[ পূর্বতন নাম - মাওলানা গোলাম হায়দার ]
[ প্রসিদ্ধ বিদ্বান্ পণ্ডিত ভোজদত্ত শর্মা দ্বারা শুদ্ধিকৃত ]
পণ্ডিত সত্যদেব জী ( মাওলানা গোলাম হায়দার ) আরবি ভাষা, ব্যাকরণ তথা ফারসী ভাষার উৎকৃষ্ট এবং প্রভাবশালী বিদ্বান্ ছিলেন । সেইসাথে তৎকালীন সময়ে মুসলিমদের নিকট গণ্যমান্য খ্যাতিমান মৌলভিও ছিলেন । তিনি বেনারসের গোলা দীনানাথ অঞ্চলের নিবাসী ছিলেন । তাঁর জন্ম মুসলিম পরিবারে ।
মাওলানা গোলাম হায়দারের সময়কালে আর্য জগতের প্রসিদ্ধ বিদ্বান, 'আর্য মুসাফির' নামে তথা যিনি শাস্ত্রার্থ মহারথীদের কারিগর নামে খ্যাত, পণ্ডিত ভোজদত্ত শর্মা জী আগরাস্থিত তাঁর স্বীয় প্রতিষ্ঠিত ' আর্য মুসাফির বিদ্যালয় ' সঞ্চালন করার সাথে 'আর্য মুসাফির' নামক খ্যাতনামা সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনে তথা লেখাকার্যেও সক্রিয় ভূমিকায় অবস্থান করছিলেন ।
পণ্ডিত ভোজদত্ত জী একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ইসলামের বিবিধ সিদ্ধান্তকে খণ্ডনপূর্বক প্রকাশিত করেন । উক্ত পত্রিকা মাওলানা গোলাম হায়দারের দৃষ্টিগোচর হয়, সেই পত্রিকা পড়ে তিনি অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে যান। একদিন তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন যে, ইসলামের সমালোচনা করার দরুণ পণ্ডিত লেখরামের ন্যায় পণ্ডিত ভোজদত্ত জীও 'ওয়াজিবুল কত্ল' ( হত্যার যোগ্য ) । তিনি পণ্ডিত ভোজদত্ত জীকে হত্যা করার জন্য মনস্থির করেন এবং উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল করতে পণ্ডিত ভোজদত্ত জীর বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন । পরন্তু যখন মাওলানা গোলাম হায়দার পণ্ডিতজীর দিব্য মূর্তি এবং ভব্য ব্যক্তিত্বকে অত্যন্ত গভীরভাবে দর্শন করেন তথা তাঁর ব্যাখ্যা শ্রবণ করেন ; তো সাথে সাথেই প্রভাবিত হয়ে মাওলানার মনে ধর্ম বিষয়ক বিবিধ শঙ্কা পণ্ডিত ভোজদত্ত জীর সমক্ষে প্রস্তুত করেন ।
পণ্ডিত ভোজদত্ত জী মাওলানার সমস্ত শঙ্কা অত্যন্ত গভীরভাবে সপ্রমাণতার সহিত বিস্তারিতভাবে সমাধান করেন । এই প্রকারে পণ্ডিত ভোজদত্ত জীর নির্ভীকতা তথা মহত্ত্বপূর্ণ ধর্মাচরণে প্রভাবিত হয়ে মাওলানা গোলাম হায়দারের হৃদয় পরিবর্তন হয়ে যায় মূহুর্তের মধ্যে ।
তখন তিনি পণ্ডিত ভোজদত্ত জীকে সেই অস্ত্র দেখান, যা দ্বারা পণ্ডিত জীকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ।
সমস্ত সত্যতা প্রকাশ হওয়ার পরও পণ্ডিত ভোজদত্ত জীর স্থিতপ্রজ্ঞতায় কোনো পরিবর্তন আসে নাই । তাঁর আকৃতি, স্বভাব পূর্বের মতোই শান্ত, সৌম্য তথা তেজস্বীতাপূর্ণ ছিলো ।
তখন মাওলানার হৃদয়ে এক অতীব বিচিত্র অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তিনি ঐ মূহুর্তে, ঐ স্থলে ইসলামকে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করে পণ্ডিত ভোজদত্ত দ্বারা শুদ্ধ হয়ে বৈদিক ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেন এবং " পণ্ডিত সত্যদেব " নামে খ্যাত হন ।
মাওলানা গোলাম হায়দারের শুদ্ধ হয়ে বৈদিক ধর্মী হওয়ার ঘটনাটি আর্যসমাজে বৃহৎ উপলব্ধি ছিলো । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামের অন্য একজন উচ্চকোটির মর্মজ্ঞ আর্য বিদ্বান্ পণ্ডিত দেবপ্রকাশ ( পূর্বতন নাম - মাওলানা আব্দুল লতিফ ) পণ্ডিত সত্যদেবের নিকট অভিনন্দন হিসেবে একটি মহত্ত্বপূর্ণ কবিতা প্রেরিত করেন, যা সেই সময় 'আর্য মুসাফির' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সেই মহত্ত্বপূর্ণ কবিতার কিছু লাইন নিম্নে তুলে ধরা হলো -
" তুঝে বৈদিক ধর্ম মেং এ সজ্জন আনা মুবারিক হো ।
সচ্চাঈ কা জলবা য়ে দিখলানা মুবারিক হো ।
অবিদ্যা কী ঘটাওং ঔর খিজাং কে তুন্দ ঝোকোং সে ।
নিকল কর গুলশনে বহদত মেং আজানা মুবারিক হো । "
লেখন কার্য —–
1.অর্শসওয়ার [ কুরানের ইংরেজি অনুবাদক মাওলানা মোহাম্মদ আলী 'অর্শ' শব্দের যে ব্যাখ্যা লিখেছে, তার খণ্ডন ] ( ১৯২৪ সন )
2. কুরান মেং পরিবর্তন [ মাওলানা মোহাম্মদ আলী লিখিত গ্রন্থ, জমা কুরান কা উত্তর ] (১৮৮৪ বিক্রমাব্দ )
3. অফশাএ রাজ
4. নারাএ হৈদরী
5. কুরান মেং তহরীফ ( কুরানে পরিবর্তনের মূল, উর্দু ভাষায়)
6. কুরান মেং ইখ্তলাফাত ( ১২টি ভাগ )
7. ইসলাম কা পরিচয় (১৯২৮ সন )
8. ইসলামী ধর্মানুসার সৃষ্টি উৎপত্তি (১৯১৪ সন )
9. রহমতমসীহ এর লিখিত 'বেদোং কী তাদাত ' নামক গ্রন্থের খণ্ডন –
রহমতমসীহ বশীর শাহকোটী নামে একজন খ্রিষ্টান 'বেদোং কী তাদাত' নামক এক আক্ষেপাত্মক, মিথ্যাচার গ্রন্থ রচনা করে, যাতে অথর্ববেদকে বেদের মধ্যে সম্মিলিত করে 'বেদত্রয়ী' স্থানে চার বেদের নাম যুক্ত করার জন্য মহর্ষি দয়ানন্দ জীর কটু আলোচনা করে । এই পুস্তক উর্দুতে দয়ানন্দ মত খণ্ডনী সভা, ইন্দ্রপ্রস্থ হতে প্রকাশিত হয় ।
সুপ্রসিদ্ধ আর্যোপদেশক পণ্ডিত বিহারীলাল শাস্ত্রী উক্ত নিকৃষ্ট গ্রন্থের খণ্ডন করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন , পণ্ডিত বিহারীলাল শাস্ত্রী জীর প্রণয়নকৃত পুস্তক পণ্ডিত সত্যদেব জী উপর্যুক্ত শীর্ষক প্রদানপূর্বক পুস্তক রূপে জার্জ প্রিন্টিং বক্স কালভৈরব, কাশী থেকে মুদ্রিত করে প্রকাশিত করেন । পুস্তকের উত্তরার্দ্ধ স্বয়ং পণ্ডিত সত্যদেব প্রণয়ন করেন ।
10. শাস্ত্র পরিচয় – অর্থাৎ হিন্দু আর্য়োং কে বিচারনে যোগ্য বেদ আদি শাস্ত্রোং পর এক দৃষ্টি সংখ্যা (১৯২৫ সন)
11. বেদ তথা ব্রাহ্মণ গ্রন্থোং মেং ওম্-মির্জাঈ মত কে এক আক্ষেপকর্তা কা উত্তর
12. জৈনকাল ভ্রমোচ্ছেদ
13. জৈন শাস্ত্রোং কী কাট ছাণ্ট
14. বৌদ্ধ ধর্মসমীক্ষা
15. দিব্যনাদ
16. হিন্দু আর্য়োং কে বিচারনে যোগ্য বেদ সম্বন্ধী লেখোং পর এক দৃষ্টি
পণ্ডিত সত্যদেব জী আরবি মূল আয়াতের সহিত কুরানের হিন্দি অনুবাদের উদ্যোগও নিয়েছিলেন । তিনি 'কুরান কেবল অরবোং কে লিএ হৈ' শীর্ষক এক বৃহৎ মহত্ত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রণয়নেরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন , যা সম্ভবতঃ তিনি সম্পন্ন করতে পারেন নাই । তিনি 'ধর্মদিবাকর' নামক পত্রিকারও প্রকাশক ছিলেন ।
— বিদুষাং বশংবদঃ