প্রসিদ্ধ শাস্ত্রার্থ মহারথী, তথা প্রভাবশালী ব্যাখ্যাতা পণ্ডিত ওমপ্রকাশ শাস্ত্রী জীর জন্ম দেববন্দ ( সহারনপুর জেলা ) মহাশয় উমরাবসিংহ জীর গৃহে ১৯১১ সনে ।
তাঁর পিতা মহাশয় উমরাবসিংহজী স্বামী দর্শনানন্দজীর ব্যাখ্যান তথা শাস্ত্রার্থ শ্রবণ করে প্রবলভাবে আর্যসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং আর্য সমাজে যোগ দেন । শাস্ত্রীজীর পিতা মহর্ষি দয়ানন্দ জীর অনন্য ভক্ত ছিলেন । পিতার ইচ্ছা ছিলো তাঁর পুত্র ( শাস্ত্রীজী ) স্বামী দর্শনানন্দ জীর ন্যায় শাস্ত্রার্থ-শৈলীতে নিপুণ হওয়া । শাস্ত্রীজীর মাতা শ্রীমতী কিশনদেবী ৯৫ বর্ষ আয়ুতে দেহত্যাগ করেন । তাঁর পিতা ১৯৪৪ সনে দেহত্যাগ করেন ।
শাস্ত্রীজীর প্রারম্ভিক শিক্ষা দেববন্দে সম্পন্ন হয় । ১৯২১ সনে শাস্ত্রী জী গুরুকুল মহাবিদ্যালয়, জ্বালাপুরে প্রবিষ্ট হন ।
তিনি সমগ্র আর্য সিদ্ধান্তের বিশিষ্ট অধ্যয়ন তথা শাস্ত্রার্থ কলার সমস্ত শিক্ষণ আর্য জগতের প্রভাবশালী শাস্ত্রার্থ মহারথী তথা ইসলাম সিদ্ধান্ত, আরবি ভাষা তথা ব্যাকরণের প্রকাণ্ড বিদ্বান্ পণ্ডিতপ্রবর রামচন্দ্র দেহলবী জীর অধীনে সম্পন্ন করেন ।
উক্ত গুরুকুল হতে টানা ১৪ বর্ষ অধ্যয়ন করে ১৯৩৪ সনে শাস্ত্রীজী 'বিদ্যা ভাস্কর' উপাধিতে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক তথা 'শাস্ত্রী' উপাধি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন ।
স্বামী শুদ্ধবোধ তীর্থ, পণ্ডিত ভীমসেন শর্মা, পণ্ডিত পদ্মসিংহ শর্মা তথা পণ্ডিত নরদেব শাস্ত্রীর মতো প্রভাবশালী বিদ্বানগণের অধীনে তিনি ব্যাকরণ, দর্শন, সাহিত্য তথা সমগ্র আর্ষ শাস্ত্র গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন ।
শাস্ত্রীজীর সার্বজনিক জীবন ১৯৩১ সনে আরম্ভ হয়, যখন থেকে তিনি কংগ্রেস মঞ্চে ভাষণ দেওয়া আরম্ভ করেন । ১৯৩৪ সনে থেকে তিনি আর্য সমাজে বরাবর পুরোহিত তথা উপদেশক রূপে প্রচার কার্যে রত হন । শাস্ত্রীজী ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সন পর্যন্ত দিল্লির আর্যসমাজ চাবড়ী বাজার এর পুরোহিত পদে নিযুক্ত ছিলেন ।
তিনি ১৯৩৯ সনে অখিল ভারতীয় স্বামী শ্রদ্ধানন্দ স্মারক ট্রাস্ট, বিহার শাখার প্রতিনিধি রূপে রাঞ্চীতে অবস্থান করে বৈদিক মিশনারির কার্যে রত ছিলেন ১৯৪২ সন পর্যন্ত ।
তৎপশ্চাৎ ১৯৪৩ সনে খতৌলা জেলার মুজফ্ফর নগরে খ্রিষ্টান মিশনারিদের দমন করতে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ ট্রাস্টের নব্য শাখার উন্মোচন করে নিযুক্ত থাকেন । ১৯৫১ সন পর্যন্ত উক্ত কার্যে রত ছিলেন ।
পুনঃ ১৯৬৩ সন পর্যন্ত উত্তর প্রদেশস্থ আর্য প্রতিনিধি সভার মহোপদেশক রূপে বিবিধ কার্যে রত ছিলেন । দুই বছর পর্যন্ত উত্তর প্রদেশস্থ আর্য প্রতিনিধি সভার পুস্তকাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত ছিলেন ।
প্রারম্ভে শাস্ত্রার্থ মহারথীরূপে পণ্ডিতপ্রবর রামচন্দ্র দেহলবী জীর সমীপে অবস্থান করে শাস্ত্রার্থ কলার অভ্যাস পরিপূর্ণ ভাবে রপ্ত করেন তথা মহত্ত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেন ।
এক বার পণ্ডিত দেহলবী জীর আজ্ঞায় লাল কুয়া-স্থিত চার্চে পাদ্রী আহমদ মসীহ, যার সহিত শাস্ত্রার্থ স্বামী দর্শনানন্দ জী তথা পণ্ডিত দেহলবী জীর নির্ধারিত হয়েছিলো, তার সাথে শাস্ত্রীজী শাস্ত্রার্থ করেন । পরবর্তীতে সেই পাদরীর সহিত অনেক শাস্ত্রার্থ পণ্ডিত দেহলবী জীর উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় ।
প্রতিবারই শাস্ত্রীজী পাদ্রীকে পরাস্ত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতেন । প্রায়ঃ সময়ই দেহলবী জী স্বয়ং কিছু না বলে করে শাস্ত্রী জীকে শাস্ত্রার্থ করতে আদেশ দিতেন ।
এই চার্চে প্রত্যেক বুধবার শাস্ত্রী জী মাওলানা খুদাবখ্শের সহিত শাস্ত্রার্থ করতেন শাস্ত্রী জী, যে দিল্লির মুহল্লা বল্লীমারান মসজিদের খ্যাতিমান ইমাম ছিলেন। শাস্ত্রার্থের বিষয় ছিলো পুনর্জন্ম, ত্রৈতবাদ, নিয়োগ আদি ।
এর মধ্যে একটি শাস্ত্রার্থ জীব তথা প্রকৃতির অনাদিত্ব তথা অস্তিত্বের উপর কেম্ব্রিজ মিশনের ইংরেজ পাদ্রী প্রাইজের সাথেও হয় । এই সমস্ত শাস্ত্রার্থে শাস্ত্রীজী অপূর্ব তথা অত্যন্ত প্রভাবময় সফলতা অর্জন করেন । তৎপশ্চাৎ আব্দুল হক পাদ্রী, মাওলানা শের মুহম্মদ, মাওলানা বশীর আহমদ, পাদ্রী ওয়াশিংটন প্রয়াগ, পাদ্রী সাদিক, পাদ্রী লুকের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সহিত সফলতাপূর্বক শাস্ত্রার্থ করেন তথা প্রত্যেককে শাস্ত্রার্থে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন ।
১৯৩৯ সনের জুলাই মাসে সহারনপুর জেলার আর্য উপ-প্রতিনিধি সভার তত্ত্বাবধান 'বেহট' নামক স্থানে পাদ্রী গুলাম মসীহ'র সহিত দুইটি লিখিত শাস্ত্রার্থ তথা দুইটি মৌখিক শাস্ত্রার্থে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেন । শাস্ত্রার্থের বিষয় ছিলো মোক্ষ তথা পুনর্জন্ম ।
পৌরাণিক বিভিন্ন খ্যাতিমান পণ্ডিতের সাথেও শঙ্কা সমাধান এবং শাস্ত্রার্থ করেছেন শাস্ত্রীজী ।
প্রসিদ্ধ পৌরাণিক পণ্ডিত মাধবাচার্য, পণ্ডিত রাজনারায়ণ 'আরমান', শ্রী প্রেমাচার্য তথা পণ্ডিত দীনানাথ শাস্ত্রী, সারস্বত এর মতো ব্যক্তিদের শাস্ত্রার্থে সদা ভয়াবহভাবে পরাস্ত করেছেন শাস্ত্রীজী ।
১৯৬৯ সনের ডিসেম্বর মাসে কাশীতে আয়োজিত মহর্ষি দয়ানন্দ শাস্ত্রার্থ শতাব্দী সমারোহ'র অবসরে পৌরাণিক পণ্ডিত প্রেমাচার্যের বিবিধ শঙ্কা-সমাধান শাস্ত্রীজী করেন ।
তৎপশ্চাৎ মাধবাচার্যকেও আর্যসমাজের প্রতিনিধি রূপে শাস্ত্রীজী শাস্ত্রার্থ করার জন্য আহ্বান করেন । পরন্তু উক্ত শাস্ত্রার্থ শান্তি ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় প্রশাসন অনুমতি প্রদান করে নাই । সেই উৎসবে তাঁর এক ভাষণ বিশেষ প্রভাবশালী হয়, ভাষণের মূল প্রসঙ্গ ছিলো 'সাকারবাদ কী অন্ত্যেষ্টি ' । উক্ত প্রসঙ্গে আর্য সমাজের কোনো বিদ্বানের একটি বচনও উদ্ধৃত না করে কেবল শঙ্কর, রামানুজ, মধ্ব, সায়ণ, হরিপ্রসাদ বৈদিক মুনি, উব্বট, মহীধর আদি পৌরাণিক ভাষ্যকার, পণ্ডিতগণের প্রমাণের আধারে সাকারবাদ, অবতারবাদ, মূর্তিপূজা আদি অবৈদিক সিদ্ধান্তসমূহের অত্যন্ত প্রভাবশালী খণ্ডন করেছিলেন ।
বৈদিক ধর্ম প্রচারার্থ তথা শ্রেষ্ঠত্ব মণ্ডনের নিমিত্তে সমগ্র দেশে অনবরত ভ্রমণ করেছেন তাঁর জীবনকালে ।
গ্রন্থরাজিঃ
1. প্রার্থনা প্রবোধ, সুখদাস্মৃতি গ্রন্থ
মালা - ১ ( ১৯৫৭ সন )
2. বৃক্ষ জড় হৈং, সুখদা স্মৃতি
গ্রন্থমালা -২ ( ১৯৬৩ সন )
3. পৌরাণিক আচার্যোং কী দৃষ্টি মেং সাকারবাদ ( ১৯৭৫ সন )
----- বিদুষাং বশংবদঃ