আর্য‌ বিদুষী ড. প্রজ্ঞা দেবী



                      
আর্য‌ বিদুষী ড. প্রজ্ঞা দেবী

মহর্ষি‌ পাণিনি এবং মহর্ষি দয়ানন্দ জীর বংশবদা, বেদের‌ অতলস্পর্শী বিদ্বত্তম বিদ্বান তথা‌ কাশীর‌ মহাবৈয়াকরণ মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জিজ্ঞাসু জীর‌ শিষ্যা,  আর্য‌ জগতের বিদ্বত্তম বিদ্বান মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জীর সতীর্থা শ্রদ্ধেয়া আর্য বিদুষী ড.প্রজ্ঞা দেবী জীর জন্ম ১৯৩৭ সনের‌ ৫ মার্চ মধ্যপ্রদেশের সতনা জেলার কোলগবাঁ নামক গ্রামে শ্রী কমলা প্রসাদ আর্য জীর গৃহে‌


তাঁর মাতার নাম শ্রীমতী হরদেবী জী আর্য । ১৯৫৪ সনে তাঁর পিতা শ্রী কমলা প্রসাদ জী ৪৬ বর্ষ আয়ুতে দেহত্যাগ‌ করলে‌ পণ্ডিতা‌ জীর মাতা হরদেবী জী‌ সপরিবারে বেনারসে চলে‌ আসেন। 


বেনারসের‌ কাশীতে‌ পণ্ডিতা‌ জী‌ আর্য‌ জগতের দিগ্‌গজ মহারথী‌, আর্ষ-পাঠবিধির‌ প্রাণ‌ পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জীর সান্নিধ্যে বেদ‌, বেদাঙ্গ, দর্শন আদি‌ সমগ্র‌ বৈদিক সাহিত্য বিশদভাবে অধ্যয়ন করেন



 একবার মধ্য প্রদেশের রীবা‌ রাজ্যের নরেশ শ্রী গুলাব সিংহ জীর মহারানি তাঁর রাজসভায় সতী দর্শনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন । এক মুসলিম দরবারী মহারানিকে পণ্ডিতা‌ জীর‌ মাতা হরদেবী জীকে দর্শন করা‌র বিষয়ে‌ বলে ।  মহারানি  মাতা হরদেবী জীকে‌ দর্শন করেন ।  এমন মাতা-পিতার‌  গৃহে‌ জন্মেছিলেন বিদুষী‌ প্রজ্ঞা দেবী জী ।


 ১৯৬৯ সনে‌ তিনি বেনারসের‌ বিখ্যাত "সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়" থেকে "বিদ্যাবারিধি"  উপাধি প্রাপ্ত হন  ।

 ১৯৭১ সনের ১২ই জুলাই তিনি কাশীতে জিজ্ঞাসু স্মারক পাণিনি কন্যা মহাবিদ্যালয়  স্থাপনা করেন ১৯৭২ সনে‌ বিদ্যালয়ের  বিধিবৎ উদ্‌ঘাটন হয় । বিদ্যালয়ে‌ নারীদের জন্য  সংস্কৃতের বিশেষ পাঠদান দেওয়া হয় । বেদ, ব্যাকরণ, দর্শন তথা সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের উচ্চস্তরীয় শিক্ষার এক প্রমুখ কেন্দ্র বিদ্যালয়টি  ।


তিনি আজীবন কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন‌ করেন অর্থাৎ, অখণ্ড ব্রহ্মচারিণী ছিলেন  তথা‌ তাঁর অনুজ‌ ভগিনী যজ্ঞময়ী-মাতা আচার্যা মেধাদেবীর‌ সাথে‌ আর্ষ‌ শিক্ষা‌ প্রদানে রত‌ থাকেন ।  পরিণামস্বরূপ তাঁর স্বীয় প্রতিষ্ঠিত গুরুকূলে অনেক বিদুষী কন্যা‌ তৈরি হয় ।

 দুই ভগিনীর‌  মার্মিক কার্য প্রণালী এমন মহত্ত্বপূর্ণ ছিলো‌, যার‌ আলঙ্কারিক-বর্ণন সামবেদের ১৭৫১ নং মন্ত্রে বিদ্যমান‌, দুইজনের মধ্যে কোনো বৈমত্য ছিল না, ছিল না দ্বৈধ ভাব, এক প্রাণ দুই শরীর ছিল । উল্লেখ্য‌, পূজ্য আচার্য সুদ্যুম্ন জী তাঁর ভ্রাতা‌ ছিলেন । 


বারাণসীতে যখন কাশী শাস্ত্রার্থ শতাব্দী উদযাপন করা হচ্ছিল, তখন পুরীর শঙ্করাচার্য নিরঞ্জন দেব তীর্থ আর্য-সমাজকে শাস্ত্রার্থের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তখন পূজ্যা ড. প্রজ্ঞা দেবী জী গর্জে উঠে বলেছিলেন, “কন্যা তো আমি দয়ানন্দের। কিন্তু শঙ্করাচার্যের দৃষ্টিতে তো আমি (নারী) পায়ের জুতো। আজ জুতো এবং শঙ্করাচার্যের মধ্যে শাস্ত্রার্থ হবে, তখন বোঝা যাবে যে, পায়ের জুতো লাফিয়ে কোথায় গিয়ে পড়ে”। এমনই নির্ভীক এবং শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন তিনি। 


 ১৯৯৫ সনের ৬ই ডিসেম্বর‌ সন্ধ্যা‌ ৭টার সময় জ্ঞানদীপিকা বিদুষী প্রজ্ঞা দেবী জী দেহত্যাগ করেন । তাঁর দেহান্তের পশ্চাৎ গুরুকূল সঞ্চালনের দায়িত্ব নেন ভগিনী বিদুষী আচার্যা মেধাদেবী জী ।


পাণিনি-মন্দিরম্ : কাশীতে অনেক মন্দির রয়েছে যেখানে বিবিধ পৌরাণিক দেবতার পূজা হয়ে থাকে ।  এসব মন্দিরের মধ্যে একটি মানস মন্দির ছিলো‌ যেখানে রামচরিত-মানসের প্রতিটি চৌপাঈ অত্যন্ত গম্ভীর‌ শৈলীতে‌ পাঠদান করা হতো ।

 পণ্ডিতা প্রজ্ঞা দেবী জীর‌‌ও ইচ্ছা ছিলো অষ্টাধ্যায়ীর প্রত্যেক সূত্র গম্ভীর‌ তথা‌ অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ শৈলীতে‌ পঠন-পাঠন করানো‌ । কিন্তু তা‌ স্বপ্ন‌ই থেকে যায় ।

 পরবর্তীতে তাঁর স্বপ্নকে‌ পূর্ণ করেন অনুজ ভগিনী আচার্যা মেধাদেবী জী এবং আচার্যা নন্দিতা জী । আজ এই মন্দির তার স্বীয় ভব্য রূপে সর্বজনের অত্যন্ত‌ গম্ভীর দর্শনীয় । কোনোরূপ মূর্তি বিনাই এই মন্দিরে মহান বৈয়াকরণ‌ মহর্ষি পাণিনি‌র দর্শন আজ‌ও হৃদয়মন্দির দ্বারা‌ উপলব্ধি করা যায়  । 


নারীরত্না স্নেহময়ী প্রজ্ঞাদেবী জীর জীবনে  একটি ঘটনা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ  ।

 সুদামা নামে এক দস্যু  পণ্ডিতা জীর প্রবচন শ্রবণ‌ করেই সন্ন্যাসী হয়ে যান‌ । 


   গ্রন্থরাজিঃ


1.‌ মন্ত্র মালিকা (১৯৮৩ সন )

 

2. দেবসভা (১৯৮৩ সন )


3.‌ উরুধারা নারী (১৯৮৫ সন

নারী সন্দর্ভিত ৫০০ মন্ত্র তথা নারীবাচক শতনামের আধারে রচিত শোধ নিবন্ধ


4.‌ স্বমন্তব্যামন্তব্যপ্রকাশ ব্যাখ্যানমালা (১৯৮৭ সন)


5. নবগ্রহোং কা শুভাগমন (১৯৮৭ সন)


6.‌ পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জিজ্ঞাসু জী কৃত অষ্টাধ্যায়ী ভাষ্যের অবশিষ্টাংশ ১৯৬৮ সনে সম্পন্ন করেন । 


7.‌ পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী কৃত অথর্ববেদ ভাষ্যের ১-৪ কাণ্ডের সম্পাদনা করে পুনঃ প্রকাশন ।


8.‌  পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী কৃত গোপথ ব্রাহ্মণ ভাষ্যের সম্পাদন করে পুনঃ প্রকাশন ।  


—- বিদুষাং বশংবদঃ


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.