পণ্ডিত ধর্মদেব‌ জী‌ সিদ্ধান্তালঙ্কার, বিদ্যাবাচস্পতি, বিদ্যামার্তণ্ড, সংস্কৃত ধুরীণ,তর্ক মনীষী, সাহিত্য ভূষণ



পণ্ডিত ধর্মদেব‌ জী‌ সিদ্ধান্তালঙ্কার, বিদ্যাবাচস্পতি, বিদ্যামার্তণ্ড, সংস্কৃত ধুরীণ,তর্ক মনীষী, সাহিত্য ভূষণ


সমগ্র‌ আর্ষ‌ শাস্ত্রের‌ অপ্রতিম বিদ্বান্, লেখক, চিন্তক, বিচারক, মহান শাস্ত্রার্থ মহারথী পণ্ডিত ধর্মদেব (ধর্মানন্দ সরস্বতী) জীর‌  জন্ম  ১৯০১ সনের ১২ই ফেব্রুয়ারি  মুলতান (পাকিস্তান) জেলার দুনিয়াপুর গ্রামে ।

তাঁর পিতার নাম শ্রী নন্দলাল। গুরুকুল কাঁগড়ীর প্রারম্ভিক স্নাতকগণের মধ্যে পণ্ডিত ধর্মদেব জী অন্যতম । তাঁর শিক্ষার প্রারম্ভ হয় গুরুকুল মুলতানে।  ১৯০৯ সন থেকে ১৯১৬ সন‌ অবধি এই গুরুকুলে প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি । তদুপরান্ত ১৯১৭ সন থেকে ১৯২১ সন পর্যন্ত গুরুকুল কাঁগড়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জী তথা প্রফেসর‌ রামদেব জীর চরণে উপবিষ্ট হয়ে বিস্তৃত বিদ্যাধ্যয়ন করেন তিনি। ১৯২১ সনের‌ ২৩ মার্চ তিনি 'সিদ্ধান্তালঙ্কার'  উপাধি প্রাপ্ত হন ।  ১৯২৫ সনে 'বৈদিক কর্তব্য শাস্ত্র‌' এবং 'ভারতীয় সমাজশাস্ত্র' বিষয়ে শোধ প্রবন্ধ প্রণয়ন করেন এবং 'বিদ্যাবাচস্পতি'  উপাধি অর্জন করেন । গুরুকুল কাঁগড়ী বিশ্ববিদ্যালয় পণ্ডিত জীর বিশিষ্ট বৈদিক অধ্যয়ন, পাণ্ডিত্য তথা লেখন প্রতিভা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে 'বিদ্যামার্তণ্ড' উপাধিতে বিভূষিত করেন । এ ছাড়াও তিনি কাশী থেকে সংস্কৃত ধুরীণ, অযোধ্যা থেকে তর্ক মনীষী এবং সাহিত্য ভূষণ উপাধি‌তে ভূষিত‌ হন ।

প্রারম্ভে পণ্ডিত জী গুরুকুল মুলতানের আচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন । তৎপশ্চাৎ তিনি স্বামী শ্রদ্ধানন্দ জীর আদেশানুসারে দক্ষিণ ভারতে প্রচারক রূপে  ১৯২১ সন থেকে ১৯৪১ সন পর্যন্ত অবস্থান করেন । এই সময়কালে তিনি কন্নড়, তেলেগু, তামিল তথা মালয়ালম ভাষার জ্ঞানার্জন করেন এবং কন্নড় ভাষায় বিবিধ সাহিত্য‌ প্রণয়ন করেন । ১৯৪২ সন থেকে ১৯৫৩ সন পর্যন্ত সার্বদেশিক সভার সহায়ক মন্ত্রী পদে কার্যরত‌ থাকেন এবং সভার মাসিক মুখপত্র 'সার্বদেশিক' পত্রিকার সম্পাদনে রত‌ থাকেন । ১৯৫৪ সন থেকে ১৯৬৩ সন পর্যন্ত পণ্ডিত জী শ্রী শ্রদ্ধানন্দ প্রতিষ্ঠানে (গুরুকুল কাঁগড়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত) বেদাধ্যাপন করান এবং 'সংস্কৃত-হিন্দী-ইংরেজি কোশ' নামক বৃহৎ‌ গ্রন্থ‌ প্রণয়ন‌ করেন । এ সময়কালে তিনি 'গুরুকুল পত্রিকা' এর‌ও সম্পাদন করতে থাকেন ।  ১৯৭৬ সনের ৮ই ফেব্রুয়ারি মহান বিদ্বান আনন্দ স্বামী জীর‌ সামীপ্যে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করেন স্বামী ধর্মানন্দ সরস্বতী নামে দীক্ষিত হন



  •  শাস্ত্রার্থের‌ ইতিহাস 

 

পণ্ডিত জী দক্ষিণ ভারতে অবস্থানকালে সার্বদেশিক আর্য প্রতিনিধি সভার তত্ত্বাবধানে দলিতোদ্ধার, শুদ্ধি তথা প্রচার আদি‌ মহত্ত্বপূর্ণ কার্যে রত থাকেন । এই সময়কালে‌ তিনি‌ পৌরাণিক, খ্রিষ্ট-মতাবলম্বী, ইসলাম-মতাবলম্বী, বৌদ্ধ-জৈন‌-নাস্তিক‌ আদিদের‌ সহিত‌ বিবিধ‌ বিষয়ে প্রভাবপূর্ণ‌ শাস্ত্রার্থ‌ করেন এবং বিজয়ী হন । 

 মুখ্যতয়া বাল্যবিবাহ, জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, মূর্তি-পূজা, যজ্ঞে পশুহিংসা, পশুবলি, আদি বিষয়ে শাস্ত্রার্থ করেন  । বাল্যবিবাহের ঔচিত্যের উপর শাস্ত্রার্থ করার জন্য পণ্ডিত জী সমগ্র মৈসূর রাজ্যের পণ্ডিতবর্গকে তথা বেদ পাঠশালা তথা সংস্কৃত পাঠশালার অধ্যাপকগণকে প্রকাশ্যে আহ্বান করেন  । 

উক্ত আহ্বান শৈলী নিম্নরূপ ছিলো –

য়ঃ কশ্চিন্নিগমাগমার্থনিপুণো মৈসূররাজ্যেঽখিলে 

রূঢ়া বাল্যবিবাহপদ্ধতিরিয়ং বেদানুকূলা ধ্রুবম্ ॥ 

ইত্থং সাধুমিদং সমস্তবিদুষাং সিদ্ধং সমক্ষে‌ ভবেত


 সোঽয়ং সপ্রণয়ং প্রমোদসহিতং বিদ্বান্ময়া মন্যতে ॥ ”


এই শাস্ত্রার্থ  অনুষ্ঠিত হয়  ১৯৩১ সনের‌ ২৪শে জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে শঙ্কর মঠে । কর্নাটক ভাষায় শাস্ত্রার্থের বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশিত হয় । শাস্ত্রার্থের প্রত্যক্ষদর্শী সংস্কৃত কলেজের এক প্রিন্সিপাল পণ্ডিত চন্দ্রশেখর শাস্ত্রী জী‌ পণ্ডিত ধর্মদেব‌ জীকে‌ বলেন, “আপনার নির্ভীক কথন শৈলীর প্রভাবে পৌরাণিক পণ্ডিতবর্গকে সিংহের সমক্ষে শৃগালবৎ এর অনুরূপ দৃশ্যমান । 

বিপক্ষী বিদ্বান্ ছিলেন 'বীরকেসরী' পত্রিকার সম্পাদক পণ্ডিত সীতারাম শাস্ত্রী  । তিনি পণ্ডিত ধর্মদেব জীর দুরধিগম্য যুক্তির প্রভাবে অত্যন্ত প্রভাবিত হন এবং নতি স্বীকার করে তার কন্যার‌ বিবাহ ১৮ বর্ষ আয়ুতে‌ দেন ।


১৯৩৮ সনে‌ ধর্মাবরম্-এ যজ্ঞে পশু হিংসা বিষয়ে শাস্ত্রার্থে এতো গহিন প্রভাব পড়ে যে‌,  “অহিংসা ধর্ম প্রচারক পণ্ডিত ধর্মদেব কী জয়”  এই স্লোগানে‌ সর্বত্র‌ মুখরিত হয় । শঙ্কর মন্দিরে পণ্ডিত ধর্মদেব‌ জীর‌ ভাষণ শ্রবণ‌ করে একটি পূর্ণ সভায় এক ব্রাহ্মণ  পণ্ডিত জীর চরণ‌ স্পর্শ করে বলেন, “আপনি শঙ্করের অবতার । আপনি আমারকে সত্য‌ মার্গ‌ দর্শন করিয়েছেন । আমিও পশুহিংসাত্মক যজ্ঞের সমর্থক ছিলম, এখন বুঝতে‌ পারছি‌ কতোই‌ না পাপ‌ করেছি । ” 

 ১৯৩৭ সনে চন্নপট্টনের (মৈসূর) এক মন্দির প্রাঙ্গণে প্রসিদ্ধ লিঙ্গায়ত কথাবাচক বিদ্বান্ পণ্ডিত শিবমূর্তি শাস্ত্রী জী পণ্ডিত ধর্মদেব‌ জীর‌ সহিত‌ মূর্তিপূজা বিষয়ে শাস্ত্রার্থ করেন । শিবমূতি‌ জী‌ পরাস্ত‌ হয়ে  স্বীকার করেন যে‌, বেদ এবং উপনিষদে  মূর্তিপূজার কোন‌ও প্রমাণ নেই ।

 উডুপী মঠে (দক্ষিণ কর্নাটক ) ১৯২৩ সনে প্রসিদ্ধ পৌরাণিক-মণ্ডলীর‌ সহিত বর্ণব্যবস্থা বিষয়ে শাস্ত্রার্থ করেন এবং বিজয়ী হন ।

খ্রিষ্ট-মতাবলম্বী এবং ইসলাম-মতাবলম্বীদের‌ সহিত‌ও পণ্ডিত জী অনেক প্রভাবপূর্ণ শাস্ত্রার্থ করেন । এক খ্রিষ্ট মতবাদী প্রফেসর কোইলো ১৯২৩ সনে মদুরা নগরে মহর্ষি দয়ানন্দ জীর বেদ ভাষ্য শৈলী বিষয়ে শাস্ত্রার্থের আহ্বান করে ।  পণ্ডিত জী আহ্বান স্বীকার করে তার সাথে শাস্ত্রার্থ‌ করেন এবং তাকে‌ চূর্ণ-বিচূর্ণ‌ করে দেন । 

 আর্য‌ জগতের‌ মহান‌ স্তম্ভ ১৯৭৮ সনের‌ ৮ই নভেম্বর দেহত্যাগ‌ করেন ।


গ্রন্থরাজিঃ


1. Hymns of the Sam Veda (English Translation of Sam Veda with notes and comments (১৯৬৭ সন)


2.Some Psalms of the Sam Veda Samhita  (১৯৬৬ সন)



 3. The RigVeda: An English Translation of the Commentary of Swami Dayanand Sarasvati. 


4. বৈদিক কর্তব্য শাস্ত্র  [বেদ মন্ত্রের আধারে আচারশাস্ত্র নিরূপক গ্রন্থ ] (১৯২৮ সন)


5. স্ত্রীয়ো কা বেদাধ্যয়ন ঔর বৈদিক কর্মকাণ্ড মে অধিকার (১৯৪৮ সন)


6. বেদো কা মহত্ত্ব (১৯৬২ সন)


7. বেদো কা যথার্থ স্বরূপ (২০১৪ বিক্রমাব্দ)


8.বেদ মূলক আর্য রাজনীতি


9. ৬. বেদভাষ্য কা তুলনাত্মক অনুশীলনঃ ভূমিকা 


10. এক মন্ত্র কে অনেক অর্থ 


11. সামসঙ্গীত সুধা 


12. বেদো কা সার্বভৌম সন্দেশঃ ভাষণ (১৯৫৪সন)


13. মহর্ষি দয়ানন্দ ঔর মহাত্মা গান্ধী (১৯৫১সন)


14. ঋষি দয়ানন্দ কে মন্তব্য পর তুলনাত্মক বিচার (১৯৮১ বিক্রমাব্দ), 


15. উদারতম আচার্য মহর্ষি দয়ানন্দ


16. মহর্ষি দয়ানন্দ কে বেদভাষ্য কী বিশেষতায়ে (২০১২ বিক্রমাব্দ)


17. মহর্ষি দয়ানন্দ ঔর অন্য বেদভাষ্যকার


18. মহর্ষি দয়ানন্দ কে আদর্শ কা আর্যসমাজ (১৯৭৬ সন)


19. Maharishi Dayanand and  Satyarthprakash (১৯৪৫ সন)


20.  The Mission and Message of Maharishi Dayanand



21. ভারতীয় সমাজশাস্ত্র (১৯৩২ সন)


22. হমারী রাষ্ট্রভাষা (১৯৪৬ সন)


23. হমারী রাষ্ট্রভাষা ঔর লিপি (১৯৪৮ সন)


24. বৈদিকধর্ম আর্যসমাজ প্রশ্নোত্তরী (১৯৩৯ সন)


25. আর্য ধর্ম নিবন্ধ মালা 


26. গোরক্ষা পরম কর্তব্য ঔর গোহত্যা মহাপাপ


27. বৌদ্ধ মত ঔর বৈদিক ধর্ম


28. ব্রহ্মপারায়ণ যজ্ঞ কী শাস্ত্রীয়তা (১৯৫২সন)


29. ভক্তি কুসুমাঞ্জলি ১ম এবং ২য় ভাগ

 

30. ধর্মশিক্ষা


31. বৈদিক ঈশ্বরবাদ এবং বর্তমান বিজ্ঞান


32. শ্রদ্ধা-মাতা


33. অমর ধর্মবীর স্বামী শ্রদ্ধানন্দ 


33. মহাপুরুষ কীর্তনম্  [ সংস্কৃত‌ ] (২০১৬ বিক্রমাব্দ) 


34. মহিলামণি-কীর্তনম্ [ সংস্কৃত‌ ] (১৯৬৩ সন)


35. A Catechism of Vedic Dharma and Aryasamaj (১৯১৫ সন)


36. The Glory of the Vedas 


37. Christianity and the Vedic Dharma


38. What is Arya Samaj ?


39. Concept of God in Christianity and Vedic Dharma


40. The Sublimity of the Vedas 


41. The Significance of the Vedic Sanskaras


42. The Mission and Message of the Martyr


43. Papers on the Vedic Teachings on World peace and Synthesis of Religion and Science


44. Child Marriage Bill (published by Civil and Social Programme Association Bangalore.)


45. Vedic Sanskrit : Mother of All Languages


46. Mahatma Buddha : An Arya Reformer.


কন্নড় ভাষায় প্রকাশিত‌ গ্রন্থরাজিঃ –


47. জাতি ভেদবিচার


48.  বৈদিক ঈশ্বর কল্পনে


49. ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতীবরূ শ্রী মন্মাধবাচার্যরূ হতর সিদ্ধান্তগল তুলনাত্মক বিচার


50. পশুবলি নিষেধ 


51. অস্পৃশ্যতা নিবারণ


52. আর্যসমাজ বেন্দরেনূ ?


53. বৈদিক সন্ধ্যাগ্নিহোত্র 


-- বিদুষাং বশংবদঃ 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.