শূদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বামী দয়ানন্দজী ও মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে

 


বেদের অদ্বিতীয় বিদ্বান এবং সমাজ সংস্কারক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জুলাই, ১৮৭৫ এ পুণে গিয়েছিলেন এবং ওখানে ১৫ টা বক্তৃতা দিয়েছিলেন যা আজও লিখিত রূপে সুরক্ষিত আছে । সত্যশোধক সমাজের সংস্থাপক মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে মহর্ষি দয়ানন্দজীর বক্তৃতা শুনতে আসতেন । দুজনের মধ্যেই পরস্পর প্রেমভাব বা মিত্রতার সম্বন্ধ গড়ে উঠে। পুণেতে মহর্ষি দয়ানন্দজীকে তার শিষ্য বা সমাজ সংস্কারক মহাদেব গোবিন্দ রাণাডেজী আমন্ত্রিত করেছিলেন । ঋষি দয়ানন্দজীর ওখানে সর্বজনীন অভিনন্দন প্রদানও করা হয়েছিল। এই উদ্দেশ্যে পুণে শহরে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। ঋষি দয়ানন্দজী, মহাদেব গোবিন্দ রানাডেজী, মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলেজী ও অন্যান্য মহাপুরুষরা শোভাযাত্রার সম্মুখ সারিতে ছিলেন। মহাত্মা ফুলেজী এই শোভাযাত্রায় নিজের দলবল সহ সম্মিলিত হয়েছিলেন। মহাত্মা ফুলেজী ঋষি দয়ানন্দজীকে তার প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন সমাজের দৃষ্টিতে কথিত শূদ্র ,অতি শূদ্র কন্যাদের পাঠশালায় বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রিত করেছিলেন।


ঋষি দয়ানন্দজী মহাত্মা ফুলেজীর আমন্ত্রণ স্বীকার করেন এবং শূদ্রদের পাঠশালায় উপদেশ দেওয়ার জন্য উপস্থিত হন এবং তাদের ধর্মোপদেশ দেন । স্বামীজী বক্তৃতার মুখ্য বিষয় ছিলো -


১. মহর্ষির দ্বারা এক ব্রাহ্মণ বর্ণস্থ সন্ন্যাসীর দ্বারা [ যা কিনা তখনকার অধিকাংশই করতো না ] জন-কল্যাণের জন্য শূদ্রদের এবং স্ত্রীদের কোনো ধরনের ভেদভেদ ছাড়াই বেদের উপদেশ দিয়েছিলেন।
২. শূদ্রদের মহান গায়ত্রী মন্ত্রের উপদেশ দিয়েছিলেন।
৩. শূদ্র সমাজের বালিকাদের মহান প্রাচীন বিদুষী গার্গী ও মৈত্রয়ী এর সমান হওয়ার প্রেরণা দিয়েছিলেন।
৪. বিদ্যা গ্রহণ আর অবিদ্যা ত্যাগ করার উপদেশ দিয়েছিলেন।
৫. বেদ মন্ত্রের উপদেশ দিয়ে এটা প্রমাণ করেছিলেন যে বেদ নিজেই চার বর্ণকে অর্থাৎ ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র পর্যন্ত সবাইকে সমান রূপে পড়ার অধিকার দেয়।  


ঋষি দয়ানন্দজীর উপদেশ সব বালিকা, মাতা সাবিত্রী দেবী সহ সকল অধ্যাপিকা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। ঋষি দয়ানন্দজী আর জ্যোতিবা ফুলেজীর এই প্রকরণের ঐতিহাসিক মহত্ব আছে। আধুনিক সমাজে বহু বছর পর যদি কোনো বিদ্বান্ ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীর দ্বারা শূদ্রদের কোন প্রকার ভেদাভেদ ছাড়া গায়ত্রী মন্ত্রের উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তো সেই সন্ন্যাসী অন্য কেউ নয় বরং স্বামী দয়ানন্দজী ছিলেন ।

পুনের চিপলূনকর নামক ব্রাহ্মণএক গাধার উপর গর্দভানন্দ লেখে সেটার যাত্রা বের করেছিল। স্বামী দয়ানন্দজীর বিরোধ করতে এই কাজ করা হয়েছিল।  কিছু লোক স্বামী দয়ানন্দজীর কাছে এসে বলে যে স্বামীজী দেখেন এরা কি করছে । স্বামীজী হাসতে হাসতে বলেন নকল দয়ানন্দের সাথে তো এরকমই হওয়া উচিত। স্বামীজীর প্রবচনে পাথর নিক্ষেপ করে তাঁকে থামানোর প্রচেষ্টাও এরা করে কিন্তু ব্যর্থ হয় । শেষে স্বামী দয়ানন্দজীর শোভাযাত্রা বের করা হয়। তাঁকে হাতির উপর বসানো হয়। চারটি বেদ একটি পালকিতে সজ্জিত ছিল । স্বামীজীর হাতির একপাশে রাণাডে মহোদয় আর মহাত্মা ফুলেজী বিদ্যমান ছিলেন ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.