বৈয়াকরণ কৈয়ট

🍁 বৈয়াকরণ কৈয়ট 🍁
▪️পুনর্লিখন: শ্রী দীপংকর সিংহ দীপ
মহাভাষ্যের উপরে যখন পণ্ডিতদের বিভিন্ন কারণে শ্রদ্ধাহীনতা জাগছিল সেই সময় মহাভাষ্যকে নতুন করে আলোয় আনেন কৈয়ট। ভর্তৃহরির ত্রিপদী প্রভৃতি গ্রন্থ ভুল প্রতিলিপি হতে হতে বিকৃত হচ্ছিল। সেই সময় কাশ্মীরের রাজা জয়াপীড় মহাভাষ্যের জীর্ণোদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন। কলনের রাজতরঙ্গিনী নামক ইতিহাস গ্রন্থ থেকে একথা জানা যায়। জয়াপীড় জীর্ণোদ্ধারের কাজে কৈয়টকে প্রেরণ করেছিলেন। কৈয়ট মহাভাষ্যের মূল পাঠের ব্যাপারে ভর্তৃহরির ত্রিপদীর সহায়তা পেয়েছিলেন। তৎকালীন প্রয়োজন অনুসারে সংক্ষিপ্ততম ভাবে ইনি প্রদীপভাষ্য রচনা করেন। কৈয়টের গ্রন্থটি প্রদীপ, প্রদীপভাষ্য অথবা মহাভাষ্য প্রদীপ নামে খ্যাত। মহাভাষ্যকারের মূল ভাবনাকে কৈয়ট বোধহয় যথাযথভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে লেখা সর্বানন্দের অমরকোষের টীকায় মৈত্রেয় রক্ষিতের নাম পাওয়া যায়। মৈত্রেয় রক্ষিতের ধাতুবৃত্তির কথাও তিনি বলেছেন। মৈত্রেয় রক্ষিতের তন্ত্রপ্রদীপ গ্রন্থে কৈয়টের নাম কজুট বলে লিখিত হয়েছে। মৈত্রেয় রক্ষিত ধর্মকীর্তির রূপাবতারের কথাও বলেছেন। রূপাবতার গ্রন্থে ধর্মকীর্তি পদমঞ্জরীকার হরদত্তের উল্লেখ করেছেন। হরদত্ত আবার তাঁর গ্রন্থে অন্যে, অপরঃ ইত্যাদি শব্দের দ্বারা কৈয়টের আলোচনা করেছেন। 
 
কৈয়ট তাঁর গ্রন্থে নামোল্লেখ করে ব্যাড়িরচিত সংগ্রহের একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন তা দেখা যায়। এইসব তথ্য বিচার করে অন্ততঃ ৫০ বছর আগে তাঁকে স্থান দিতে হবে। কৈয়ট নামে একজন কবি দেবীশতক রচনা করেছিলেন। ইনিও কাশ্মীরের ব্যক্তিত্ব। আলঙ্কারিক আনন্দবর্ধন এই দেবীশতকের ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এই কৈয়ট ব্যাকরণ শাস্ত্রের পণ্ডিত কৈয়ট বলে মনে হয় না। কারণ দেবীশতক রচয়িতা কৈয়ট তাঁর পিতার নাম বলেছেন চন্দ্রাদিত্য। অথচ মহাভাষ্যের প্রারম্ভে কৈয়ট তাঁর পিতার নাম বলেছেন জজ্জট। কৈয়ট কাশ্মীরের অধিবাসী ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং তাঁর নামও সে কথাই বলে। অনেকে আবার মম্মট নামক বিখ্যাত অলংকারশাস্ত্রের রচয়িতাকে উবট ও কৈয়টের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলেছেন। এটা নামসাম্য-জনিত বিভ্রাট বলেই মনে হয়। উবট তাঁর পিতার নাম বলেছেন বজ্রট আর কৈয়টের পিতা জজ্জট। অতএব তাঁরা এক হবেন কিভাবে?
 মন্মটের পিতার নাম জানা যায় না, তাই পূর্বোক্ত আলোচনা ভিত্তিহীন বলে মনে করা চলে। কৈয়টের ছাত্র উদ্যোতকর অবশ্য পূর্বোক্ত মতটির কথা বলেছেন। তিনি ব্যাকরণ শাস্ত্র সম্পর্কিত কোনো গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলে মনে হয়। চন্দ্রসাগর সূরি হেমচন্দ্রবৃত্তিতে উদ্যোতকরের বেশ কয়েকটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। 
 
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.