পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালঙ্কার
মহান বেদভাষ্যকার, আধ্যাত্মিক শিরোমণি পণ্ডিত হরিশরণ জীর জন্ম ১৯০১ সনের ২রা জানুয়ারি কমালিয়া নগরে ( বর্তমান পাকিস্তান) মাস্টার লক্ষ্মণদাস জীর গৃহে ।
লক্ষ্মণদাস জীর আটজন সন্তান– শান্তিস্বরূপ, হরিশরণ, হরিপ্রেম, বেদকুমারী, রাজকুমারী, হরিশ্চন্দ্র, হরিপ্রকাশ এবং হরিমোহন । পণ্ডিত হরিশরণ জী দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন । তাঁর মাতার নাম সদ্দাম্বাঈ । তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণা এবং কুশল গৃহিণী ছিলেন । শ্রী লক্ষ্মণদাস জী কিছুকাল জালন্ধরে অধ্যাপকরূপে কার্যরত ছিলেন । পরবর্তীতে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন এবং ব্যবসায় অত্যন্ত সফলতা লাভ করেন । সেখানেই তিনি প্রসিদ্ধ বিদ্বান স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জীর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং মহর্ষি দয়ানন্দ জীর বৈদিক বিচারধারা দ্বারা প্রভাবিত হন ।
শ্রী লক্ষ্মণদাস জী অত্যন্ত দৃঢ়ব্রতী, তপস্বী এবং স্বাধ্যায়প্রেমী ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন । বালক হরিশরণ জীরও এই গুণসমূহ বিদ্যমান ছিল । পণ্ডিত জীর প্রারম্ভিক শিক্ষা গুরুকুল মুলতানে সম্পন্ন হয় । উক্ত গুরুকুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন সম্পন্ন করে উচ্চ বিদ্যাধ্যয়নের জন্য গুরুকুল কাঁগড়ীতে প্রবিষ্ট হন । গুরুকুলে তিন বর্ষ পর্যন্ত আয়ুর্বেদ এর বিশদ অধ্যয়ন করেন । স্নাতক পরীক্ষা বেদ বিষয়ে সম্পন্ন করেন ।
পণ্ডিত হরিশরণ জী অত্যন্ত অধ্যবসায়ী, স্বাধ্যায়শীল এবং মেধাবী বিদ্যার্থী ছিলেন । স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তী সকল পরীক্ষায় সদৈব প্রথম স্থান প্রাপ্ত হন । সমগ্র সংস্কৃত শাস্ত্র, ব্যাকরণ শাস্ত্র, দর্শন এবং অন্যাদি সাহিত্যের উপর পারঙ্গম বিদ্বান ছিলেন । ইংরেজি ভাষা, গণিত, ভূগোল এবং বিজ্ঞানের উপরও তিনি বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করেন । ১৯২৩ সনে গুরুকুল কাঁগড়ী থেকে 'সিদ্ধান্তালঙ্কার' উপাধি প্রাপ্ত হন ।
স্নাতক হওয়ার পর তিনি স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জীর প্রেরণায় গুরুকুল কাঁগড়ীতে অধ্যাপন কার্যে প্রবিষ্ট হন । পণ্ডিত জী ১৯৪৬ সনে গুরুকুল ইন্দ্রপ্রস্থের সেবা থেকে নিবৃত্ত হন এবং লাহোরে চলে যান । ভারত-বিভাজন হওয়ার পর তিনি পুনঃ দিল্লীতে আসেন এবং তাঁর অনুজ ভ্রাতা শ্রী হরিমোহন জীর কাছে চলে যান । চূনামণ্ডী, পাহাড়গঞ্জে অবস্থান করতে থাকেন । এখানেই তিনি ক্ষুদ্র আয়তনের একটি কক্ষে কঠোর তপস্যায় নিবিষ্ট হয়ে বেদ-ভাষ্যের মহান যজ্ঞের প্রারম্ভ করেন ।
শ্রী পণ্ডিত হরিশরণ জী অত্যন্ত বিনম্র বিদ্বান্ ছিলেন । অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তাঁর । কারও কাছ থেকে কোনো বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করলে তাকে তিনি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞ জানাতেন এবং সেই জ্ঞান অত্যন্ত উদারচিত্তে হৃদয়ে গ্রহণ করতেন । বেদ-প্রবচন এবং স্বাধ্যায়ই তাঁর জীবনের পরম লক্ষ্য ছিল । কিশোরাবস্থা থেকেই পণ্ডিত জী নিয়মিত আসন, প্রাণায়াম তথা দণ্ড, বৈঠক আদি ব্যায়াম করতেন । একারণে তাঁর শরীর অত্যন্ত সুডৌল এবং বলশালী ছিল । পণ্ডিত জী সাঁতারু এবং ভ্রমণবিলাসী ছিলেন । যুবাবস্থায় হকি এবং ভলিবল খেলায় পারদর্শী ছিলেন । জীবনের অন্তিম চরণে কবিনগর গাজিয়াবাদে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র সুধীরকুমারের (ড. হরিপ্রকাশ জীর সুপুত্র) নিকট ছিলেন । দেহান্তের কয়েক বর্ষ পূর্বে বার্ধক্যজনিত কারণে স্মৃতিলোপ রোগে আক্রান্ত হন । পরন্তু সেসব দিনগুলোতেও তাঁর বেদাধ্যয়ন সদৈব চলমান ছিল । প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে তিনি চতুর্বেদ পারায়ণ সম্পন্ন করতেন। ১৯৯০ সনে আর্যসমাজ সান্তাক্রুজ, বম্বে থেকে পণ্ডিত হরিশরণ জীকে বেদ-বেদাঙ্গ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ।
১৯৯১ সনের ৩রা জুলাই বেদমাতার ক্রোড়ে এই আধ্যাত্মিক শিরোমণি চিরনিদ্রায় লীন হন ।
গ্রন্থরাজিঃ
1. চতুর্বেদ এর আধ্যাত্মিক ভাষ্য
2. সন্ধ্যামন্ত্র [বিশেষ ব্যাখ্যান] (১৯৫০সন)
3. প্রার্থনা মন্ত্র
4. ঈশোপনিষদ্ ব্যাখ্যা
5. সামবেদ উপাসনা (২০১২ বিক্রমাব্দ)
মন্ত্র সংখ্যা ১ থেকে ১০৬ নং মন্ত্র পর্যন্ত
6. প্রভু কে চরণো মে (২০৩২ বিক্রমাব্দ)
7. ঋগ্বেদ কে ঋষি (১৯৫৫ সন)
8. বৈদিক পরিবার ব্যবস্থা প্রতিনিধি (২০১৩ বিক্রমাব্দ)
9. বৈদিক গণিত
10. জীবন-মরণ
11. ঈশ্বর কে অনেক নাম
-- বিদুষাং বশংবদঃ