মহর্ষি দয়ানন্দের দেহত্যাগে এক ভক্তের সংস্কৃতে হাহাকার প্রকাশ

 
অহো নিতান্তং হৃদয় বিদূয়তে নিশম্য লোকান্তরমুন্নতাশয়ম্।
সম্প্রস্থিতং বেদবিদামনুত্তমং শ্রীমদ্দয়ানন্দসরস্বতীং কবিম্ ॥১॥
অর্থাৎ, বেদজ্ঞদের মধ্যে সর্বোত্তম, মেধাবী, উন্নতাশয় শ্রী দয়ানন্দ সরস্বতীর পরলোক গমন শ্রবণে হৃদয়ে অত্যন্ত পীড়া হয় ।
দীপপংক্তিচিতভূতলে সতি ব্যোম্নি তারকগণৈস্সমুজ্জ্বলে। 
শোকজালতিমিরাকুলে তু সত্যুৎসসর্জ স শরীরবন্ধম্ ॥২॥
অর্থাৎ,পৃথিবীতে প্রদীপের সলতে জ্বলনের সময়, তারাগণের আকাশে প্রজ্জ্বলনের সময় এবং শোকরূপী অন্ধকার বিস্তার ঘটলে তিনি শরীর বন্ধন ত্যাগ করলেন ।

নিঃশেষপীতাখিলশাস্ত্রসারঃ পূতান্তরাত্মা নিগমাগ্নিজালৈঃ। 
জ্ঞানোত্তমৈকাজজনলিপ্তনেত্রো ব্রহ্মৈকনিধ্যানবিশুদ্ধচেতাঃ॥৩॥
স্বকীয়দেশোন্নতিমাত্রলগ্নঃ স্বপ্নেঽপি ন প্রাপ্তনিজার্থবুদ্ধিঃ।
ত্যক্ত্বা সমস্তং তু কথন্নু কার্যং গন্তু দ্যুলোকং স মনশ্চকার ॥৪॥
অর্থাৎ,যিনি শাস্ত্রসমূহের সমস্ত সার পান করেছিলেন, বেদাগ্নিতে যার অন্তরাত্মা পবিত্র হয়েছিলো, উত্তম জ্ঞান যার অঞ্জন স্বরূপ ছিলো, যার চিত্ত ব্রহ্মজ্ঞানে বিশুদ্ধ ছিলো, যিনি স্বদেশের উন্নতিতে সর্বদা সংলগ্ন ছিলেন, যাঁর স্বপ্নেও কখনো স্বার্থবুদ্ধি আসতো না তিনি সর্বকার্য পরিত্যাগ করে দ্যুলোক গমনের চিন্তা কেন করলেন ?

বিজ্ঞায় তস্যাদ্ভুতচারুবৃত্তং দিবৌকসো জাতকুতূহলাঃ কিম্। 
 তদ্দর্শনায়াত্মনিকেতনং তমজূহবন্দিব্যগুণৈরূপেতম্ ॥৫॥
অর্থাৎ,স্বর্গদেবগণ মহর্ষির অদ্ভুত ও সুন্দর চরিত্র শুনে কৌতুহলবশত সেই দিব্যপুরুষকে নিজের গৃহে দর্শনের জন্য নিয়ে গেলো না তো ?

কৃতযুগোচিত এষ জনঃ কিল ন চিরমর্হতি বস্তুমসৌ ময়ি।
মনসি সঙ্কলিতং কলিনেতি কিং স চ হৃতোঽখিলসাধুমনোরথৈঃ॥৬॥
অর্থাৎ,সত্যযুগের উপযুক্ত গুণযুক্ত দেখে ' ইনি তো আমার দ্বারা আর বেশী সময় স্থান দেওয়ার নয়' এই ভেবে কলিযুগ শুভচিন্তায় তাকে হরণ করলো না তো ?

গুণানপেক্ষেণ নিজপ্রভুত্বং কালেন কি দর্শয়িতুং হতঃ সঃ।
ন দেহভাক্ প্রাক্তনকর্মযোগাৎ পুনঃ প্রপন্নঃ প্রকৃতিং নিজাং বা ॥৭
অর্থাৎ,যে কাল গুণের অপেক্ষা করে না সেই কাল নিজের প্রভুত্ব দেখানোর জন্য তাঁকে হরণ করেনি তো ? তিনি নিজের পূর্বকালীন কর্মের যোগে যে মানবশরীর পেয়েছিলেন তিনি আহার পূর্ব প্রকৃতি লাভ করেননি তো ?

সন্দেহদোলামধিরূঢ়মেবং মনো ন নিশ্চেতুমলং মদীয়ম্।
চিত্রং নিগূঢ়ং চরিতং বিধাতুর্বেতুং ক্ষমঃ কো বদ মানুষোঽস্তি ॥৮॥
অর্থাৎ,এইভাবে সন্দেহের দোটানায় আমার মন কিছুই স্থির করতে পারছে না । বিধাতার চরিত্র বিচিত্র ও কে-ই বা সেই অত্যন্ত গূঢ় তত্ত্ব জানতে পারে ? [ অতঃ পূর্বোক্ত যে অজ্ঞানবশতঃ শোকাভিভূতাবস্থায় পৌরাণিক দেব - স্বর্গ - কাল ইত্যাদির চিন্তা তা ভ্রান্ত ]

দিনানি পূর্বং কতিভিদ্য আসীদসংহৃতাস্মন্নয়নোৎসবায়।
স্মৃতেস্স পন্থানভিতোঽধুনা তৎ কথং বিধেঃ স্যাল্লষিতং প্রমেয়ম্ ॥৯॥
অর্থাৎ, কিছুদিন আগেও তো আমার চোখের সামনে আনন্দদাতা ছিলেন তিনি এখন স্মৃতির পথে পৌঁছে গিয়েছেন । বিধাতার ইচ্ছা কি জানা সম্ভব ?

তাতগেহবসতির্বিমানিতা সংশ্রিতশ্চরম্ এবং চাশ্রয়ঃ ।
ধর্মতত্ত্বপরিবোধনে রতস্তেন সোঢ়মপি দুর্বচো নৃণাম্ ॥১০॥
অর্থাৎ, তিনি পিতার ঘর ত্যাগ করে সন্ন্যাসাশ্রম আশ্রয় করলেন, ধর্মতত্ত্ব জানাতে থাকলেন, তিনি মানুষের দুর্বচনকেও সহ্য করেছেন ।

স্বং বিহায় মুহুরুচ্ছিতং দং বারিদঃ শ্রয়তি বাহিনীতটম্ ।
কেবলং পরহিতে কৃতশ্রমা লাঘবং ন গণয়ন্তি সজ্জনাঃ ॥১১॥
অর্থাৎ, যেভাবে মেঘ তার উঁচু স্থান ত্যাগ করে বারংবার নদীর তটে আশ্রয় নেয় তেমনি পরহিতের জন্য পরিশ্রমকারী সজ্জন নিজের অপমানকে চিন্তা করেন না ।

যঃ পাখণ্ডমতৈকখণ্ডনরতো বৈদাখ্যশস্ত্রৈঃ শুভৈঃ,
শাস্ত্রাণাং বলবদ্বলেন সততং সংসেব্যমানো যুধি।
সৎপক্ষঃ পরিষচ্ছলেন বিজয়স্তম্ভান্ সমারোপয়দ্,
দিক্ষ্বন্যঃ পুরুষো হি তেন সদৃশো লভ্যেত কুত্রাধুনা ॥১২॥
অর্থাৎ, যিনি বেদ নামক শুভ শাস্ত্রের দ্বারা পাখণ্ডমতদের খণ্ডনে নিরন্তর যুক্ত ছিলেন, যার যুদ্ধে শাস্ত্রের বলবান সেনা সেবা করতো, যিনি সভাতে সর্বদিকে বিজয়স্তম্ভ স্থাপিত করেছিলেন এখন তাঁর সমতুল্য মানব কোথায় পাওয়া যাবে ?

এক এব খলু পদ্মিনীপতিরেক এব দিবি শীতদীধিতিঃ ।
এক এব চ স বেদবিদ্ভুবি দ্বিত্বমত্র ন কদা শ্রুত ময়া ॥১৩॥
অর্থাৎ,পদ্মিনী পতি সূর্য একটিই, আকাশে চাঁদও একটি। এমনই পৃথিবীতে তৎকালে বেদজ্ঞাতা তিনি একজনই ছিলেন, এ বিষয়ে দ্বিতীয় কারো অস্তিত্ব আমি কখনো শুনিনি ।

স্যাৎপুনস্তরণিরক্ষিগোচরো দৃশ্যতে নভসি চন্দ্রমাঃ পুনঃ।
যাত এষ তু সকৃৎসদগ্রণীর্বাভবীতি বিষয়ো ন নেত্রয়োঃ ॥১৪॥
অর্থাৎ,সূর্য তাও আবার দেখা যাবে, চাঁদও আকাশে আবার দেখা যাবে কিন্তু এই সৎমানবদের অগ্রণী এক বার চলে গিয়েছেন আর চোখে দেখার মত বিষয় হবেন না ।

ইন্দ্রিয়ার্থোদ্ভবং জ্ঞানং সর্বথা ন প্রমাত্মকম্।
তচ্চ্যুতস্স মহাত্মাতঃ স্মৃতাবেব নিধীয়তাম্ ॥১৫॥
অর্থাৎ,ইন্দ্রিয় ও অর্থ হতে উৎপন্ন জ্ঞান সর্বথা প্রমাণিক হয় না, এজন্য সেই মহাত্মা তা থেকে পৃথক হয়ে গেলেন, এখন তাকে স্মৃতিতেই রাখুন ।

সংস্কৃতা ভারতী যেন বৃদ্ধিং যায়াদন্তরতম্।
তস্য নামামরং চ স্যাদিত্যেতদ্ যবসীয়তাম্ ॥১৬॥
অর্থাৎ, যাতে সংস্কৃত ভাষা নিরন্তর বৃদ্ধি পায় ও তাঁর নাম অমর হয় এমন চেষ্টাই করা উচিত ।

ঋষয়ঃ কবয়ো নষ্টা বিদ্বাংসোঽপি তথৈব চ।
সাধুনাং মরণাৎপশ্চাদভিধানং তু জীবতি ॥১৭॥
অর্থাৎ, ঋষি, কবি ও বিদ্বান্ সব লুপ্ত হয়ে গিয়েছে, সাধুদেরও মৃত্যুর পরে কেবল তাঁদেরই নামই জীবিত থাকে ।

কো নাম শ্রীদয়ানন্দাৎসাধীয়ান্ দৃশ্যতে জনঃ।
উজ্জীবিতার্ষবিদ্যা যেনাস্মাভির্নিরপেক্ষিতা ॥১৮॥
অর্থাৎ, শ্রী দয়ানন্দের ন্যায় সাধু মানব কাকে দেখা যায় যিনি কিনা আমাদের উপেক্ষিত আর্ষবিদ্যাকে পুনর্জীবিত করেছেন ।

সৈবৈষা নীয়তাং পুষ্টিং স্বকীয়হিতবৃদ্ধয়ে।
শাস্ত্রতত্ত্বাববোধেন যূনাং সংস্ক্রিয়তাং চ ধীঃ ॥১৯॥
অর্থাৎ, সেই আর্ষবিদ্যাকে নিজের হিতের জন্য পরিপুষ্ট করো, শাস্ত্রের তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা যুবকদের বুদ্ধি সংস্কার করো ।

কঃ পদ্মিনীনাং বদ তিগ্মদীথধিতির্ধর্মঃ পরঃ কঃ কবি বাচি কঃ স্থিতঃ।
কা কণ্ঠভূষা ন যমাদ্বিভেতি কঃ স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী যমী ॥২০॥
অর্থাৎ,
১- সূর্য পদ্মিনীর কে ?
২- পরম ধর্ম কোনটি ?
৩- কবির বাণীতে কি বিদ্যমান থাকে?
৪- কণ্ঠের ভূষণ কী ?
৫- যমকে কে ভয় পায় না ?

উত্তর যথাক্রমে ১- স্বামী, ২-দয়া, ৩-আনন্দ, ৪-সরস্বতী, ৫-যমী।
 
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.