স্বামী সমর্পণানন্দ জী সরস্বতী
[পূর্বাশ্রমীয় নাম:পণ্ডিত বুদ্ধদেব জী বিদ্যালঙ্কার]
অদ্ভুত বাগ্মী, উদ্ভট্ বিদ্বান্ তথা সর্ব শাস্ত্রের অতলস্পর্শী অধ্যেতা, শাস্ত্রার্থ মহারথী পণ্ডিত সমর্পণানন্দ জীর জন্ম ১৮৯৫ সনের ১লা আগষ্ট দেহরাদূন নগরের নিকট কৌলাগড় ( সহারনপুর জেলা ) গ্রামে পণ্ডিত রামচন্দ্র জীর গৃহে ।
পণ্ডিত জী মুদল গোত্রোৎপন্ন ব্রাহ্মণ ছিলেন । তিনি মূলতঃ উত্তর প্রদেশের নিবাসী ছিলেন । পণ্ডিত জীর মাতার নাম শ্রীমতী যশবতী দেবী, যিনি পণ্ডিত কৃপারাম জীর কন্যা ছিলেন । ইনি সেই পণ্ডিত কৃপারাম জী, যিনি মহর্ষি দয়ানন্দ জীকে দেহরাদূন নগরে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তথা মহর্ষির প্রবচনের সর্বপ্রকারের সুচারু ব্যবস্থা করেছিলেন ।
স্বামী সমর্পণানন্দ জীর বাল্যনাম ছিলো নবীনচন্দ্র । তিনি সাত বর্ষ বয়সে গুরুকুল কাঁগড়ীতে প্রবিষ্ট হন এবং অধ্যয়ন সমাপ্তির পশ্চাৎ সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯১৬ সনে "বিদ্যালঙ্কার" উপাধি প্রাপ্ত হন । গুরুকুল কাঁগড়ীর প্রারম্ভিক স্নাতক ছিলেন।
স্বামী সমর্পণানন্দ জী আর্য প্রতিনিধি সভা, পাঞ্জাবে অনেক বর্ষ উপদেশক পদে কার্যরত ছিলেন । তৎপশ্চাৎ তিনি ধর্ম প্রচারে স্বতন্ত্ররূপে কার্যরত থাকেন । কিছুকাল তিনি গুরুকুল কাঁগড়ীতে অধ্যাপন কার্যেও নিযুক্ত ছিলেন । তাঁর পত্নীর নাম শ্রীমতী সুশীলা দেবী । তাঁর দুই কন্যা– অপরাজিতা এবং প্রভাতশোভা । কালান্তরে তিনি সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করে স্বামী সমর্পণানন্দ নামে প্রসিদ্ধ হন । পণ্ডিত জী আর্য জগতের অত্যন্ত উচ্চকোটির বিদ্বান্ এবং প্রতিষ্ঠিত নেতা ছিলেন । হায়দ্রাবাদ আর্য সত্যাগ্রহে অংশ নিয়ে তিনি কারাভোগও করেন ।
ছিলেন একজন প্রতিভাবান শাস্ত্রার্থ কর্তা, প্রগল্ভ লেখক । সমগ্র জীবনে তিনি সহস্রাধিক শাস্ত্রার্থ করেছেন এবং প্রতিটি শাস্ত্রার্থে বিজয়ী হয়েছেন । দক্ষিণ হায়দ্রাবাদে প্রসিদ্ধ পৌরাণিক মাধবাচার্যের সহিত মূর্তিপূজা বিষয়ে সুপ্রসিদ্ধ শাস্ত্রার্থ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।
১৯৫৩ সনের নভেম্বর মাসে ডীডওয়ানা আর্যসমাজের তত্ত্বাবধানে পণ্ডিত জী মাধবাচর্য এবং অখিলানন্দের সহিত 'যজ্ঞে পশুহিংসা' এবং 'মহর্ষি দয়ানন্দ জীর প্রণীত সাহিত্য-সমূহের বৈদিকতা' বিষয়ে চার ঘণ্টা শাস্ত্রার্থ করেন । এই শাস্ত্রার্থে সমগ্র পুরাণের অশ্লীল, অবৈজ্ঞানিকতা সহ পুরাণের সত্যস্বরূপ তুলে ধরে তাদের সমস্ত মিথ্যাচার খণ্ডন করেন । ১৯৫৫ সনের মে মাসে পালী স্থিত স্বামী রূপারামজীর বিজ্ঞান আশ্রমে পণ্ডিত জী এক গরীবদাসী সম্প্রদায়ের সাধুর সাথে অদ্বৈতবাদ বিষয়ে শাস্ত্রার্থ করেন । শাস্ত্রার্থে তিনি ব্রহ্মসূত্রের অপশূদ্রাধিকরণ প্রকরণের শঙ্করকৃত ব্যাখ্যার এতোটা মার্মিক সমালোচনা করেন যে, প্রতিপক্ষী সম্পূর্ণ নিরুত্তর হয়ে যায় । তিনি মধ্যপ্রদেশের নীমচ নগরে অসংখ্য প্রসিদ্ধ পৌরাণিকের সাথে শাস্ত্রার্থে বিজয়ী হয়েছেন । তৎপশ্চাৎ লাহোরের ছাবনীতেও পৌরাণিকদের সহিত প্রসিদ্ধ শাস্ত্রার্থ করেছেন ।
১৯৬৬ সনের মে মাসে গুরুকুল চিত্তৌড়গঢ়ে আয়োজিত বেদ সম্মেলনে ভাগ পণ্ডিত জী শাস্ত্রার্থ সম্বন্ধী অনেক মনোরঞ্জক প্রসঙ্গের ব্যাখ্যান দিয়েছিলেন । নিপুণ শাস্ত্রার্থকর্তা কীভাবে প্রতিপক্ষীকে মূহুর্তের মধ্যেই নিগ্রহ স্থানে আবদ্ধ করেন তার অনন্য শৈলী দর্শিয়েছিলেন । তিনি আফ্রিকাতেও বৈদিক ধর্মের প্রচার-প্রসার করেছেন।
১৯৩৯ সনে তিনি মেরঠে 'প্রভাত আশ্রম গুরুকুল' স্থাপনা করেন, যা 'স্বামী সমর্পণানন্দ বৈদিক শোধ সংস্থান' নামেও খ্যাত । আর্য প্রতিনিধি সভা, পাঞ্জাবের প্রধান পদেও ছিলেন পণ্ডিত জী ।
১৯৬৯ সনে ১৪ই জানুয়ারি দিল্লীতে তিনি দেহত্যাগ করেন ।
পণ্ডিত জীর রোচকপূর্ণ জীবনী আরও বিস্তারিতভাবে জানতে নিম্নোক্ত ভিডিয়ো দ্রষ্টব্য --
পূজ্য স্বামী সমর্পণানন্দ জীর প্রতিষ্ঠিত গুরুকুল "প্রভাত আশ্রম" এর তথ্যচিত্র
গ্রন্থরাজিঃ
1. অথর্ববেদ ভাষ্য (আংশিক)
আর্য প্রতিনিধি সভা, পাঞ্জাবে "আর্য" নামক মাসিক মুখপত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ।
2. শতপথ ব্রাহ্মণ ভাষ্য [১-৩ কাণ্ড] (১৯৭৩ সন)
3. শতপথ মে এক পথ (১৯৮৬ বিক্রমাব্দ) শতপথ ব্রাহ্মণ শাস্ত্রের অধ্যয়নের অত্যন্ত সহায়ক গ্রন্থ
4. অথ মরুৎসূক্ত (১৯৮৮ বিক্রমাব্দ)
5. সপ্ত সিন্ধ সূক্ত
অথর্ববেদ এর চতুর্দশ কাণ্ডের ভাষ্য
6. প্রাতঃ সূক্ত
7. ঋগ্বেদ কা মণিসূত্র
8. মণ্ডল মণি সূত্র
ঋগ্বেদ এর মণ্ডলসমূহে প্রস্তুত বিচারধারার পারস্পরিক সামঞ্জস্য স্থাপিতকারী গ্রন্থ
9. পশু বলি বেদ শাস্ত্র বিরুদ্ধ হৈ
10. কিসকী সেনা মে ভর্তী হোঙ্গে ? কৃষ্ণ কী য়া কংস কী ? (১৯৫৩ সন)
সরিতায় প্রকাশিত রতনলাল এর বংসল 'আজ কা সবসে বড়া দেশদ্রোহঃ গোপূজা' শীর্ষক লেখ এর খণ্ডন
11. বেদো কে সম্বন্ধ মেং ক্যা জানো ঔর ক্যা ভুলো?
12. গোপাবর্ত ( গো-জাতির মহত্ত্ব নিরূপণ)
13. বর্ণ ব্যবস্থা ঔর উস পর আক্ষেপ (১৯৯৫ বিক্রমাব্দ)
14. বর্ণ ব্যবস্থা কে চার সূত্র
15. কায়াকল্প (১৯৯৬ বিক্রমাব্দ)
বর্ণ ব্যবস্থা বিষয়ে সারগর্ভিত ব্যাখ্যা
16. মনু ঔর মাংস (১৯৭২ বিক্রমাব্দ)
17. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সমর্পণ ভাষ্য (২০২৭ বিক্রমাব্দ)
18. বৈদিক অগ্নিপ্রকাশ
কারাবাস-কালে দেওয়া বিবিধ প্রবচনের সংগ্রহ । সংকলনকর্তা– শ্রী ইন্দ্ররাজ
19. সুর ঔর অসুর
20. পাণিনি প্রবেশিকা (সংস্কৃত ভাষা শিক্ষণ)
21. অথ ব্রহ্মযজ্ঞ (১৯৯০ বিক্রমাব্দ)
22. অথ দেবযজ্ঞ (১৯৯৩ বিক্রমাব্দ) [অগ্নিহোত্র ব্যাখ্যা]
23. পঞ্চযজ্ঞপ্রকাশ (১৯৪০ সন)
24. উসকী রাহ পর (১৯৯৬ বিক্রমাব্দ) [কাব্য সংগ্রহ]
25. প্রার্থনাবলী
26. তিন দেবতা
27. বিখরে হুএ ফুল,
28. ভারতীয় লোক সংঘ কী স্থাপনা ক্যো
29. সংসার কা পুনর্নির্মাণ
30. সাম (১৯৩১ সন)
31. স্বর্গ
32.. হিন্দু সমাজ মত চুক
-- বিদুষাং বশংবদঃ