আর্ষ পাঠ-বিধির প্রাণ, পদবাক্য-প্রমাণজ্ঞ, মহাবৈয়াকরণ, তপোমূর্তি, মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী জিজ্ঞাসু
বেদের অতল-স্পর্শী বিদ্বত্তম বিদ্বান্, পাণিনি অষ্টাধ্যায়ী যাঁর কণ্ঠে বিরাজমান, আর্ষ পাঠ-বিধির প্রাণ, পদবাক্য-প্রমাণজ্ঞ, মহাবৈয়াকরণ, তপোমূর্তি, মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জীর জন্ম ১৮৯২ সনের ১৪ই অক্টোবর মল্লূপোতা, বঙ্গা থানা, জালন্ধর জেলা, পাঞ্জাব প্রদেশে ।
পণ্ডিত জীর পিতার নাম শ্রী রামদাস। মাতার নাম শ্রীমতী পরমেশ্বরী । সারস্বত ব্রাহ্মণ, পাঠক গোত্রের ছিলেন তিনি । তাঁর মাতার গোত্র ছিল 'সহজপাল' ।
পণ্ডিত জীর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল মৌজগোবিন্দ এবং প্রচলিত নাম লব্ভুরাম । তাঁর আচার্য-প্রদত্ত নাম - 'ব্রহ্মদত্ত জিজ্ঞাসু' ।
মহতপুর লদ্দনী বলাচৌর নিবাসকালে সেখানে সংস্কৃতের অনেক মহা-বিদ্বানের আবাস ছিল । তাঁর পিতার কর্মস্থল ছিল চক নং. ৯৬ বঙ্গা, লায়লপুর জেলায় (পাকিস্তান) । তিনি ঠিকাদার মুন্শী ছিলেন । উক্ত গ্রামে নিবাসকালে চক নং.৯৭ জৌহল লায়লপুর জেলায় (বর্তমান পাকিস্তান) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে উর্দু শিক্ষা প্রারম্ভ করেন । তৎপশ্চাৎ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষা সম্পন্ন করেন পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে সরকারি হাই-স্কুলে।
৯ বর্ষ আয়ুতে পণ্ডিত জীর মাতা-পিতা উভয়ই দেহত্যাগ করেন । এমতাবস্থায় সরদার বাহাদুর জবাহরসিংহ জী,ঠিকাদার ১৯০৩ সন পর্যন্ত তাঁর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯০৩ সন থেকে ১৯১২ সন পর্যন্ত তাঁর পরিবারের অন্য বয়োজ্যেষ্ঠগণ জন্মভূমি গুরুদাসপুর, মল্লূপোতায় নিয়ে আসেন এবং তাঁর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন । তাঁর গ্রামের একজন ধনী ব্যক্তি শ্রী ছন্নূরাম জী এবং তাঁর বিধবা পুত্রী শ্রীমতী রলোদেবী তাঁকে অত্যন্ত স্নেহপূর্বক প্রতিপালন করেন । গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে উর্দু শিক্ষা সম্পন্ন করেন ১৯০৫ সনে এবং বরনৈকুলর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বঙ্গা থেকে ১৯০৮ সনের মার্চ মাসে উর্দু-মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ।
তৎপশ্চাৎ অকস্মাৎ জালন্ধরের ছানা হাই-স্কুলে ( বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপক ছিলেন মহাত্মা স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জী ) মাস্টার বংশীলাল তথা মাস্টার শিবদয়াল জীর অসীম কৃপায় আর্য কিশনচন্দ্রের বোর্ডিং হাউস কোটে ভোজন ব্যয় নিঃশুল্ক হওয়ার পর তথা প্রধান শিক্ষক মাস্টার সুন্দরসিংহ জী দ্বারা (আর্য) হাই-স্কুল, জালন্ধর-এ শিক্ষা-ব্যবস্থা নিঃশুল্ক করে দেওয়ায় জুনিয়র স্পেশালে অধ্যয়ন কার্য করতে থাকেন । সিনিয়র স্পেশালে বিশেষ আবেদন করে সংস্কৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন । ৯ম-১০ম শ্রেণিতেও সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন । জৌহল গুরুদাসপুর তথা তাঁর গ্রামের বিদ্যালয়সমূহে সর্বদা প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি । সর্বদা অধ্যবসায়ী এবং অত্যন্ত গভীর মনোযোগী ছিলেন ।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন । জুনিয়র-সিনিয়র কক্ষেও সর্বদা ভালো ফলাফল করেছেন । ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণিতে সব বিষয়েই সদা প্রথম অবস্থান করেছেন । সংস্কৃত শিক্ষা, ইংরেজি শিক্ষায় যত শিক্ষক ছিলেন, যত পণ্ডিত ছিলেন, মৌলবি ছিলেন ; তাঁদের সবারই অত্যন্ত স্নেহ-ভালোবাসা তথা কৃপা ছিল পণ্ডিত জীর উপর ।
মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্নের পশ্চাৎ হিন্দি শিক্ষার প্রারম্ভ করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ ভগিনী কর্মদেবীর (মেলাদেবী) নিকট ।
কিছুকাল পর ভজনের মাধ্যমে আর্যসমাজের নৈকট্যলাভ করেন পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী । মহর্ষি দয়ানন্দ জীর প্রণীত অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ অধ্যয়ন করেন তিনি, যা তাঁর জীবনকে অলৌকিক প্রভাবে প্রভাবিত করে ।
১৯১২ সনে আর্যসমাজ,মহর্ষি দয়ানন্দ প্রণীত সত্যার্থ প্রকাশ আদি আর্ষ সিদ্ধান্তের উপর প্রবল আকৃষ্ট হন এবং সংস্কৃতের গহিন অধ্যয়ন, বিশেষতয়া আর্ষ শাস্ত্র সমূহের অধ্যয়ন তথা ঈশ্বর-প্রাপ্তির দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে ৫-ই জুন রাত্রিকালে জালন্ধর থেকে গৃহত্যাগ করেন । ৫০ বর্ষ অজ্ঞাতবাসে থাকেন ।
কনখল নগরে লালা বৈনীপ্রসাদ জীর নিকট, যেখানে স্বর্গীয় পূজ্য স্বামী পূর্ণানন্দ জী সরস্বতী (ভূতপূর্ব মাস্টার সুখদয়াল জী) অবস্থান করছিলেন, সেখানে পণ্ডিত জী পৌঁছান । স্বামীজী (পূর্ণানন্দ জী) গুরুকুল কাঁগড়ীতে অধ্যাপন কালে অষ্টাধ্যায়ী আদি শাস্ত্রের কাশীর প্রকাণ্ড বিদ্বান্ পণ্ডিত কাশীনাথ জীর নিকট বিশদ অধ্যয়ন করেন। পণ্ডিত কাশীনাথ জী ছিলেন মহৎ যোগ্য এবং ত্যাগী ; যোগী,তপস্বী, তীব্রবুদ্ধি বাল-ব্রহ্মচারী মহর্ষি দয়ানন্দ জী তথা আর্ষ শাস্ত্রের পরমভক্ত । স্বামী পূর্ণানন্দ জী গুরুকুল বদায়ু তথা কাশীতেও অধ্যয়ন করেছেন । প্রতিদিন অষ্টাধ্যায়ীর ১০০টি করে সূত্র স্মরণে রাখতেন । তিনি তাঁর ভগিনী সুনীতি দেবীর বিবাহ স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জীর ধর্মপুত্র শ্রী ধর্মপাল ( আব্দুল গফুর ) জীর করান । স্বামী পূর্ণানন্দ জীর সান্নিধ্যে সংস্কৃত শিক্ষা গ্রহণ প্রারম্ভ করেন পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী । বেদাঙ্গপ্রকাশ, উপনিষদ্, অষ্টাধ্যায়ী আদি সর্ব আর্ষ শাস্ত্রের গহিন তথা বিশদ অধ্যয়ন করেন । পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী অষ্টাধ্যায়ীর পরম ভক্ত ছিলেন । একবার তিনি বলেছিলেন, "অষ্টাধ্যায়ীর আটটি অধ্যায়ে ৩২ পাদ রয়েছে, যদি সমগ্র জীবনে একটি পাদও অধ্যয়ন করি, তাহলে নিজেকে সফল ভাববো। সমাপ্তি পরজন্মে সম্পন্ন করবো ।"
অত্যন্ত দৃঢ় সঙ্কল্পব্রতী হয়ে আর্ষ শাস্ত্রের অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে স্বামী পূর্ণানন্দ জী মহারাজের চরণে কনখল, মুরাদাবাদ, বৃন্দাবন, লখনঊ, রায়বরেলী, অমেঠী, ডলমঊ, মসূরী, দেহরাদূন, কাশ্মীর, পঠানকোট, লখনৌতী, গঙ্গোহ, মুলতান, রঘুরাজগঞ্জ আদি নগরে, জঙ্গল-পাহাড়ে অবস্থান করেন তথা অন্তে প্রায়ঃ ৩ বর্ষ ডলমঊ ( রায়বরেলী জেলা) গঙ্গাতটে একান্তবাসে অবস্থান করে স্বামীজীর সান্নিধ্যে অষ্টাধ্যায়ী, মহাভাষ্য, নিরুক্তাদি শাস্ত্রের বিশদ অধ্যয়ন করেন । একদিনে অষ্টাধ্যায়ীর এক পাদ করে কণ্ঠস্থ করতেন । মহর্ষি দয়ানন্দ জীর সাহিত্যসমূহের গহিন অধ্যয়ন এবং অনুশীলন স্বামী পূর্ণানন্দ জীর সান্নিধ্যে সম্পন্ন করেন । পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী বলেন, " আমার মধ্যে মহর্ষি দয়ানন্দ জী এবং আর্ষ শাস্ত্রের প্রতি যে অগাধ ভক্তি বিদ্যমান, তা সব স্বামী পূর্ণানন্দ জীরই অনুগ্রহে । "
এরূপ ভাবে ১৯১২ সনের জুন মাস থেকে ১৯১৮ সনের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায়ঃ ৬ বর্ষ উত্তর ভারতে স্বামী পূর্ণানন্দ জীর চরণে অবস্থান করেন ।
১৯১৮ সনের সেপ্টেম্বর মাসে বিশেষ ঘটনাবশ জ্বরাবস্থাতে খুর্জার বুলন্দশহর জেলায় স্বামীজীর থেকে আলাদা হয়ে অরনিয়া গ্রামে ঠাকুর হরজ্ঞানসিংহজী চৌহান রাজপুতের চৌপালে তথা জঙ্গলে অবস্থান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন , হরজ্ঞানসিংহ জী পণ্ডিত জীর অনেক সেবা করেন ।
ব্রহ্ম জিজ্ঞাসু নামে অজ্ঞাতবাস ছিলেন তিনি । এই সময়কালে তিনি যোগী-মহাত্মাগণের খোঁজে গঙ্গাতটে বিচরণ করতেন ।
১৯২০ সনে সাধু আশ্রম (পুল কালী নদী) হরদুআগঞ্জ অলীগঢ় জেলায় স্বর্গীয় বীতরাগ স্বামী সর্বদানন্দ জী মহারাজের জীবনে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে । উক্ত আশ্রমে লঘুকৌমুদী, সিদ্ধান্তকৌমুদী এর পঠন-পাঠন সর্বথা নিষিদ্ধ ছিল । আশ্রমে অষ্টাধ্যায়ী পাঠদান প্রবর্তিত হলে পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী উক্ত আশ্রমে অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন । বীতরাগ স্বামী সর্বাদনন্দ জী মহারাজের নিকট উপনিষদ্ অধ্যয়ন করেন এবং এক বর্ষ পশ্চাৎ গণ্ডাসিংহ্বালাতে (অমৃতসর) বিরজানন্দ আশ্রমে মহাবিদ্বান্ শ্রী পণ্ডিত শঙ্করদেব জীর নিকট অষ্টাধ্যায়ীর অধ্যয়ন কার্য প্রারম্ভ করেন । প্রায়ঃ ৪ বর্ষ সেখানে অবস্থান করেন । এই সময়ের মাঝখানে ১০ মাস ভরতপুর,মথুরা,আগরা আদি রাজ্যে স্বামী শ্রদ্ধানন্দজী তথা মহাত্মা হংসরাজ জীর অধ্যক্ষতায় ১৯২৩ সনে মলকান নগরে শুদ্ধি কার্যে তাঁর সহপাঠী পণ্ডিত অখিলানন্দ জী, ঝরিয়া এর সাথে অংশ নিয়ে সফলতা প্রাপ্ত হন ।
তৎপশ্চাৎ ১৯২৬ সন থেকে ১৯২৮ সন পর্যন্ত স্বামী শ্রদ্ধানন্দজীর বলিদানের পর পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জীর পূজ্য গুরুবর তিওয়ারী জীর প্রেরণায় এবং মাননীয় পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় জীর মাসিক পাঁচশত রুপি অনুদানে কাশীর পণ্ডিতগণ এবং সন্ন্যাসীগণের অন্তরঙ্গ সভা দ্বারা কাশী হিন্দু শুদ্ধি সভার মন্ত্রী রূপে পণ্ডিত কেদারনাথ সারস্বত, স্বামী রামানন্দ, মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত দেবীপ্রসাদজী কবিচক্রবর্তী আদি বিদ্বানগণের সহযোগে শুদ্ধি কার্য করেন, এই সবকিছুতে তথা কাশীর বিবিধ কার্যক্রমে তাঁর পূজ্য আচার্য শ্রী শঙ্করদেবজী পণ্ডিত জীর সাথে ছিলেন ।
পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী ব্যাকরণের সূর্য শ্রী পণ্ডিত দেবনারায়ণ তিওয়ারী জীর সান্নিধ্যে সম্পূর্ণ মহাভাষ্যাদি শাস্ত্রের বিশেষ অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন । মহান ন্যায়াচার্য পণ্ডিত দুণ্ডিরাজজী শাস্ত্রী, পণ্ডিত গিরীশজী শুক্ল তথা গোস্বামী দামোদর লালজীর নিকট সমগ্র দর্শনের গহিন অধ্যয়ন করেন ।
অমৃতসরে ১৯২৮ সন থেকে ১৯৩১ সন পর্যন্ত রাম ভবনে মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জী সহ তাঁর অন্য শিষ্যগণকে সম্পূর্ণ মহাভাষ্য তথা নিরুক্তাদি শাস্ত্রের পাঠদান দেন । বৈদিক বাঙ্ময় তথা প্রাচীন ইতিহাসের মহান মর্মজ্ঞ পণ্ডিত ভগবদ্দত্তজীর সহিত তিনি মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হন ।
১৯৩১ সন থেকে ১৯৩৫ সন পর্যন্ত শীতলা ঘাটে বিরজানন্দ আশ্রমে রাজমন্দিরে পূর্ববৎ বিদ্যার্থীদের মহাভাষ্যাদি শাস্ত্রের পাঠদানের সময় অদ্বিতীয় মীমাংসক শ্রী চিন্নস্বামী শাস্ত্রী জী তথা তাঁর শিষ্য পণ্ডিত পট্টাভিরাম শাস্ত্রী জীর নিকট মীমাংসা শাস্ত্রের বিশেষ অধ্যয়ন করেন । মহান্ বৈদিক বিদ্বান পণ্ডিত রামরট্ট ররাটে জীর নিকট সমগ্র শ্রৌত শাস্ত্র তথা তৎকালীন কাশীর প্রসিদ্ধ বিখ্যাত বিদ্বানগণের নিকট সর্ব আর্ষ শাস্ত্রের গহিন অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন ।
১৯৩৬ সন থেকে ১৯৪৭ সন পর্যন্ত রাবী তট শাহদরা লাহোর বিরজানন্দ আশ্রমে পণ্ডিত জীর শিষ্যগণকে অষ্টাধ্যায়ী, মহাভাষ্য, নিরুক্ত, দর্শন তথা বেদ এর অধ্যাপনের সাথে-সাথে ব্রাহ্মণ শাস্ত্রেরও বিশেষ অনুশীলন, যজুর্বেদ-ভাষ্য বিবরণ প্রথম ভাগের রচনা, পরোপকারিণী সভা, আজমের সম্বন্ধী বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পন্ন করেন । এই সময়ে 'দেবতাবাদ' বিষয়ে পণ্ডিত শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকরজীর সাথে কয়েক মাস লিখিত শাস্ত্রার্থ করেন এবং বিজয়ী হন । রামলাল কাপুর ট্রাস্ট দ্বারা বিবিধ প্রকাশন কার্য করেন । হায়দ্রাবাদ সত্যাগ্রহে পণ্ডিত জীর অন্য শিষ্য অংশ নেয় ।
১৯৪৭ সনের মার্চ মাস থেকে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত পণ্ডিত জী রাবী তটে অবস্থান করেন । এই সময়ে সেখান থেকে সৈনিকগণ পণ্ডিত জী সহ আরও অনেককে বন্দি করে লাহোর ক্যাম্পে নিয়ে আসে । ৫০-৬০ মন দুর্লভ পুস্তক জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ।
২৮ আগষ্ট দৈবযোগে পালিয়ে অমৃতসরে আসেন ।
১৯২৫ সন থেকে ১৯৫০ সন পর্যন্ত কাশীতে অবস্থান করেন । এ সময়ে শুদ্ধি আদি কার্যে মনোনিবেশ ছিলেন । তৎপশ্চাৎ ১৯৫৩ সনের আগষ্ট মাসে পাণিনি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপন কার্য করেন ।
এই সময়ে অনেক প্রৌঢ় বিদ্যার্থী বিনা বাঁধায় অষ্টাধ্যায়ী পদ্ধতিতে সংস্কৃত তথা ব্যাকরণ জ্ঞান প্রাপ্ত করে । কমপক্ষে ৪০ দিন বা ৬ মাসে গীতা-রামায়ণাদি বোধগম্যে তথা বিবিধ শাস্ত্র, দর্শনাদি শাস্ত্রে পারঙ্গম হয় । 'দ্বাদশসু বর্ষেষু ব্যাকরণং শ্রূয়তে' (১২ বর্ষে ব্যাকরণ অধ্যয়ন ) এর স্থানে ' চতুর্ষু বর্ষেষু ব্যাকরণং শ্রূয়তে' (৪ বর্ষে ব্যাকরণ অধ্যয়ন) সম্পন্ন করে বিদ্যার্থীগণ । কাশীর প্রমুখ বিদ্বান্ পণ্ডিত গিরিধর শর্মা চতুর্বেদী আদি তৎকালীন প্রসিদ্ধ বিদ্বান্গণ পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জীর অষ্টাধ্যায়ীর পদ্ধতিতে পাঠদানে বিমুগ্ধ হয়েছিলেন । কাশীর সমস্ত বিদ্বান্গণ হকচকিত হয়ে গিয়েছিলো এবং সকলে এক স্বরে প্রশংসা করে বলতে থাকেন, "জিজ্ঞাসুজী কোনো দেবী প্রতিষ্ঠিত করেছেন । সেই দেবী অষ্টাধ্যায়ী।''
সাথে মহাভাষ্য,নিরুক্ত, শ্রৌত, মীমাংসা, দর্শনাদির পাঠদান করাতে থাকেন ।
পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী প্রায়ঃ ৩০ বর্ষের অধিক সময় ধরে সরকারি সংস্কৃত কলেজ, বেনারস, বর্তমান বারাণসেয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদ,ব্যাকরণ আদি পরীক্ষার আচার্য, শাস্ত্রী মধ্যমাদি বিষয়ের পরীক্ষক ছিলেন । পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্ত্রী বিষয়ে পরীক্ষক ছিলেন । গুরুকুল কাঁগড়ী, গুরুকুল বৃন্দাবন আদি অনেক প্রসিদ্ধ পাঠশালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিধ বিষয়ের পরীক্ষক ছিলেন । এম. এ. তথা আচার্যগণের ডক্টরেট করানোর মার্গ প্রদর্শন এবং অধ্যাপনা, পাণিনি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষরূপে নিযুক্ত ছিলেন ।
এ ছাড়া তিনি বারাণসেয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় এর বিদ্বৎ পরিষদের নির্বাচিত সদস্য, শিষ্ট পরিষদের সদস্য, কার্যকারিণী পরিষদের সদস্য ছিলেন । ১৯৩৬ সন থেকে পরোপকারিণী সভা, আজমের এর সদস্য, সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভা, দেহলী এর অন্তর্গত ধর্মার্থ সভার সদস্য, কাশী বিদ্বন্মণ্ডলের সদস্য ছিলেন । রামলাল কাপুর ট্রাস্টের প্রধান, মাসিক পত্রিকা 'বেদবাণী' এর সম্পাদক, অখিল ভারতবর্ষীয় বেদ সম্মেলন তথা বিদ্বৎ সম্মেলন, লাহোর-মেরঠ-কলকতা-মথুরা-গুরুকুল বৃন্দাবন তথা গুরুকুল কাঁগড়ী আদি, খুরজা গোরখপুর আদি বেদসম্মেলন-সমূহের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যক্ষ ছিলেন ।
বারাণসেয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা নিযুক্ত শ্রী বদরী নারায়ণ সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় জোশীমঠের (গঢ়বাল) অধ্যাপক পদে ছিলেন । আর্যসমাজের প্রায়ঃ সমস্ত প্রমুখ বিদ্বানগণ, নেতাদের অত্যন্ত উচ্চমার্গের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ছিলেন পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জী ।
কাশী নিবাসকালেই পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জীকে ভারত রাষ্ট্রপতি দ্বারা সর্বোচ্চ সম্মান 'মহামহোপাধ্যায়' উপাধিরূপে সম্মানিত করা হয় ।
এরূপভাবে মৃত্যুর অন্তিমক্ষণ অবধি আর্ষ এবং মহর্ষি দয়ানন্দ জীর সিদ্ধান্তের শ্রেষ্ঠত্ব মণ্ডন তথা তদনুসারে পাণিনীয় ব্যাকরণের অধ্যাপন এবং বৈদিক শাস্ত্রের উপর বিবিধ গবেষণা করতে থাকেন ।
বারণসীতে ১৯৬৪ সনের ২২ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নকালে (২ ঘটিকায়) মহান ঋষি ভক্ত, আর্য জগতের স্তম্ভ ইহলীলা সমাপ্ত করেন ।
গ্রন্থরাজিঃ
1. যজুর্বেদ ভাষ্য-বিবরণ (১৫ অধ্যায়)
2. অষ্টাধ্যায়ী ভাষ্য প্রথমাবৃত্তি
3. বেদবাণী পত্রিকায় বিবিধ সিদ্ধান্তের উচ্চকোটির নিবন্ধসমূহ
4. বেদার্থ-প্রক্রিয়া কে মূলভূত সিদ্ধান্ত (১৯৪৫ সন)
5. যাস্ক ঔর দেবতাবাদ
6. সংস্কৃত পঠন-পাঠন কী অনুভূত সরলতম বিধি
7. নিরুক্তকার ঔর বেদ মে ইতিহাস (১৯৪৫ সন)
8. বেদ ঔর নিরুক্ত
9. দেবাপি ঔর শান্তনু কে বৈদিক আখ্যান কা বাস্তবিক স্বরূপ
-- বিদুষাং বশংবদঃ