লেখনীর ধনী, সিদ্ধান্তমর্মজ্ঞ, দিগ্গজ শাস্ত্রার্থ মহারথী তথা প্রতিপক্ষের খণ্ডনে তৎপর শ্রী শিবপূজনসিংহ কুশবাহ জীর জন্ম ১৯২৪ সনের ১লা জুন বিহার প্রান্তের সারণ জেলার গৌরা নামক গ্রামে ।
পণ্ডিত জী শিক্ষা সম্পন্ন করেন এম. এ. (সংস্কৃত) পর্যন্ত । হিন্দি বিদ্যাপীঠ দেবঘর (বিহার) এর সাহিত্যালঙ্কার তথা হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনের বিশারদ পরীক্ষায়ও তিনি সফলতা অর্জন করেন । তিনি সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, বারাণসী থেকে "সাহিত্য শাস্ত্রী" পরীক্ষাও উত্তীর্ণ হন ।
১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ সন পর্যন্ত কুশবাহাজী অনুরাগশূন্য অবস্থায় থাকেন । ১৯৪৪ সনে তিনি প্রসিদ্ধ দানবীর শ্রী ধনীরাম ভল্লা জীর সহিত মিত্রতা করেন তথা তাঁর কার্যালয়ে ৮ বর্ষ কার্য করেন ।
পুনঃ কানপুরের একটি প্রসিদ্ধ কোম্পানির কার্যালয়ে লিপিক পদে কার্যরত থাকেন । শ্রী কুশবাহা জী তাঁর সমগ্র জীবনে আর্যসমাজ এবং বৈদিক ধর্মের সিদ্ধান্তের উপর শত শত মহত্ত্বপূর্ণ তথা পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখ লিখেছেন এবং আর্য সমাজের মহত্ত্বপূর্ণ প্রচার করেছেন ।
বিবিধ আর্যসামাজিক পত্রিকায় তাঁর সহস্রাধিক লেখ প্রকাশিত হয়েছে । পণ্ডিত জীর রচিত " তীর ক্ষীর বিবেক " (মাধবমুখ মহাচপেটিকা) তথা " বৈদিক সিদ্ধান্ত মার্তণ্ড " শাস্ত্রার্থ বিষয়ক অত্যন্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ পুস্তক । প্রসিদ্ধ পৌরাণিক পণ্ডিত মাধবাচার্য দ্বারা মহর্ষি দয়ানন্দ জীর এবং আর্যসমাজের উপর মিথ্যাচার পূর্ণ আরোপ এবং আক্ষেপের সপ্রমাণ খণ্ডন এই পুস্তকসমূহে করা হয়েছে । এ ছাড়া 'বেদ কা স্বরূপ ঔর প্রামাণ্য' নামক স্বামী হরিহরান্দ করপাত্রী রচিত ভ্রান্তিপূর্ণ পুস্তকের অত্যন্ত বিস্তৃতভাবে খণ্ডন করেছেন পণ্ডিত জী ; যা " পৌরাণিক ভ্রমোচ্ছেদন " নামে পরোপকারীণী সভা হতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ।
এ ছাড়া 'ঋষি দয়ানন্দ তথা আর্যসমাজ কো সমঝনে মেং পৌরোণিকোং কা ভ্রম' শীর্ষক পুস্তকেও তিনি পৌরাণিক গোষ্ঠীর মিথ্যা আক্ষেপের সপ্রমাণ খণ্ডন করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছেন ।
কুশবাহ জীর অত্যন্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ পুস্তক 'ক্যা বেদোং মেং মাংস ভক্ষণ কা বিধান হৈ?' পুস্তকটি প্রকাশিত হয় দয়ানন্দ সংস্থান,দিল্লি থেকে ।
এই পুস্তকে পণ্ডিত জী কুখ্যাত মাসিক পত্রিকা সরিতা, দিল্লি ১৯৭৩ সনের ফেব্রুয়ারি (দ্বিতীয়) অঙ্কে প্রকাশিত সনাতন বিদ্বেষী কুখ্যাত সুরেন্দ্র কুমার শর্মা 'অজ্ঞাত' এর লেখ “রক্ত সনে পৃষ্ঠ” এর বিস্তৃত খণ্ডন করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছেন ।
পণ্ডিত জী এই পুস্তকে কুখ্যাত সুরেন্দ্র কুমার সহ সমগ্র প্রকাশনীকে দ্ব্যর্থহীন আহ্বান করেন যে, যদি তাদের লেখনীর দম থাকে তো তাঁর এই পুস্তকের প্রত্যুত্তর যেনো প্রকাশিত করে ।
কুশবাহজীর লেখন শৈলী উদ্ধরণপ্রধান, ফলতঃ তাঁর বিস্তৃত স্বাধ্যায়শীলতা দ্যোতক । প্রতিপক্ষের আক্ষেপাত্মক আরোপে সপ্রমাণ খণ্ডন করে প্রতিপক্ষকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া কুশবাহা জীর অনন্যসুলভ গুণ ।
কানপুর নিবাস কালে কুশবাহা জী "দয়ানন্দ শোধ সংস্থান" স্থাপনা করেন তথা এই সংস্থানের অন্তর্গত রুদ্রগ্রন্থমালা থেকে তাঁর অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । জয়দেব ব্রাদার্স বড়ৌদাও তাঁর অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত করেছে ।
পণ্ডিত শিবপূজন জী এবং ড. আম্বেদকর
আম্বেদকর লিখিত মিথ্যাচারপূর্ণ 'অছূত কৌন ঔর কৈসে" তথা 'শূদ্রো কী খোজ' নামক গ্রন্থে বৈদিক সিদ্ধান্তের উপর যেসব মিথ্যাচার করা হয়েছে, তা সপ্রমাণ খণ্ডন করে পণ্ডিত জীর লিখিত 'ভ্রান্তি নিবারণ' নামক শীর্ষক 'সার্বদেশিক' মাসিক (জুলাই-আগষ্ট মাস, ১৯৫১ সন ) অঙ্কসমূহে প্রকাশিত হয় ।
'অছূত কৌন ঔর কৈসে' এবং 'শূদ্রোং কী খোজ' গ্রন্থদ্বয়ের মুখ্য মুখ্য মিথ্যাচারগুলোকে তিনি সপ্রমাণতার সহিত খণ্ডন করেন । পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী তাঁর স্বীয় প্রণীত আরেকটি মহত্ত্বপূর্ণ পুস্তক ' অথর্ববেদ কী প্রাচীনতা' পণ্ডিত ধর্মদেবজী বিদ্যাবাচস্পতি দ্বারা আম্বেদকরকে প্রেরিত করেছিলেন ।
'অছূত কৌন ঔর কৈসে' গ্রন্থে আম্বেদকর দ্বারা প্রস্তুত মিথ্যাচার-সমূহকে পূর্বপক্ষরূপে নির্দেশিত করে পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী 'ভ্রান্তি নিবারণ' লেখ-এ উত্তরপক্ষ বা সমাধানপক্ষ-রূপে নিরাকরণ করেছেন, এ স্থলে পণ্ডিত জীর দ্বারা আম্বেদকরের কিছু মিথ্যাচারমূলক আক্ষেপের খণ্ডন দর্শানো হলো –
ড.আম্বেদকর –- আর্যগণ নির্বিবাদরূপে দুইটি জাতি এবং দুইটি সংস্কৃতিতে বিভক্ত ছিলো, একটি ঋগ্বেদীয় আর্য গোষ্ঠী তথা অপরটি যজুর্বেদীয় আর্য গোষ্ঠী, এই দুই জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক বৃহৎ পার্থক্য বিদ্যমান ছিলো । ঋগ্বেদীয় আর্যগণ যজ্ঞ বিশ্বাসী ছিলো, অথর্ববেদীয়গণ জাদু-টোনায় ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী — এরূপ দুই প্রকারের আর্য এর কল্পনা কেবল আপনার এবং আপনার ন্যায় মস্তিষ্কধারী কিছু মানুষের কল্পনামাত্র । এটি কেবল সর্বথা কপলোকল্পিত এবং কল্পনাবিলাস মাত্র । এ বিষয়ে এমন কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ অবিদ্যমান । কোনো ইতিহাসবিদও এই মিথ্যা প্রলাপ সমর্থন করেন না । অথর্ববেদে কোনো প্রকারই জাদু-টোনা অবিদ্যমান ।
ড.আম্বেদকর — ঋগ্বেদ-এ আর্যদেবতা ইন্দ্রের সাথে তার শত্রু অহি-বৃত্র (সর্প-দেবতা) যুদ্ধ হয় , যা কালান্তরে নাগদেবতা নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী – বৈদিক এবং লৌকিক সংস্কৃত ভাষার মধ্যে আকাশ-পাতাল অন্তর বিদ্যমান । বৈদিক সিদ্ধান্তে ইন্দ্র এর অর্থ সূর্য এবং বৃত্র এর অর্থ মেঘ । এই সংঘর্ষ আর্যদেবতা এবং নাগদেবতার সাথে নয়, সূর্য এবং মেঘের মধ্যে ঘটিত সংঘর্ষ । বৈদিক শব্দের বিষয়ে নৈরুক্তগণের সিদ্ধান্তই মান্য । বৈদিক নিরুক্ত প্রক্রিয়া সম্বন্ধে পরিপূর্ণভাবে অনভিজ্ঞ হওয়ার কারণে এটি আপনার সর্বথা ভ্রম তথা কপোলপল্পিত চিন্তন ।
ড. আম্বেদকর – মহামহোপাধ্যায় ড. কাণে জীর মত, গো-জাতির পবিত্রতার কারণই বাজসনেয়ী সংহিতায় গোমাংস ভক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী –-
কাণেজী নে বাজসনেয়ী সংহিতার
কোনও প্রমাণ এবং সন্দর্ভ উপস্থাপন করেন নাই এবং না আপনি যজুর্বেদ অধ্যয়ন করার চেষ্টা করেছেন । আপনি যখন যজুর্বেদ স্বাধ্যায় করবেন তখন আপনি স্পষ্টতঃ গোবধ নিষেধ সম্বন্ধী মন্ত্র সর্বত্র লক্ষ্য করবেন ।
ড. আম্বেদকর — ঋগ্বেদ এর মাধ্যমেই স্পষ্ট হয় যে, তৎকালীন আর্য গোহত্যা করতো এবং গোমাংস ভক্ষণ করতো ।
পণ্ডিত শিবপূজন সিংহ জী -- কিছু প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য তথাকথিত গবেষকগণ আর্যগণের উপর গোমাংস ভক্ষণের দোষারোপণ করে, পরন্তু তদ্রূপভাবে প্রাচ্য গবেষকগণও তাদের এই মিথ্যা প্রলাপোক্তি দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করেছেন । বেদে গোমাংস ভক্ষণের বিরোধকারী ২২ জন পাশ্চাত্য গবেষকগণের সন্দর্ভের প্রমাণ আমার নিকট বিদ্যমান । ঋগ্বেদ-এ গোহত্যা এবং গোমাংস ভক্ষণের যে মিথ্যা প্রলাপোক্তি দিয়েছেন , তা বৈদিক সংস্কৃত এবং লৌকিক সংস্কৃত এর প্রভেদ সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অনভিজ্ঞ হওয়ার কারণে দিয়েছেন ।
যেমন বেদে 'উক্ষ' শব্দ বলবর্ধক ঔষধি, পরন্তু লৌকিক সংস্কৃতে এই শব্দের অর্থ 'বলদ' ।
ড. আম্বেদকর — মাংস বিনা মধুপর্ক হওয়া অসম্ভব । মধুপর্কে মাংস এবং বিশেষরূপে গোমাংস একটি আবশ্যক অংশ হিসেবে প্রযুক্ত হয় ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী - বেদে আপনার এই মিথ্যা প্রলাপোক্তি সর্বথা অবিদ্যমান, এই কথন গৃহ্যসূত্রের উপর আধারিত । গৃহ্যসূত্রসমূহের বচন বেদবিরুদ্ধ হওয়ায় তা অপ্রামাণিক । বেদকে স্বতঃ প্রমাণ মান্যকর্তা আর্ষ পরম্পরার পুনরুদ্ধারক মহর্ষি দয়ানন্দ জী সরস্বতীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী - 'দধিতে ঘৃত অথবা মধু মিশ্রিতকে মধুপর্ক বলে । এর পরিমাণ ১২ গ্রাম দধিতে চার গ্রাম মধু অথবা চার গ্রাম ঘৃতের মিশ্রণ ।
ড. আম্বেদকর – অতিথির জন্য গোহত্যা এতই সমৃদ্ধ ছিলো যে, অতিথিকে 'গোঘ্ন', অর্থাৎ গো-হত্যাকারী নামেই সম্বোধন করা হতো ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী — 'গোঘ্ন' শব্দের অর্থ গো-হত্যাকারী নয় । এই শব্দ 'গৌ' এবং 'হন্' কে যোগে গঠিত হয় । গৌ শব্দের অনেক অর্থ হয় – যথা: বাণী, জল, সুখবিশেষ, নেত্র আদি । ধাতুপাঠ শাস্ত্রে মহর্ষি পাণিনি 'হন্' এর অর্থ 'গতি' এবং 'হিংসা' বর্ণনা করেছেন । গতি এর অর্থ — জ্ঞান, গমন এবং প্রাপ্তি । প্রায়ঃ সমস্ত সভ্য দেশগুলোতে যখন কারো গৃহে অতিথি আসে, তখন স্বাগত করার জন্য গৃহপতি ঘর থেকে বাহিরে আসার সময় কিছু গতি প্রাপ্ত করে, চলাফেরা করে, তার সাথে মধুর বাণীতে বাক্যালাপ করে , তৎপশ্চাৎ জল দ্বারা তার সৎকার করে এবং যথাসম্ভব অতিথির তৃপ্তির জন্য অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত করে । তৎপশ্চাৎ জানার প্রয়াস করে প্রিয় অতিথি এসব সৎকার দ্বারা প্রসন্ন হয়েছে কিনা ?
'গোঘ্ন' এর অর্থ - - 'গৌ: প্রাপ্যতে দীয়তে য়স্মৈ স গোঘ্নঃ ' যাকে গৌ-দান করা হয়, সেই অতিথি 'গোঘ্ন' ।
ড. আম্বেদকর – হিন্দু ব্রাহ্মণ হোক অথবা অব্রাহ্মণ, কেবল মাংসাহারীই ছিলো না, গোমাংসাহারীও ছিলো ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী - আপনার এই কথন সর্বথা ভ্রমপূর্ণ, বেদে গোমাংস ভক্ষণের প্রসঙ্গ তো বাদ থাক, কোনো প্রাণীরই মাংস ভক্ষণের বিধান সর্বথা অবিদ্যমান ।
ড. আম্বেদকর –- মনুও গোহত্যা বিরোধে কোনও বিধি দর্শান নাই, তিনি তো বিশেষ ক্ষেত্রে গো-মাংসাহার অনিবার্য দর্শিয়েছেন ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী –- মনুস্মৃতিতে কোনও স্থলেই মাংস ভক্ষণের বর্ণন অবিদ্যমান,যেসব শ্লোক উপলব্ধ তা সর্বথা প্রক্ষিপ্ত । আপনিও এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেন নাই যে, কোন স্থলে মহর্ষি মনু গো-মাংস ভক্ষণ অনিবার্য দর্শিয়েছেন ।
মনু (৫।৫১) অনুসারে হত্যার অনুমতি প্রদানকারী, অঙ্গ-কর্তনকারী, হত্যাকারী, ক্রয় এবং বিক্রয়কারী, রন্ধনকারী, পরিবেশনকারী এবং ভক্ষণকারী সবাই ঘাতক ।
অছূত 'কৌন ঔর কৈসে' এই গ্রন্থ অতিরিক্ত আম্বেদকরের আরেকটি গ্রন্থ - 'শূদ্রো কী খোজ' । এ গ্রন্থেও সে বৈদিক সিদ্ধান্তসমূহের উপর মিথ্যা প্রলাপোক্তি করেছে ।
উক্ত গ্রন্থের খণ্ডনে পূর্ববৎ সমাচার-শৈলীতে পণ্ডিত শিবপূজন জী সমাধান পক্ষ এবং ড. আম্বেদকরকে পূর্বপক্ষ দর্শিয়ে সপ্রমাণ খণ্ডন করেছেন ——
ড.আম্বেদকর –- পুরুষ সূক্ত ব্রাহ্মণগণ তাদের স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রক্ষিপ্ত করেছেন । কোল বুক (পাশ্চাত্য গবেষক) এর কথন পুরুষ সূক্তের ছন্দ তথা শৈলী অনুসারে শেষ ঋগ্বেদ থেকে সর্বথা ভিন্ন । অন্য অনেক গবেষকে মত পুরুষ সূক্ত পরবর্তীকালে সংযোজিত হয়েছে ।
পণ্ডিত শিবপূজন সিংহ জী — পুরুষ সূক্তের উপর আপনি যে মিথ্যা প্রলাপোক্তি উপস্থাপন করেছেন, তা দ্বারা সিদ্ধ হয় বেদ জ্ঞান সম্বন্ধে আপনার পরিপূর্ণ অনভিজ্ঞতার প্রকট হয়েছে ।
আধিভৌতিক দৃষ্টিতে চার বর্ণের পুরুষগণের সমুদায় - 'সংগঠিত সমুদায়' 'এক-পুরুষ' রূপ । এই সমুদায় পুরুষ অথবা রাষ্ট্র-পুরুষ এর যথার্থ পরিচয়ের জন্য পুরুষ সূক্তের মুখ্য মন্ত্র 'ব্রাহ্মণোঽস্য মুখমাসীৎ... ' (যজুর্বেদ ৩১। ১১) শ্রুতির উপর দৃষ্টিপাত করা আবশ্যক –
উক্ত মন্ত্রে বর্ণিত হয়েছে ব্রাহ্মণ মুখ, ক্ষত্রিয় বাহু, বৈশ্য উরু এবং শূদ্র পদ (পা) । কেবল মুখ, কেবল বাহু, কেবল উরু অথবা কেবল পা পুরুষ নয়, বরং মুখ, বাহু, উরু এবং পা 'এর সমুদায়' পুরুষ অবশ্যই হবে । এই সমুদায়ও যদি অসংগঠিত এবং ক্রমরহিত অবস্থায় থাকে, তাহলে তাকে আমরা পুরুষ নামে অভিহিত করতে পারবো না । সেই সমুদায়কে পুরুষ তখনই বলা হবে যখন সেই সমুদায় এক বিশেষ প্রকার ক্রমে বিদ্যমান থাকবে এবং এক বিশেষ প্রকারে সংগঠিত থাকবে ।
রাষ্ট্রে মুখের স্থানাপন্ন ব্রাহ্মণ, বাহু এর স্থানাপন্ন ক্ষত্রিয়, উরুর স্থানাপন্ন বৈশ্য এবং পায়ের স্থানাপন্ন শূদ্র । রাষ্ট্রে এই চার বর্ণ, যখন শরীরের মুখ আদি অবয়ের ন্যায় সুব্যবস্থিত হয়, তখনই একে পুরুষ সংজ্ঞা নামে অভিহিত করা হয় । অব্যবস্থিত অথবা ছিন্ন-ভিন্ন অবস্থায় স্থিত মনুষ্য সমুদায়কে বৈদিক পরিভাষায় পুরুষ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা কদাপি অসম্ভব । আধিভৌতিক দৃষ্টিতে উক্ত মন্ত্র সুব্যবস্থিত তথা একতার সূত্রে শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞান, ক্ষাত্র, ব্যাপার ব্যবসায়, পরিশ্রম-খেটে খাওয়া এসবের নিদর্শক জনসমুদায়ই 'এক পুরুষ'-রূপ ।
চর্চিত মন্ত্রে মহর্ষি দয়ানন্দ জী এই প্রকার অর্থ করেছেন -- ' এই পুরুষের আজ্ঞা অনুসারে বিদ্যা আদি উত্তম গুণ তথা সত্যভাষণ এবং সত্যোপদেশ আদি শ্রেষ্ঠ কর্মসমূহ দ্বারা ব্রাহ্মণ বর্ণ উৎপন্ন হয় । এই মুখ্য গুণ এবং কর্ম ধারণ করলে সেই মনুষ্যগণকে উত্তম বলা হয় এবং ঈশ্বর বল পরাক্রম আদি পূর্বোক্ত গুণসমূহ দ্বারা যুক্ত ক্ষত্রিয় বর্ণকে উৎপন্ন করেছেন । এই পুরুষ উপদেশের মাধ্যমে কৃষিকাজ, ব্যাপারী সব দেশের ভাষা সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়া তথা পশুপালন আদি মধ্যম গুণসমূহ দ্বারা বৈশ্য বর্ণ সিদ্ধ হয়, যেমনভাবে শরীরের সর্বনিম্নের অঙ্গ পা, তদ্রূপ মূর্খতা আদি নিম্ন গুণসমূহ দ্বারা শূদ্র বর্ণ সিদ্ধ হয় ।"
আপনি লিখেছেন পুরুষ সূক্ত পরবর্তীকালে সংযোজিত হয়েছে, ঋগ্বেদে প্রক্ষেপ করা হয়েছে এটি সর্বথা ভ্রমপূর্ণ তথা পরিপূর্ণ মিথ্যাচার । চার বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান, পুরুষ সূক্ত পরবর্তীকালে কদাপি সংযোজিত হয় নাই। আমার একটি পুস্তকে আমি "ঋগ্বেদ কে দশম মণ্ডল পর পাশ্চাত্য বিদ্বানো কা কুঠারাঘাত " সমগ্র পাশ্চাত্য ঔর প্রাচ্য তথাকথিত গবেষকদের এইমতের সপ্রমাণ খণ্ডন করেছি ।
ড. আম্বেদকর –- শূদ্র ক্ষত্রিয়ের বংশজ ক্ষত্রিয় হয় । ঋগ্বেদে সুদাস, শিন্যু, তুরবাশা, তৃপ্সু, ভরত আদি আদি শূদ্রের নাম এসেছে ।
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী – বেদ এর প্রতিটি শব্দ যৌগিক, রূঢ়ি নয় । আপনি ঋগ্বেদ থেকে যেসব নাম প্রদর্শিত করেছেন, তা কোনোটাই ঐতিহাসিক নাম নয় । বেদ-এ কোনো প্রকার ইতিহাস অবিদ্যমান । কেননা বেদ জ্ঞান সৃষ্টির আদিতে প্রকটিত হয়েছে ।
ড. আম্বেদকর — ছত্রপতি শিবাজী শূদ্র তথা রাজপূত হূণের সন্তান। (শূদ্রোং কী খোজ, দশম অধ্যায়, পৃষ্ঠা সংখ্যা. ৭৭-৯৬ )
পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ জী -- শিবাজী শূদ্র নয়, বরং তিনি ক্ষত্রিয় ছিলেন, এর জন্য অনেক প্রমাণ ইতিহাসে বিদ্যমান । রাজস্থানের প্রখ্যাত ইতিহাসজ্ঞ, মহামহোপাধ্যায় ড. গৌরীশঙ্কর হীরাচন্দ ওঝা জী লিখছেন -- 'মারাঠা জাতি দক্ষিণী হিন্দুস্তানে থাকতো । এর প্রসিদ্ধ রাজা ছত্রপতি শিবাজীর বংশের মূল-পুরুষ মেওয়াড়ের সীসোদিয়া রাজবংশ থেকেই ছিলো ।'
কবিরাজ শ্যামলদাসজী লিখেছেন - 'শিবাজী মহারাণা অজয়সিংহ এর বংশজ ছিলেন ।' এই সিদ্ধান্তই প্রসিদ্ধ গবেষক ড. বালকৃষ্ণ জী দিয়েছেন ।
এই প্রকারে রাজপূত হূণের সন্তান নয়, শুদ্ধ ক্ষত্রিয় ছিলেন । শ্রী চিন্তামণি বিনায়ক বৈদ্য এম.এ, শ্রী ই.বী. কাবেল, শ্রী শেরিঙ্গ, শ্রী ব্হীলর, শ্রী হণ্টর, শ্রী ক্রূক, পণ্ডিত নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এম.এম. ডী.এল আদি গবেষকগণ রাজপূতগণকে শূদ্র ক্ষত্রিয় মেনেছেন । অর্থাৎ এইসব ক্ষত্রিয় ভারতীয় এবং রাজপূত একই শ্রেণির ।
১৯৫৬ সনের ৬ই ডিসেম্বর আম্বেদকরের দেহাবসান হয় । শিবপূজনসিংহ জীর উক্ত প্রসিদ্ধ ' ভ্রান্তি নিবারণ ' লেখ 'সার্বদেশিক' মাসিক পত্রিকায় আম্বেদকরের দেহাবসানের প্রায়ঃ ৫ বছর ৩ মাস পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছিলো । উক্ত 'সার্বদেশিক' মাসিক পত্রিকা যথাসময়ে আম্বেদকরের নিকট পৌঁছে যায় ।
মহর্ষি দয়ানন্দ জী সরস্বতী প্রণীত 'ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা' পুস্তক এবং মহাবিদ্বান পণ্ডিত শিবপূজনসিংহ কুশবাহ জীর প্রসিদ্ধ 'ভ্রান্তি নিবারণ' লেখ বিচারশীল, মুক্তমনা পাঠক অধ্যয়ন করে আম্বেদকরের 'অছূত কৌন ঔর কৈসে' এবং 'শূদ্রোং কী খোজ' গ্রন্থের সতত্যা নিরূপণ করতে পারবে ।
গ্রন্থরাজিঃ
1. ঋগ্বেদ কে দশম মণ্ডল পর পাশ্চাত্য বিদ্বানোং কা কুঠারাঘাত (২০০৭ বিক্রমাব্দ)
2. সামবেদ কা স্বরূপ ( ২০১২ বিক্রমাব্দ )
3. অথর্ববেদ কী প্রাচীনতা (২০০৬ বিক্রমাব্দ)
4. মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত বেদ ভাষ্যানুশীলন (২০০৭ বিক্রমাব্দ)
5. গায়ত্রী মাহাত্ম্য (২০১৪ বিক্রমাব্দ )
6. বৈদিকশাসন পদ্ধতি ( ২০১০ বিক্রমাব্দ)
7. ক্যা বেদোং মেং মাংসাহার কা বিধান হৈ?
8. তীর ক্ষীর বিবেক (২০১৮ বিক্রমাব্দ)
9. বৈদিক সিদ্ধান্তমার্তণ্ড ( ২০২০ বিক্রমাব্দ)
10.আর্যসমাজ মেং মূর্তিপূজাধ্বান্তনিবারণ ( ২০০৭ বিক্রমাব্দ )
11. শিবলিঙ্গ পূজাপর্যালোচন (১৯৬০ সন)
12. অষ্টাদশ পুরাণ পরিশীলন (১৯৬১ সন)
13. নারদ পুরাণ কা আলোচনাত্মক অধ্যয়ন (২০২৮ বিক্রমাব্দ)
14. মার্কণ্ডেয় পুরাণ : এক সমীক্ষা ( ২০২৯ বিক্রমাব্দ)
15. বামনাবতার কী কল্পনা ( ২০০৭ বিক্রমাব্দ)
16. সত্যার্থপ্রকাশ ভাষ্য [ তৃতীয় সমুল্লাস ]
( ১৯৫৫ সন)
17. মহর্ষি দয়ানন্দ কী দৃষ্টি মেং 'যজ্ঞ' (২০১০ বিক্রমাব্দ)
18. আর্যসমাজ কে দ্বিতীয় নিয়ম কী ব্যাখ্যা (২০০৬ বিক্রমাব্দ )
19. ভারতীয় ইতিহাস ঔর বেদ (২০০৭ বিক্রমাব্দ),
20. বৈদিক কাল মেং তোপ ঔর বন্দুক
21. পাশ্চাত্যোং কী দৃষ্টি মেং বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান (২০১১ বিক্রমাব্দ)
22. বৈদিক দেবতা রহস্য
23. 'বৈদিক এজ' পর সমীক্ষাত্মক দৃষ্টি (১৯৫৮ সন)
24. উপনিষদোং কী উৎকৃষ্টতা, (২০১০ বিক্রমাব্দ)
25. ভারতীয় ইতিহাস কী রূপরেখা পর এক সমীক্ষাত্মক দৃষ্টি
26. বাইবেল মেং বর্ণিত বর্বরতা তথা অশ্লীলতা কা দিগদর্শন (২০১১ বিক্রমাব্দ)
27. ঈসাঈ দম্ভ কা প্রত্যুত্তর (২০১১ বিক্রমাব্দ)
28. 'আর্য দয়ানন্দ সরস্বতী ঔর মসীহী মত' পর্যালোচন
29. পাশ্চাত্যোং কী দৃষ্টি মেং ইসলামী - মত প্রবর্তক (২০১২ বিক্রমাব্দ)
30. ইসলাম কে স্বর্গ ঔর নরক পর মহর্ষি দয়ানন্দ কী আলোচনা কা প্রভাব (১৯৬৩ সন)
31. আর্যোং কা আদি জন্মস্থান নির্ণয় ( ১৯৬৯ সন)
32. মহর্ষি দয়ানন্দ তথা আর্যসমাজ কো সমঝনে মেং পৌরাণিকোং কা ভ্রম (১৯৬০ সন)
33. ক্যা বেদ মেং মৃতক শ্রাদ্ধ হৈ ?
34. শ্রী সত্য সাঈ বাবা কা কচ্চা চিট্ঠা ( ১৯৭৭ সন)
35. কুশবাহা ক্ষত্রিয়োৎপত্তি মীমাংসা
36. রাঠৌর কুলোৎপত্তি মীমাংসা
37. জাদু বিদ্যা রহস্য
38. শতপথ ব্রাহ্মণ কা ভ্রষ্ট ভাষ্য (১৯৭৯ সন)
39. ইন্দ্র অহল্যা উপাখ্যান কা বাস্তবিক স্বরূপ ঔর মহর্ষি দয়ানন্দ (১৯৮৩ সন)
40. আচার্য মহীধর ঔর স্বামী দয়ানন্দ কে যজুর্বেদ মাধ্যন্দিন ভাষ্য কা তুলনাত্মক অধ্যয়ন কা আলোচনাত্মক অধ্যয়ন
41. গায়ত্রী মীমাংসা (১৯৮৭ সন)
42. সতী দাহ : এক লোমহর্ষণ প্রথা ? (১৯৮৭ সন)
43. হনুমান কা বাস্তবিক রূপ (১৯৮৬ সন)
44. মনোবৈজ্ঞানিক জাদু বিদ্যা কে চমৎকার (১৯৯০ সন)
45. পদ্মপুরাণ কা আলোচনাত্মক অধ্যয়ন (১৯৯০ সন)
46. গর্গ-মুখ-মহাচপেটিকা
47. আর্য সমাজ কে দ্বিতীয় নিয়ম কী ব্যাখ্যা
48. আর্য কা আদি জন্মস্থান নির্ণয়
49. ভারতীয় ইতিহাস কী রূপরেখা পর এক সমীক্ষাত্মক দৃষ্টি
50. আর্য শব্দ কা বাস্তবিক অর্থ
51. ' আর্য সমাজ মে মূর্তিপূজা ' ধ্বান্ত নিবারণ
52. ভারতীয় সাহিত্য ঔর সংস্কৃতি এক মূল্যাঙ্কন
53. বৈদিক শাসন পদ্ধতি