ছন্দোমঞ্জরী নামক বিখ্যাত ছন্দগ্রন্থের লেখক হলেন গঙ্গাদাস। ছন্দোমঞ্জরী ছাড়াও অচ্যুতচরিত মহাকাব্য, শ্রীকৃষ্ণশতক, সূর্যশতক প্রভৃতিও তাঁর রচনা। কবি বৈদ্যকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলে। তাঁর পিতার নাম ছিল গোপালদাস এবং মাতার নাম সন্তোষা। ছন্দোমঞ্জরীর উপসংহারে তিনি জানিয়েছেন
সর্গৈঃ ষোড়শডিঃ সমুজ্জ্বলপদৈ-নব্যাসমব্যাশয়ৈ ।
যেনাকারি তদচ্যুতস্য চরিতং কাব্যং কবিপ্রীতিদম্ ।।
কংসারেঃ শতকং দীনেশশতকদ্বন্দ্বঞ্চ তস্যাত্ত্বসৌ।
গঙ্গাদাসকবেঃ শ্রুতৌ কুতুকিনাং সচ্ছন্দসাং মঞ্জরী।।
ছন্দোমঞ্জরীর সূচনায় – দেবং প্রণম্য গোপালং বৈদ্যগোপালদাসাত্মজঃ' ইত্যাদি শ্লোকে গোপালকে প্রণাম জানাবার জন্য কুলক্রমাগত দিক থেকে তাঁকে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন ছন্দের উদাহরণের শ্লোকগুলি তিনি কৃষ্ণকথা থেকে সংগ্রহ করেছেন। লেখকের ছন্দোগ্রন্থে অনর্ঘরাঘবের রচয়িতা মুরারি এবং জয়দেবের উল্লেখ থাকায় তিনি খ্রীষ্টীয় পঞ্চদশ শতকে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। গঙ্গাদাসের পূর্ববর্তী বিভিন্ন ছন্দশাস্ত্রের সার সংকলন করে ছন্দোমঞ্জরী রচিত হয়। প্রথম স্তবকে তিনি বলেছেন—
সস্তি যদ্যপি ভূয়াংসশ্ছন্দোগ্ৰন্থা মণীষীণাম্ ।
তথাপি সারমাকৃষ্য নবকার্য্যোমমোদ্যমঃ ।।
পিঙ্গলের ছন্দঃশাস্ত্রে যেমন বৈদিক ছন্দের আলোচনা পাওয়া যায় এখানে তা নেই। গঙ্গাদাস পিঙ্গলের ছন্দগুলিকে বর্ধিত করেছেন, আবার কোথাও কোথাও বিশেষ উপরিভাগকে বর্জন করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে একই ছন্দ পিঙ্গলে ও গঙ্গাদাসে বিভিন্ন নামে কথিত হয়েছে। এখানে মোট ২৮০টি ছন্দের আলোচনা আছে এবং গ্রন্থটি ৬টি স্তবকে রচিত। গদ্যে সূত্রকারে রচিত হলেও এখানে প্রতিটি ছন্দের লক্ষণ সেই ছন্দেই করা হয়েছে। উদাহরণের শ্লোকে অনেক সময় ছন্দের নামটিও শোনা যায়। চূর্ণক, উৎকলিকা, বৃত্তগন্ধী প্রভৃতি গদ্যছন্দের সোদাহরণ আলোচনা এখানে রয়েছে। অনেক অপ্রচলিত ও লুপ্তপ্রায় ছন্দের আলোচনাও গঙ্গাদাস করেছেন। সহজবোধ্যতাই হল গ্রন্থটির সম্পদ। যতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে গ্রন্থকার বলেছেন
শ্বেতমাণ্ডব্যমুখ্যাস্তু নেচ্ছস্তি মুনয়ো যতিম্।
ইত্যাহ ভট্টঃ স্বগ্রন্থে গুরুর্মে পুরুষোত্তমঃ ।।
গঙ্গাদাসের গুরু পুরুষোত্তম ভট্ট কোনো ছন্দঃ শাস্ত্রের রচয়িতা ছিলেন বলে বোঝা যায়। কিন্তু শ্বেতমাণ্ডব্য কারা? এবং কেন তাঁরা যতি স্বীকার করেন না এই সম্পর্কে কোনো তথ্য গঙ্গাদাস দেন নি। পুরুষোত্তম ভট্ট রচিত ছন্দঃগ্রন্থটি যেহেতু পাওয়া যায় না, তাই শ্বেতমাণ্ডব্যদের সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া অসম্ভব।