আর্যসমাজ কোন কোন শাস্ত্র প্রামাণ্য রূপে স্বীকার করে ?

 


 ১। ঋক্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব—এই চারি বেদ ঈশ্বরকৃত, তদ্রূপ ঐতরেয়, শতপথ, সাম এবং গোপথ—এই চারি ব্রাহ্মণ; শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ নিঘণ্টু, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ – এই ছয়টি বেদাঙ্গ।

মীমাংসাদি ছয় শাস্ত্র বেদের উপাঙ্গ। আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং অর্থবেদ এই চারিটি বেদের উপবেদ। এইগুলি ঋষি মুনিকৃত গ্রন্থ, এ সকলের মধ্যেও যেগুলি বেদ বিরুদ্ধ প্রতীত হইবে সেগুলিকে পরিত্যাগ করিবে। কারণ, বেদ ঈশ্বরকৃত বলিয়া অভ্রান্ত ও স্বতঃপ্রমাণ অর্থাৎ বেদের প্রমাণ বেদ হইতেই হইয়া থাকে। ব্রাহ্মণ প্রভৃতি সমস্ত গ্রন্থ পরতঃ প্রমাণ বেদাধীন।

[ সত্যার্থ প্রকাশ - ৩য় সমুল্লাস ] 

 


২। চারি “বেদ” কে – (বিদ্যা ধর্মযুক্ত, ঈশ্বর প্রণীত, সংহিতা মন্ত্ৰভাগকে) অভ্রান্ত ও স্বতঃপ্রমাণ বলিয়া বিশ্বাস করি। বেদ স্বতঃ প্রমাণ, বেদের প্রমাণ অন্য কোন গ্রন্থ সাপেক্ষ নহে। যেমন সূর্য্য ও প্রদীপ স্বভাবতঃ স্ব স্ব স্বরূপ প্রকাশ করে এবং ভূমণ্ডল প্রভৃতিরও প্রকাশক, চারি বেদও সেইরূপ। চারিটি বেদের ব্রাহ্মণ – অঙ্গ ছয়টি, উপাঙ্গ ছয়টি, উপবেদ চারিটি এবং (এগার শত সাতাশটি) শাখা আছে। এ সকল গ্রন্থ ব্রহ্মাদি মহর্ষি রচিত বেদব্যাখা স্বরূপ পরতঃ প্রমাণ। এগুলি বেদানুকূল হইলেই প্রমাণ; তন্মধ্যে বেদবিরুদ্ধ বচনগুলিকে অপ্রমাণ মনে করি।

[ সত্যার্থ প্রকাশ - স্বমন্তব্যামন্তব্য প্রকাশঃ ] 

 


৩।  ঈশ্বর কথিত যে মন্ত্রসংহিতা আছে, তাহাই স্বয়ং বা স্বতঃপ্রমাণ যোগ্য, অন্য কিছুই স্বতঃপ্রমাণ যোগ্য নহে । চারিপ্রকার বেদস্বরূপ মন্ত্রসংহিতা ভিন্ন, অন্য যাহা কিছু মনুষ্যরচিত গ্রন্থ আছে, তাহা বেদানুকূলবশতঃ পরতপ্রমাণ হেতু, প্রমাণ যোগ্য হইয়া থাকে, যেহেতু, বেদ ঈশ্বর রচিত, যিনি সর্বজ্ঞ সর্ববিদ্যাযুক্ত তথা সর্বশক্তিমান্ এজন্য এরূপ ঈশ্বরের বাক্যই কেবলমাত্র নিভ্রান্ত ও (স্বতঃপ্রমাণ) যোগ্য হইতে পারে, নচেৎ জীবের রচিত গ্রন্থ কদাপি স্বতঃ প্রমাণ হইতে পারে না, যেহেতু জীব সৰ্ব্ববিদ্যাযুক্ত ও সর্বশক্তিমান নহে, এজন্য উহাদিগের এরূপ কথন (কদাপি) স্বতঃ প্রমাণ যোগ্য হইতে পারে না।

উপরোক্ত বচন দ্বারা ইহাই সিদ্ধ হইতেছে যে, বেদ বিষয়ে যেস্থানে প্রমাণের আবশ্যকতা হইয়া থাকে, তথায় সূর্য্য ও দীপক যেরূপ স্বয়ং আপনি আপনাদিগের প্রকাশক হইয়া অপর সমস্ত বস্তুকে প্রকাশ করিয়া থাকে, তদ্রূপ বেদশাস্ত্র স্বতঃপ্রমাণ অর্থাৎ স্বয়ং নিজ প্রকাশে প্রকাশিত হইয়া, অন্যান্য বেদানুকূল গ্রন্থেরও প্রকাশক হইয়া থাকে। এতদ্বারা এইরূপ সিদ্ধ হইতেছে যে, যে সকল গ্রন্থ বেদবিরুদ্ধ তাহা কদাপি প্রমাণ যোগ্য বলিরা স্বীকরণীয় হইবার যোগ্য নহে, এবং বেদের সহিত অন্য গ্রন্থের বিরোধ দৃষ্ট হইলেও, বেদ কদাপি অপ্রমাণীয় হইতে পারে না, যেহেতু বেদ স্বয়ংই স্বতঃপ্রমাণ স্বরূপ হইয়া থাকে ।

এজন্য ঐতরেয়, শতপথ আদি ব্রাহ্মণগ্রন্থ যাহা বেদান্ত সঙ্গত ও ইতিহাসাদিয়ুক্ত করিয়া প্রণীত হইয়াছে, তাহাও পরতঃপ্রমাণ স্বরূপ অর্থাৎ বেদানুকূল বশতঃ প্রমাণস্বরূপ, পরন্তু, ইহাতেও যদি কোন কথা বেদপ্রতিকূল থাকে, তাহা কদাপি প্রমাণযুক্ত হইতে পারে না। মন্ত্রভাগরূপ চারিসংহিতা, যাহাকে বেদ সংজ্ঞা দেওয়া যায়, তৎসমুদায়কেই স্বতঃপ্রমাণ বলা যায়, এজন্য বেদ ভিন্ন অন্যান্য (বেদানুকূল) ঐতরেয়, শতপথ আদি যে সকল প্রাচীন সত্যগ্রন্থ আছে, তাহা পরতঃপ্রমাণ যোগ্য হয় অর্থাৎ (গ্রহণীয় ও স্বীকার্য্য-অনুবাদক)। এইরূপে এক হাজার একশত সাতাশটী চারি বেদের শাখা সকলও, বেদশাস্ত্রের ব্যাখ্যান হেতু, পরতঃপ্রমাণ স্বরূপে গ্রহীত হইয়া থাকে।


 

ইহার অভিপ্রায় এই যে, শাখা শাখান্তর ব্যাখ্যা সহিত চারি বেদ, উপবেদ, ছয়অঙ্গ ও ছয় উপাঙ্গ সমস্ত মিলিত হইয়া কুড়িটী গ্ৰন্থ হইয়া থাকে। ইহার মধ্য হইতেই চৌদ্দ বিদ্যা সমস্ত মনুষ্যগণকে গ্রহণ করা উচিত।

উপরোক্ত গ্রন্থ সকলের পূর্বোক্ত প্রকরণানুযায়ী, স্বতঃ ও পরতঃ স্বরূপে গ্রহণ করা ও পরকে উপদেশ দিয়া গ্রহণ করান তথা ঐ সকল গ্রন্থের পঠন পাঠন করা সকলের কর্তব্য। স্বতঃপ্রমাণ অথবা পরতঃপ্রমাণ গ্রন্থ ছাড়া, অপর গ্রন্থকে প্রমাণ স্বরূপে গ্রহণ করা কৰ্ত্তব্য নহে, যেহেতু যে সকল গ্রন্থ পক্ষপাতী, ক্ষুদ্রবুদ্ধিযুক্ত অল্প বিদ্যাসম্পন্ন, অধার্মিক, অসত্যবাদী আদি দ্বারা বেদবিরুদ্ধ ও যুক্তিপ্রমাণ রহিত লিখিত হইয়াছে, তাহা কদাপি প্রমাণ রূপে গ্রাহ্য হইতে পারে না ।

[ ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা - গ্রন্থ প্রামাণ্যাপ্রামাণ্যবিষয়ঃ ] 


৪।  যে সমস্ত কর্মকাণ্ড বেদানুকুল ও যুক্তিপ্রমাণ সহ সিদ্ধ আছে, তাহাদিগকে সত্য বলিয়া স্বীকার করা কর্ত্তব্য।

[ ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা - প্রতিজ্ঞাবিষয় ] 


  • সংস্কাবিধিসহ অন্যাদি গ্রন্থের শুরুতে স্পষ্টভাবে ' বেদাদিশাস্ত্র' লিখিত হয়েছে  । এই হেতু কেবল বেদ নয় বরং বেদানুকূল শাস্ত্রবাক্যও গ্রহণীয়  । তবে তা বেদতুল্য কখনোই নয় । 


বেদাদিশাস্ত্রসিদ্ধান্তমাধ্যায় পরমাদরাৎ ।

আয়ৈতিহ্যং পুরস্কৃত্য শরীরাত্মবিশুদ্ধয়ে।।৩।।

[ সংস্কারবিধি - প্রারম্ভ ] 


 বেদাদিবিবিধসচ্ছাস্ত্র প্রমাণসম্বলিতঃ ... [ সত্যার্থ প্রকাশ , মূখ্য পৃষ্ঠা ]

যে ব্রাহ্মণ বা সূত্র বেদবিরুদ্ধ হিংসাযুক্ত, তাহাকে প্রমাণ মনে করিবে না [ সংস্কারবিধি - বেদারম্ভ প্রকরণ ] 


  • মহর্ষি প্রণীত শিক্ষাক্রম 
পুত্র হইলে বালকদের পাঠশালায় এবং কন্যা হইলে বালিকাদের পাঠশালায় পাঠাইবে । গৃহে বর্ণোচ্চারণ শিক্ষা যথাবিধি না হইলে আচার্য্য বালককে এবং আচার্য্যা কন্যাকে পাণিনিমুনিকৃত বর্ণোচ্চারণ শিক্ষা ১ (এক) মাসের মধ্যে পড়াইয়া দিবেন। তারপর পাণিনিমুনিকৃত অষ্টাধ্যায়ী অর্থসহ পাঠ ও পদচ্ছেদ ৮(আট) মাস পর্য্যন্ত বা ১ (এক) বৰ্ষ পৰ্য্যন্ত পড়াইয়া ধাতুপাঠ ও দশ লকারের রূপ সাধাইবেন এবং দশ প্রক্রিয়াও সাধাইবেন। তারপর পাণিনিমুনিকৃত লিঙ্গানুশাসন, উণাদি, গণপাঠ তথা অষ্টাধ্যায়ীর হুল্ ও তৃঢ় প্রত্যয়াদ্যন্ত সুবন্তরূপ ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে সাধাইয়া দিবেন। পুনরায় দ্বিতীয়বার অষ্টাধ্যায়ীর পদার্থোক্তি, সমাস, শঙ্কাসমাধান, উৎসর্গ ও অপবাদ ( যে সুত্রের বিষয় অধিক থাকে তাহাকে উৎসর্গ এবং যে সূত্র বড় বিষয় হইতে ছোট বিষয়ে প্রবৃত্ত হয় তাহাকে অপবাদ বলে) অন্বয়পূর্বক পড়াইবেন এবং সংস্কৃত ভাষণেরও অভ্যাস করাইতে থাকিবেন। এইরূপে আট মাসের মধ্যে, এতদূর পর্য্যন্ত পঠন-পাঠন করিতে হইবে। 
 
তারপর পতঞ্জলিমুনিকৃত মহাভাষ্য যাহাতে বর্ণোচ্চারণ শিক্ষা, অষ্টাধ্যায়ী ধাতুপাঠ, গণপাঠ, উণাদিগণ ও লিঙ্গানুশাসন-এই ৬ (ছয়) গ্রন্থের ব্যাখ্যা যথাবৎ লিখিত আছে, দেড় বৎসরে অর্থাৎ ১৮ (আঠার) মাসের মধ্যে ইহার পঠন-পাঠন শেষ করিবে। এইভাবে শিক্ষা ও ব্যাকরণ শাস্ত্র ৩ (তিন) বৎসর ৫ (পাঁচ) মাসে বা ৯ (নয়) মাসে অথবা ৪ (চারি) বৎসরের মধ্যে শেষ করিয়া সমস্ত সংস্কৃত বিদ্যার মর্মস্থল উপলব্ধি করার যোগ্যতা অর্জন করিবে। তারপর যাস্কমুনিকৃত নিঘন্টু, নিরুক্ত ও কাত্যায়ানাদি মুনিকৃত কোষ ১/১.৫ (দেড়) বৎসরের মধ্যে পাঠ করিয়া অব্যয়ার্থ, আপ্তমুনিকৃত বাচ্যবাচকসম্বদ্ধরূপ যৌগিক (যৌগিক-যাহা ক্রিয়ার সহিত সম্বন্ধ রাখে, যেমন পাচক ও যাজকাদি । যোগরূঢ়ি-যেমন পঙ্কজাদি । রূঢ়ি-যেমন ধন, বন ইত্যাদি।), যোগরূঢ়ি ও রূঢ়ি-এই তিন প্রকার শব্দের অর্থ যথাবৎ জ্ঞাত হইবে। তারপর পিঙ্গলাচার্য্যকৃত পিঙ্গলসূত্র ছন্দোগ্রন্থ ভাষ্যসহ (তিন) মাসের মধ্যে পাঠ করিবে এবং ৩ (তিন) মাসের মধ্যে শ্লোকাদি রচনাবিদ্যা শিক্ষা করিবে। তারপর যাস্কমুনিকৃত কাব্যালঙ্কারসূত্র, বাৎস্যায়নমুনিকৃত ভাষ্য সহিত আকাঙ্ক্ষা, যোগ্যতা, আসত্তি ও তাৎপর্য্যার্থ অন্বয়সহ পাঠ করিয়া, তৎসহ বিদুরনীতি এবং কোন এক প্রকরণ হইতে ১০ সর্গ বাল্মীকি রামায়ণের পঠনপাঠন ১ (এক) বৎসরের মধ্যে সমাপ্ত করিবে ।
 
তারপর ১ (এক) বৎসরের মধ্যে সূর্য্যসিদ্ধান্তাদির কোন ১ (এক) সিদ্ধান্ত হইতে গণিত বিদ্যান্তর্গত বীজগণিত, রেখাগণিত ও পাটীগণিতের (যাহাকে) অঙ্কগণিতও বলে, অধ্যয়ন ও অধ্যাপন সমাপ্ত করিবে। নিঘণ্‌টু হইতে জ্যোতিষ পর্যন্ত সমূহ বেদাঙ্গ চারি বৎসরের মধ্যে শেষ করিবে। 
 
তারপর জৈমিনিমুনিকৃত পুর্বমীমাংসাসূত্র ব্যাসমুনিকৃত ব্যাখ্যা সহিত কণাদমুনিকৃত বৈশেষিকসূত্ররূপশাস্ত্র গৌতমমুনিকৃত প্রশস্তপাদভাষ্যসহিত বাৎসায়নমুনি কৃত ভাষ্যসহিত, গৌতমমুনিকৃত সূত্ররূপশাস্ত্র ব্যাসমুনিকৃত ভাষ্যসহিত, পতঞ্জলিমুনিকৃত যোগসূত্র- যোগশাস্ত্র ভাগুরিমুনিকৃত ভাষ্যসহিত, কপিলাচার্য্যকৃত সূত্রস্বরূপ সাংখ্যশাস্ত্র জৈমিনি বা বৌধায়নাদিমুনিকৃত ব্যাখ্যাসহিত ব্যাসমুনিকৃত তথা ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, শারীরক সূত্র ঐতরেয়, তৈত্তিরীয়, ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক-এই দশ উপনিষদ্ ব্যাসাদিমুনিকৃত ব্যাখ্যাসহিত বেদান্তশাস্ত্র এই ৬ (ছয়) শাস্ত্র ২ (দুই) বৎসরের মধ্যে সমাপ্ত করিবে। 
 
তারপর বহ্বচ ঐতরেয় ঋগ্বেদের ব্রাহ্মণ, আশ্বলায়নকৃত শ্রৌতসূত্র, গৃহ্যসূত্র [ যে ব্রাহ্মণ বা সূত্র বেদবিরুদ্ধ হিংসাযুক্ত, তাহাকে প্রমাণ মনে করিবে না ] এবং কল্পসূত্র, পদক্রম ও ব্যাকরণাদির সাহায্যে ছন্দঃ, স্বর, পদার্থ, অন্বয় এবং ভাবার্থ সহিত ঋগ্বেদের পাঠ ৩ বৎসরের মধ্যে সমাপন করিবে। এইভাবে শতপথব্রাহ্মণ ও পদাদির সহিত যজুর্বেদ ২ (দুই) বৎসরের মধ্যে, সামব্রাহ্মণ, পদাদি ও গানসহ সামবেদ ২ (দুই) বর্ষের মধ্যে এবং গোপথব্রাহ্মণ ও পদাদির সহিত অথর্ববেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপন ২ (দুই) বর্ষের মধ্যে সমাপ্ত করিবে। সর্বসমেত ৯ (নয়) বৎসরের মধ্যে ৪ (চারি) বেদের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা শেষ করিবে। 
  •  তারপর ঋগ্বেদের উপবেদ আয়ুর্বেদ যাহাকে বৈদ্যকশাস্ত্রও বলে এবং যাহাতে ধন্বন্তরিকৃত সুশ্রুত, নিঘন্টু ও পতঞ্জলিঋষিকৃত চরকাদি আষ গ্রন্থ আছে, তাহা ৩ (তিন) বর্ষের মধ্যে পাঠ করিবে। সুশ্রুত গ্রন্থে যেরূপ শস্ত্র অর্থাৎ চিকিৎসার অস্ত্র বিষয় লিখিত আছে, তদ্রূপ অস্ত্র প্রস্তুত করিয়া তদ্বারা শরীরের সমস্ত অবয়ব কাটিয়া চিরিয়া দেখিবে এবং তাহাতে যে শারীরিকাদি বিদ্যা লিখিত আছে, তাহার প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিবে। 
  •  তারপর যজুর্বেদের উপবেদ ধনুর্বেদ যাহাকে শস্ত্রাস্ত্র বিদ্যা বলে, যাহাতে অঙ্গিরাদি ঋষিকৃত গ্রন্থ আছে এবং আজকাল যাহার অধিকাংশ পাওয়া যায় না, তাহার পঠন-পাঠন ৩ (তিন) বর্ষের মধ্যে সমাপ্ত করিবে। 
  • তারপর সামবেদের উপবেদ গান্ধর্ববেদ যাহাতে নারদ সংহিতাদি গ্রন্থ আছে, তাহা পাঠ করিয়া স্বর, রাগ, রাগিণী, সময়, বাদিত্র, গ্রাম, তাল ও মূর্ছনাদির যথাবৎ অভ্যাস ৩ (তিন) বর্ষের মধ্যে করিবে। 
  •  তারপর অথর্ববেদের উপবেদ অর্থবেদ যাহাকে শিল্পশাস্ত্র বলে, যাহাতে বিশ্বকর্মা, ত্বষ্টা ও ময়কৃত সংহিতাগ্রন্থ আছে, তাহা ৬ (ছয়) বর্ষের মধ্যে অধ্যয়ন করিয়া বিমান, তার ও ভূগর্ভাদি বিদ্যার প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিবে।

 [ সংস্কারবিধি - বেদারম্ভ প্রকরণ ] 


  • মহর্ষি কথিত গুরুকুলের পাঠ্যক্রমে বর্জিত গ্রন্থ 
 
 ব্যাকরণের মধ্যে 'কাতন্ত্র', 'সারস্বত', 'চন্দ্রিকা', 'মুগ্ধবোধ', 'কৌমুদী', 'শেখর' এবং মনোরমা ইত্যাদি। অভিধানের মধ্যে 'অমরকোষ' প্রভৃতি। ছন্দোগ্রন্থের মধ্যে 'বৃত্তরত্নাকর প্রভৃতি। শিক্ষার মধ্যে 'অথ শিক্ষাং প্রবক্ষ্যামি পাণিনীয়ং মতং য়থা' ইত্যাদি জ্যোতিষের মধ্যে 'শীঘ্রবোধ', 'মুহূৰ্ত্তচিন্তামণি' আদি। কাব্যের মধ্যে 'নায়িকা ভেদ' 'কুবলয়ানন্দ', 'রঘুবংশ' মাঘ', 'কিরাতাৰ্জ্জুন প্রভৃতি। মীমাংসার মধ্যে 'ধর্মসিন্ধু', 'ব্রতার্ক' প্রভৃতি। বৈশেষিকের মধ্যে 'তর্কসংগ্রহ' প্রভৃতি। ন্যায়ের মধ্যে ‘জাগদীশী' প্রভৃতি। যোগের মধ্যে 'হঠপ্রদীপিকা’ প্রভৃতি। সাংখ্যের মধ্যে 'সাংখ্যতত্ত্ব কৌমুদী' আদি। বেদান্তের মধ্যে 'যোগবাশিষ্ঠ', “পঞ্চদশী” | ইত্যাদি বৈদ্যক মধ্যে 'শার্ঙ্গধর' প্রভৃতি। স্মৃতি মধ্যে মনুস্মৃতির প্রক্ষিপ্ত শ্লোক সমূহ ও অন্য সমস্ত স্মৃতি, সব তন্ত্রগ্রন্থ, সব পুরাণ, সব উপপুরাণ এবং তুলসীদাস কৃত রামায়ণ, রুক্মিণীমঙ্গল প্রভৃতি ভাষায় লিখিত যাবতীয় গ্রন্থ। এইগুলি কপোলকল্পিত ও মিথ্যা গ্রন্থ।

প্রশ্ন—এই সকল গ্রন্থে কি কোন সত্য নাই ? 
উত্তর – অল্প সত্য আছে। কিন্তু তৎসঙ্গে বহু অসত্যও আছে, অতএব "বিষসম্পৃক্তান্নবত্যাজ্যাঃ'। যেরূপ অত্যুত্তম অন্ন বিষ-মিশ্রিত হইলে তাহা ত্যাজ্য সেইরূপ এইসকল গ্রন্থও ত্যাজ্য।

প্রশ্ন—আপনি কি পুরাণ ইতিহাসকে মানেন না? উত্তর- হ্যাঁ, মানি। কিন্তু সত্যকে মানি, মিথ্যাকে নহে।

প্রশ্ন – কোনটি সত্য, আর কোনটি মিথ্যা ?

উত্তর – ব্রাহ্মণানীতিহাসান পুরাণানি কল্পান গাথা নারাশাংসীরিতি। ১ ইহা গৃহ্যসূত্রাদির বচন। যাহা ঐতরেয়, শতপথ প্রভৃতি ব্রাহ্মণ গ্রন্থে লিখিত হইয়াছে উহাদের ইতিহাস, পুরাণ, গাথা, নারাশংসী এই পাঁচটি নাম। শ্রীমদ্ভাগবতাদির নাম পুরাণ নহে।

প্রশ্ন – ত্যাজ্য গ্রন্থ সমূহের মধ্যে যে সত্য আছে, তাহা গ্রহণ করেন না কেন? উত্তর– তন্মধ্যে যাহা সত্য, তাহা বেদাদি সত্যশাস্ত্রের এবং মিথ্যা সমূহ তাঁহাদের নিজের। বেদাদি সত্য শাস্ত্র স্বীকার করিলে সকল সত্য গৃহীত হয়। যদি কেহ এই সকল মিথ্যা গ্রন্থ হইতে সত্য গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে মিথ্যাও তাহার গলায় জড়াইয়া যাইবে। অতএব- 'অসত্যমিশ্রং সত্য দূরতস্ত্যাজ্যমিতি' অসত্যমিশ্রিত গ্রন্থকে বিশ্বমিশ্রিত অম্লের ন্যায় পরিত্যাগ করা কর্তব্য।

প্রশ্ন- আপনার মত কী ?

উত্তর – বেদ অর্থাৎ বেদে যাহা যাহা গ্রহণ ও বর্জন করিতে ও পরিত্যাগ করিতে শিক্ষা দিয়াছে সেগুলি যথাবৎ পালন করা ও বর্জনীয়কে বর্জন করা উচিত বলিয়া মানি।  যেহেতু বেদ আমাদের মান্য, সেই হেতু আমাদের মত বেদ। এইরূপই মানিয়া সকল মনুষ্যের বিশেষতঃ আর্য্যদের একমত হইয়া থাকা উচিত।

ইত্যোম্‌

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.