গান্ধীপুত্রকে যেভাবে বাঁচিয়েছিলো আর্যসমাজ

 


মোহনদাস গান্ধীর জেষ্ঠ্যপুত্র হীরালাল ১৯৩৬এর ২৭শে জুন নাগপুরে ইসলাম কবুল করে এবং তার নাম হয় আব্দুল্লাহ। হীরালাল উরফ আবদুল্লাহ্ সারা ভারতকে দার-উল-ইসলাম বানাবার ঘোষনা করে।মুসলিম সমাজ উল্লাসে ফেটে পড়ে।গান্ধী ভারতের প্রধান নেতা আর তার পরিবারই মুসলমানে পরিনত হবে ! কিন্তু এই আনন্দ শীঘ্রই চরম ক্রোধে পরিণত হয়।
দার-উল-ইসলামের পথে প্রথম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় হীরালালের মেয়ে মনু। যার বয়স ছিল মাত্র সাত!
মুসলিম সমাজের নেতা জাকারিয়া তীব্র ক্ষোভে বলে ওঠেন “আবদুল্লাহ্ তোমার মেয়ে এখনও আর্যসমাজের প্রার্থনাসভায় যায়।ও এখনও মুসলিম হয়নি কেন?ওকে তাড়াতাড়ি মুসলমান বানাও।নয়তো মনুর সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই।” মনুকে জাকারিয়া ধমক দিয়ে বলে “তুমি ইসলাম কবুল করবে না?”
মনু দৃঢ়তার সাথে বলে “না।”
 
“যদি তুমি ইসলাম কবুল না কর তাহলে বোম্বাইয়ের চৌপাটিতে ল্যাংটো করে কুচি কুচি করে কেটে চীল আর কাককে খাওয়াবো।”
 
 “আবদুল্লাহ্ কাফির মেয়েছেলেদের আল্লাহ মুসলমানদের তোওফা দিয়েছে।যদি তোমার মেয়ে ইসলাম কবুল না করে তাহলে তুমি ওকে রাখেল বানিয়ে ভোগ করতে পার।কারণ যে মালী গাছ লাগায় তার ফল খাবার অধিকার আছে।যদি তুমি এমন না কর তাহলে আমিই এই মেয়েকে চৌরাস্তায় ফেলে ভোগ করব।যে কোন ভাবে হিন্দুস্তানকে মুসলমান দেশ বানাতে হবে।তোমাকে ঘরের ভিতর এই জেদী মেয়েকে থেঁৎলে দিতে হবে।”
 
নওমুসলিমের ইমানী জসবায় আবদুল্লাহ্ সেইরাত থেকে নিজের মেয়ে মনুকে ধর্ষন করতে থাকে।কোন মেয়ের কাছে পিতা ঈশ্বরতুল্য সেখানে হীরালাল শয়তান হয়ে গিয়েছিল। অত্যাচারে মনুর রক্তস্রাব হতে থাকে।মরনাপন্ন মনু ঠাকুরদাদা মোহনদাস গান্ধীকে চিঠি লিখে কাতর প্রার্থনা জানায় তাকে উদ্ধারের জন্য।গান্ধী যিনি মহাত্মা নামে পরিচিত তার কোন দয়া হয়নি। তিনি তার নাতনীকে কোন রকম সাহায্য করতে অস্বীকার করেন।অসহায় মনু তখন ঠাকুরমা কস্তুরবাকে চিঠি লেখে।চিঠি পড়ে কস্তুরবার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে....
.
কস্তুরবা অনুভব করেন হীরালাল মুসলমান হয়েই গোমাংস খাচ্ছে আর এমন কুকর্ম করছে।তিনি গান্ধীকে আবেদন জানান আর্য্যসমাজের সহায়তায় হীরালালকে পুনরায় হিন্দু (জইন)করে নিতে ।
 
গান্ধী বলে ওঠেন “অসম্ভব”
“কেন?”
“আমি শুদ্ধি আন্দোলনের বিরোধী।যখন স্বামী শুদ্ধানন্দ মুসলিম মলকানে রাজপুতদের শুদ্ধি করে হিন্দুসমাজে ফেরৎ আনছিলেন তখন আমি তাকে ঠেকাতে বিনোবা ভাবে কে ওখানে পাঠাই সে সেখানে অনশন শুরু করে এবং শুদ্ধি বন্ধ করে।”
“তাহলে মনুর কি হবে !”
“আমিও যেমন উলঙ্গ নারীদের সাথে শুয়ে ব্রহ্মচর্য্য করি তেমনি হবে! ”
“তুমি আর তোমার ছেলের কুকর্মে আমার লজ্জার সীমা নেই।”
 
কস্তুরবা একাই চলে যান বম্বের আর্য্যসমাজ নেতা শ্রীবিজয়শঙ্কর ভট্টর কাছে।কস্তুরবা আঁচলপেতে বলেন “অভাগী নারী কি ভিক্ষা পাব?”
বিজয়শঙ্কর চমকে উঠেন “মা কি চাই তোমার!”
“আমার ছেলেকে ফেরৎ এনে দাও।বিধর্মীদের বুদ্ধিতে পড়ে সে নিজের মেয়ের উপর অত্যাচার করছে।”
“আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব।”
“ভাল কথা।আমি ততক্ষন নিজের ঘরে যাবনা।”কস্তুরবা সেই গৃহেই রয়ে গেলেন।
 
বিজয়শঙ্কর হীরালালের বাড়ি গিয়ে ইসলামের আসল সত্য এবং বেদের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝালেন।সব কথা শুনে হীরালালের অনুশোচনা হল।তখন বিজয়শঙ্কর হীরালালকে দয়ানন্দ সরস্বতী লিখিত সত্যার্থ প্রকাশ পড়তে দিলেন।এর ফলে হীরালাল বম্বেতে খোলাময়দানে হাজার হাজার মানুষের সামনে পুনরায় স্বধর্মে দীক্ষা নিলেন।কস্তুরবা নিজে উপস্থিত রইলেন শুদ্ধিস্থলে এবং হীরালালকে সুস্থজীবনের আশীর্বাদ দিলেন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.