি শুনেছিলেন যে আলী শের নামক এক ব্যক্তি তুচ্ছ অপরাধের জন্য জেলে গিয়েছে৷ রামজসজী ব্যক্তিটির জামানত (বেল) করিয়েছিলেন। তাকে বৈদিক ধর্মের মর্ম বুঝিয়েছিলেন। আলী শের বৈদিক ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। রামজসজীর চেষ্টার পর তিনি তার স্বপরিবারে শুদ্ধি হয়ে আর্য হয়েছিলেন। রামজসজী ঘোষণা করেছিলেন যে আলী শের আমার ছোট ভাই, আজ থেকে তার নাম ধর্ম সিংহ। সে আমার পরিবারের সদস্য। সে আমার ঘরে থাকবে। কিছুসময় পর ধর্ম সিংহের দুজন মেয়ে বিদ্যা এবং তারা জন্ম নেয়। বড় হওয়ার পর রামজসজী তাদের বিবাহ হিন্দু পরিবারে সম্পন্ন করিয়েছিলেন। রামজসজী সেই সময় বলেছিলেন, ধর্ম সিংহের যদি কোন ছেলে হতো তাহলে আমি নিজের পরিবারের কোনো নারীর সাথে তার বিবাহ করাতাম। এমনই ছিলেন লালা রামজসজী। এক কথার মানুষ। যা বলেছেন তাই করে দেখিয়েছেন।
 
আর্যদের এই ব্যক্তিত্বের আদালতও সম্মান করতো। রামজসজী ইংরেজদের অত্যাচারেরও ঘোর বিরোধী ছিলেন। বিভিন্ন সময় তাদের বিরোধীতা করতে তিনি উত্তরের দিকে যেতেন।
 
নারী জাতি সেই সময় অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ এবং বিধবাদের করুণ অবস্থায় পীড়িত ছিলো। নারীদের এই দশা রামজসজী দেখতে পারলেন না। তিনি এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ আরম্ভ করেছিলেন।
 
১৯১০ এর একটি ঘটনা। পতলা গ্রামের গাজিয়াবাদ জেলার এক ব্রাহ্মণের মেয়ে 'ভগবান দেই', যার বিবাহ যৌবনের প্রথম চরণেই কলীনা গ্রামে হয়েছিলো। সেই মেয়ের সামনে অন্ধকারময় জীবন ছিলো। সমাজ তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। রামজসজী তার পুনঃর্বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। যখন পৌরাণিকরা এটি জেনেছিলো তখন তারা এটির বিরোধীতা করলো।আর্যসমাজীরা বিধবা বিবাহের সমর্থনে অবস্থান নিয়েছিলো। পৌরাণিকদের সাথে এই বিষয় নিয়ে শাস্ত্রার্থ হয়েছিলো। সেখানে এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিলো। আর্যসমাজের প্রতিনিধিরা শাস্ত্রার্থে জয়লাভ করেছিলো। অবশেষে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারের যুবক বাবু রামের সাথে তার পুনর্বিবাহ সম্পন্ন হলো। সমাজে নব চেতনার প্রকাশ ঘটলো। রামজসজীর উৎসাহ এবং মনোবল দুটোই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিলো।
 
রামজসজীর কাছে অনেক জমি ছিলো। তিনি দেখলেন গ্রামে দলিতেরা অনেক দরিদ্র। তিনি তাঁর জমিগুলো দলিত ভাইদের দান করেছিলেন এবং নিজের ক্ষেত থেকে ফসল নেয়ারও স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এর ফলে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলো। রামজসজী অনেক দলিত পরিবারদের আর্থিক সহযোগীতাও দিয়েছিলেন। দলিত সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থাও করেছিলেন।
 
◽বৈদিক সিদ্ধান্তের প্রবল প্রচারক, বিধবা বিবাহ ও শুদ্ধির সমর্থক, দলিতদের সহায়ক, ঈশ্বর ভক্ত এবং ঋষি দয়ানন্দের অনন্য শিষ্য লালা রামজসজী ৫৯ বছর বয়সে তাঁর প্রাণ ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.